ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

বিটাকের দুই প্রকল্প

তরুণদের ফ্রি প্রশিক্ষণ, কোর্স শেষে চাকরি

প্রকাশিত : ১৮:২৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৮:২৪, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি, দারিদ্র বিমোচন ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)। এ লক্ষে দেশের অসহায়, দরিদ্র, স্বল্প শিক্ষিত ও মেধাবী তরুণদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন বিভাগে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার মধ্য দিয়ে তরুণ জনশক্তিকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলছে। এসব প্রশিক্ষণের বেশিরভাগই বিনামূল্যে দিচ্ছে বিটাক। সঙ্গে থাকছে থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা। সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষে দেওয়া হয় সনদ। অনেককে আবার চাকরির ব্যবস্থাও করে দেয় বিটাক। কেউ কেউ বিটাক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্যোক্তাও হচ্ছে। সবমিলিয়ে তরুণ প্রজন্মকে কার্যকর প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য বহু তরেুণের স্বপ্ন সারথি বিটাক।

প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিয়ে জানতে চাইলে বিটাকের অতিরিক্ত পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. ফজলুল করিম একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইনকে বলেন, বিটাক বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আত্মপ্রত্যয়ী তরুণরা বিটাক থেকে কোর্স করে সহজেই কাজের সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ উদ্যোক্তাও হচ্ছে। তিনি জানান, দুটি প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ কার‌্যক্রম চলমান। এর একটি সেপা, অন্যটি সেপ। এগুলোর আওতায় বেশ কয়েকটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ফজলুল করিম অসহায়, দরিদ্র ও মেধাবী তরুণ-তরুণীদের বিটাকের এসব কোর্স করার জন্য আহবান জানান।

SEPA (সেপা) প্রকল্প

বিটাকের অধীনে (SEPA) সেল্ফ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড প্রোভারটি এলিভিয়েশন প্রকল্পের আওতায় নারীদের তিন মাসব্যাপী নয়টি বিভাগে ও পুরুষদের দুই মাসব্যাপী তিনটি বিভাগে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতিবছর নারীদের চারবার ও পুরুষদের ছয়বার ভর্তি করা হয়। প্রতি ব্যাচে বিভিন্ন ট্রেডে বিটাকের বিভিন্ন কেন্দ্রে ৩০০ জন নারী ও ২৮৮ জন পুরুষ প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি করা হয়। প্রকল্প  পরিচালক ইঞ্জি. মো. ইকবাল হোসাইন পাটোয়ারী বলেন, এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে।

যেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ

সেপা প্রকল্পের আওতায় মেয়েদের জন্য রয়েছে লাইট মেশিনারিজ, ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রক্যাল মেইনটেইন্যান্স, অটোক্যাড, রেফ্রিজারেশন এবং এয়ারকন্ডিশনিং , হাউজ হোল্ড অ্যাপ্লায়েন্স, কার্পেন্টিং, প্লাষ্টিক প্রসেসিং (জেনারেল) এবং প্লাষ্টিক প্রসেসিং (কাষ্টমাইজ) বিষয়ক প্রশিক্ষণ। আর ছেলেদের জন্য রয়েছে ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রিক্যাল মেইনটেইন্যান্স এবং রিফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং নামে তিনটি কোর্স । ৩ মাস প্রশিক্ষণ শেষে বিটাকে একটি জব ফেয়ার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্নধাররা এসে তাদের চাহিদামত প্রার্থী বাছাই করে নিয়ে যান। প্রশিক্ষণ শেষে সার্টিফিকেটের সঙ্গে ওই প্রশিক্ষণার্থীদের চাকরির নিয়োগপত্রও হাতে তুলে দেওয়া হয়। এদিক বিবেচনায় বলা যায় যে, তিন মাস প্রশিক্ষণ নেওয়ার মাধ্যমেই চাকরি নিশ্চিত হচ্ছে অনেকের।

২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পটির আওতায় এখন পর্যন্ত ৮১০০ জন নারী ও ১১ হাজার ৫২০ জন পুরুষ প্রশিক্ষণ নিয়েছে। যাদের বেশির ভাগই চাকরিতে যোগদান করেছেন। তবে এর মধ্যে ৬৪৫০ জনকে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং কেউ কেউ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গড়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হচ্ছে।

 কখন থেকে ভর্তি

(SEPA)  সেল্ফ এমপলয়মেন্ট অ্যান্ড প্রোভারটি এলিভিয়েশন প্রকল্পের আওতায় পরবর্তী কোর্সের কার্যক্রম আগামী ০২/১০/২০১৭ তারিখ থেকে শুরু হবে।

যোগ্যতা

এসব প্রশিক্ষণ নিতে হলে প্রার্থীদের কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পাস প্রক্ষিণার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে বিভাগ বাছাই করা হয়ে থাকে।

SEIP (সেপ) প্রকল্প

বিটাকের অধীন অপর একটি প্রকল্প (SEIP) স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ছেলে ও মেয়ে উভয়েই বছরে তিন বার ৪ মাস অন্তর অন্তর কোর্স করার সুযোগ পাবেন। এ প্রজেক্টের ৮ম ব্যাচের পরবর্তী কার্যক্রম আগামী ০২/১০/২০১৭ তারিখ থেকে শুরু হবে।

কোন কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি

দেশের বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠান সারা বছরই বিটাকের কাছে প্রশিক্ষিত কর্মী চেয়ে চিঠি দেয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রাণ আরএফএল গ্রুপ, বেঙ্গল প্লাস্টিক লিমিটেড, নাসির গ্রুপ লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড, ফিলিপস, নিটোল টাটা, ইস্টার্ন টিউবস, অ্যানার্জি প্যাক, ডেকো গ্রæপ, রহিম আফরোজ, আয়েশা মেমোরিয়াল হসপিটাল,চায়না বাংলা কোম্পানি, হরিজন প্লাস্টিক এবং শাহ সিমেন্টসহ অন্যান্য আরও কিছু কোম্পানি।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা

শুধু কর্মী পর্যায়েই নয়, বিটাক এবার হাতে নিচ্ছে বড় একটি প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় তৈরি হচ্ছে একটি টুল ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ তৈরি করা হবে। এই যন্ত্রাংশগুলো দিয়ে দেশে নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে গাড়ি তৈরি করা ছাড়াও দেশের বাইরের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের গাড়ির পার্টস তৈরি করবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনসহ বহুল জনশক্তি কাজের সুযোগ পাবে।

যোগাযোগ

বিটাকের ঢাকাসহ সারাদেশে মোট পাঁচটি কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ নিতে হলে প্রার্থীদের বিটাকের কেন্দ্রগুলো থেকে বা বিটাকের ওয়েবসাইট থেকে ফরম সংগ্রহ করতে হবে। বিটাকের কেন্দ্রগুলো নিম্নে দেয়া হলো-

ঢাকা কেন্দ্র: বিটাক, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮

চট্টগ্রাম কেন্দ্র: সাগরিকা রোড, পাহাড়তলী চট্টগ্রাম

চাঁদপুর কেন্দ্র: ষোলঘর, চাঁদপুর

খুলনা কেন্দ্র: শিরোমণি শিল্প এলাকা, খুলনা

বগুড়া কেন্দ্র: নিশিন্দারা,কারবালা, বগুড়া

এছাড়াও বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন এই ঠিকানায় ( www.bitac.gov.bd)

/এম/এআর

 

 

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি