ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

দুদকে দুই দফা তলব, হাজির হননি এসপি মিজান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:১২, ১৮ জুলাই ২০১৮

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুই দফা তলব করলেও পুলিশ সুপার পদমর্যাদার রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের (আরআরএফ) সাবেক কমান্ড্যান্ট মিজানুর রহমান হাজির দেননি।

আজ বুধবার দুদকে হাজির হয়ে অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য দিতে মিজানুর রহমানকে নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সংস্থার সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ।

মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদ আয় করেছেন। নকল সারের কারখানা পরিচালনা করেছেন। নিজের বাড়ি নির্মাণে পুলিশের ৬০ জন সদস্যকে কাজে লাগিয়েছেন।

সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ জানান, মিজানুর রহমানের ঠিকানায় চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি তাঁকে দুদকে হাজির করার প্রয়োজনীয় ব‌্যবস্থা নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছিল। দুদক সূত্র জানিয়েছে, দুদকে হাজির না হওয়ার পাশাপাশি এ বিষয়ে দুদককে কিছুই জানাননি এপুলিশ কর্মকর্তা।

এর আগে অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য দিতে গত ৬ জুন তাঁকে তলব করেছিল দুদক।ওমরাহ করতে যাবেন, এমন তথ্য দিয়ে ওই দিনও দুদকে হাজির হননি তিনি। এর আগে ২০১২ সাল থেকে মিজানের বিরুদ্ধে দুদকে অনুসন্ধান হলেও সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকার পরও তাঁকে দায়মুক্তি দিয়েছিল সংস্থাটি।

দুদক সূত্র জানায়, নিজের বাড়ি নির্মাণের সময় পুলিশের ৬০সদস্যকে রাজমিস্ত্রির সহকারী বা জোগালির কাজ করানোর অভিযোগ ওঠে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানটি শুরু করে দুদক। অভিযোগ ছিল, সাভারের হেমায়েতপুরের আলীপুর ব্রিজ-সংলগ্ন ৮৪ শতাংশ জমির ওপর বাড়ি তৈরি ও ঢাকার মিরপুরের মাজার রোডের আলমাস টাওয়ারের পাশে আরও একটি বাড়ি নির্মাণে জোগালি ও শ্রমিক হিসেবে সাব-ইন্সপেক্টরসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার ৫০ থেকে ৬০ জন পুলিশ সদস্যকে দিয়ে কাজ করান মিজানুর রহমান।

সরকারি কর্মচারীদের ব্যক্তিগত কাজে খাটানোর অভিযোগ এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামেন দুদকের উপপরিচালক এস এম মফিদুল ইসলাম। এর মধ্যে মিজানের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরে অনুসন্ধানের ক্ষেত্র আরও বেড়ে যায়। মিজানের বিরুদ্ধে নকল সার কারখানা পরিচালনার অভিযোগ ওঠে। এটিও যুক্ত হয় অভিযোগ নথিতে। এর মধ্যে নতুন করে অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ।

২০১২ সালে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদক যে অনুসন্ধান করেছে, তখন সংস্থার চারজন কর্মকর্তা আলাদাভাবে অনুসন্ধান করেও তাঁর অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাননি। একাধিকবার অনুসন্ধান কর্মকর্তা পরিবর্তন করেও মামলা করার মতো কিছু পায়নি দুদক। তাই অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে মিজানকে অব্যাহতি দিয়েছিল সংস্থাটি। তবে এ বিষয়ে দুদকেও কানাঘুষা ছিল। প্রভাব খাটিয়ে দুদক থেকে দায়মুক্তির সনদ নিয়েছিলেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছিল।

দুদক সূত্র জানায়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে অনুসন্ধান শুরু হয়। উপপরিচালক গোলাম মোরশেদ অনুসন্ধান শুরু করলেও পরে আরেক উপপরিচালক ফজলুল হককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুজনই মিজানুর রহমানকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দিলেও কমিশন গ্রহণ করেনি। পরে আবার অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় উপপরিচালক হামিদুল হাসানকে। হামিদুল হাসানও অভিযোগটি নথিভুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তির সুপারিশ করেন।এসুপারিশ অগ্রাহ্য করে উপপরিচালক মো. আবদুস সোবহানকে পুনরায় অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয় কমিশন।

দুদকে আসা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯৪ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮ বছরে তিনি কয়েক শ বিঘা স্থাবর সম্পত্তি কিনেছেন। ব্যাংকে তাঁর নগদ অর্থ রয়েছে ১০ কোটি টাকার বেশি। তাঁর স্ত্রীর নামে লাইসেন্স নেওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বৈধ করেন। এসব রেকর্ডে মিজানের স্ত্রী নীপা মিজানের সংশ্লিষ্টতা থাকায় তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চান অনুসন্ধান কর্মকর্তা হামিদুল হাসান। কিন্তু কমিশনের ওপর মহল থেকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে অদৃশ্য ইশারায় অনুসন্ধান নথিভুক্তির সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

সবশেষ অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. আবদুস সোবহানের অনুসন্ধান চলার সময় নোটিশ ছাড়াই বেশ কয়েকবার এসপি মিজানুর রহমানকে দুদকে আসতে দেখা যায়। এ সময় তিনি সাক্ষাৎ করেন দুদকের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা ও অনুসন্ধান কর্মকর্তার সঙ্গে। আর এর ফলে পুনঃ অনুসন্ধান প্রতিবেদনেও তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়েরের পরিবর্তে নথিভুক্তির সুপারিশ আসে।

এর আগে ২০১১ সালে এসপি মিজানের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ অনুসন্ধান করেন দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের তৎকালীন অনুসন্ধান কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম। অনুসন্ধানে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় স্ত্রী নীপা মিজানের নামে ব্যবসা পরিচালনা, ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে ব্যবসায়িক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। তিনি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সুপারিশ করলেও মামলা না করে অভিযোগটি নথিভুক্ত হয়ে যায়।

টিআর/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি