ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

ঢাকায় উবারের ১ বছর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৩২, ২২ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২১:২৮, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

সকাল বেলা খুব তাড়াহুড়া করে ঘর থেকে বের হয়েছেন। কিন্তু কোনোভাবেই বাস পাচ্ছেন না। অফিসের ঘড়ি কিন্তু থেমে নেই। অথবা অফিস শেষেও একই অবস্থা। চোখের সামনে দিয়ে কত ব্যক্তিগত গাড়ি আর মোটর সাইকেল যাচ্ছে। কখনও কখনও হয়তো মনে হয়েছে যে কারও কাছ থেকে লিফট নেবেন। কিন্তু কেউ তো গাড়িতে উঠাবে না ভেবে হয়তো কখনও চেষ্টা করেননি। আবার হয়তো ভাবলেন নিজেই একটা গাড়ি বা মোটর সাইকেল কিনবেন। কিন্তু ঢাকা শহরে পার্কিং এর সুবিধাও অপ্রতুল। তবে বিগত ১ বছর যাবত রাজধানীতে এ ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। এখন অন্যের গাড়ি কিংবা মোটর সাইকেলে রাইড নিতে পারেন। আর এমনটা সম্ভব হয়েছে উবারে’র যাত্রার মাধ্যমে। প্রয়োজন নেই নিজের গাড়ি বা বাইক কেনার।

২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর রাজধানী ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বিশ্বের সব থেকে বড় রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান উবার। বাংলাদেশে এর নাম উবার বাংলাদেশ। মোবাইলের একটি সফটওয়্যার বা এপস-এর মাধ্যমেই ব্যবহার করা যাচ্ছে এ সেবা। একজন গ্রাহক ঢাকা শহরের যেখানেই থাকুক না কেন সেখান থেকেই এ সেবা নিতে পারবেন। মূলত এ এপসের মাধ্যমে একজন গ্রাহকের সাথে একজন গাড়ি চালকের সংযোগ করিয়ে দেওয়া হয় যারা একই দিকের গন্তব্যে যাবে। অথবা পেশাদার চালকও গ্রাহককে এ ধরনের সেবা দিতে পারেন। চালক এবং গ্রাহকের যোগাযোগ হবে এপসেই।

উবারের শুরুটাও হয় এমনই এক ‘প্রয়োজন’ থেকে। প্যারিসের রাস্তায় তুষারঝরা এক সন্ধ্যায় অনেক খোঁজ করেও গাড়ি পাচ্ছিলেন না ট্র্যাভিস কালানিক ও গ্যারেট ক্যাম্প। সময়টা ২০০৮ সাল। তখনই তাদের মাথায় এলো সাধারণ একটি ভাবনা যে বাটনের এক চাপে হাজির হবে গাড়ি। এ ধারণা থেকেই মহানগর এলাকায় চমৎকার কালো রংয়ের গাড়ি ডাকার জন্য চালু হয় একটি অ্যাপ-উবার। এটিই এখন পাল্টে দিচ্ছে বিশ্বের নানা শহরের চেহারা।

গত বছর উবার চালু হওয়ার পর থেকে ঢাকায় রাইড শেয়ারিং এর প্রচলন জোরে শোরে চালু হয়। উবার প্রথমে গাড়িতে রাইড শেয়ারিং চালু করলেও চলতি মাস থেকে মোটর সাইকেল দিয়ে রাইড শেয়ারিং চালু করে। এর আগে পাঠাও, মুভ, স্যাম নামক বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রাইড শেয়ারিং এপস সার্ভিস চালু করে। এরমধ্যে মোটর সাইকেলের জন্য পাঠাও এবং গাড়ির জন্য উবার বাংলাদেশের ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। আগামী মাস থেকে চালু হতে যাচ্ছে ইজিয়ার। পাশাপাশি অনেকেই আগ্রহী হচ্ছে এ ধরনের স্টার্টাপ ভিত্তিক ব্যবসায়।

শুধু তাই নয় অনেকেই ব্যক্তিগত পর্যায়ে খণ্ডকালীন বা পূর্ণকালীন চাকরী হিসেবে বেছে নিচ্ছেন রাইড শেয়ারিং ক্যারিয়ারে। নিজের গাড়ি উবারে ভাড়ায় দিয়ে অথবা পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে বাইক রাইড দিয়ে খণ্ডকালীন অথবা পূর্ণকালীন আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।

অন্যদিকে ঢাকা শহরের উবার-পাঠাও চালু হবার পর থেকে পরিবহন সেক্টরে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সিটিং সার্ভিসের নামে চিটিং বাস সেবা, অতিরিক্ত সিএনজি ভাড়া এবং অন্যান্য নৈরাজ্যে পরিবহন সেবা যেখানে জর্জরিত সেখানে রাজধানীবাসীর জন্য এক কার্যকরী বিকল্প রাইড শেয়ারিং। যে কোনো জায়গা থেকেই রাইড পাওয়া, নির্ধারিত ভাড়া আগে থেকেই জানতে পারা এবং নিরাপত্তার সবটুকু ব্যবস্থা থাকায় ঢাকাবাসীর কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই রাইড শেয়ারিং ফিচার। অনেকটা নিজের গাড়ি বা বাইকের স্বাদ পাওয়া যায় এখানে।

প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘হারিকেন’ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদিব শামস বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করার সময় থেকেই আমি উবার ব্যবহার করি। ঢাকার মত শহরে উবারের মত প্রতিষ্ঠানের সেবা অনেক বেশি জরুরি। ঢাকার মানুষের কর্মদক্ষতা এবং জীবন যাত্রার মান বাড়াতে উবার ভূমিকা রাখছে”।

এরই মধ্যে এপস ভিত্তিক এসব সেবা বন্ধের দাবিতে ধর্মঘটের আহবান করেছে সিএনজি চালকদের একটি অংশ। অপরদিকে চালকদের আরেকটি অংশ নিজেরাও এপসের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। বেসরকারি উদ্যোগে কাজ চলছে রাজধানীর সিএনজিগুলোকে এপসের আওতায় নিয়ে আসার। আর এতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন সিএনজি চালকদের একটি অংশ।

উবার বাংলাদেশের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ২০০৯ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর থেকে বিশ্বের প্রায় ৭৪টি দেশের ৪৫০টি শহরে কার্যক্রম চালু আছে উবারের। প্রতিদিন প্রায় ৫০লাখেরও বেশি রাইড শেয়ার হয় এই এপসের মাধ্যমে।

 

এসএইচএস/টিকে


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি