ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

দ্রুত কোটার প্রজ্ঞাপনের তাগিদ শিক্ষাবিদদের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২৮, ২ জুন ২০১৮ | আপডেট: ১৪:৩৪, ৩ জুন ২০১৮

সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দেড় মাসেরও বেশি সময় কেটে গেছে। এমতাবস্থায় আশা নিরাশার দোলাচলে কাটছে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীর সময়। বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে (৭মে) প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো দিক নির্দেশনা না পেয়ে তারা ফের আন্দোলনে নেমেছে।

এদিকে কোটা সংস্কার হবে নাকি বিলুপ্তি হবে সেই ধোঁয়াশা এখনও কাটে নি। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রথমে বলা হয়েছিল কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়া হবে, যদিও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি কোটার সংস্কার। এমতাবস্থায় কী ভাবছেন শিক্ষাবিদরা?

একুশে টিভি অনলাইকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অন্তত ১০ জন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ বলেছেন, কোটা সংস্কার দাবি যৌক্তিক, এটি আগেই করা দরকার ছিল। তবে কোটা একেবারে বিলুপ্তির বিষয়ে একমত নন তারা। শিক্ষাবিদেরা মনে করছেন নানা জটিলতায় প্রজ্ঞাপন জারি হতে কিছুটা সময় লাগলেও প্রজ্ঞাপন জারি হবে ঠিকই। তারা মনে করেন প্রজ্ঞাপন দ্রুত জারি হলেই মঙ্গল।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরি বিশেষ করে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা প্রচলিত। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী কোটায় ১০, জেলা কোটা ১০, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য পাঁচ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে এক শতাংশ কোটা। বাদবাকি ৪৪ শতাংশ আসনের জন্য লড়াই করছেন সংখ্যাগুরু বিপুল সংখ্যক মেধাবী। চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, সংখ্যাগুরু সাধারণ চাকরিপ্রার্থী এবং সংখ্যালগু কোটাধারীদের মধ্যে এত বড় বৈষম্য সম্ভবত পৃথিবীর আর কোনো দেশেই নেই।

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোটা সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের। সাধারণ চাকরি প্রত্যাশীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন গত ২০১৩ সালেও একবার জোরালো হয়েছিল। তবে তা  বেশি দূর এগোতে পারেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগের বছর হওয়ায় সেটা থমকে যায়। গত প্রায় এক বছর ধরে কোটার সংস্কারের দাবিতে ফের সোচ্চার হয়েছে শিক্ষার্থীরা। গত ৮ এপ্রিল থেকে টানা ৪ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে। পরিপ্রেক্ষিতে ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদের অধিবেশনে কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করে সব চাকরিতে শতভাগ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়ে আন্দোলন ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত করে ঘরে ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা। ওই ঘোষণার এক মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কোটা বাতিল বা সংস্কার নিয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি  হয়নি। পরিপ্রেক্ষিতে ৮ মে থেকে ফের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। প্রথমে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্রজ্ঞাপন দাবিতে আন্দোলন করতে থাকেন। পরে অবশ্য সেশনজটের কথা চিন্তা করে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়ে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেয় কোটা আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার রক্ষা পরিষদ। ওই আন্দোলন এখনও অব্যাহত রয়েছে। যদিও রমজান মাসে এমনিতেই ক্যাম্পাসে ক্লাস পরীক্ষা কম থাকায় উপস্থিতি কম থাকে। তাই আন্দোলনও জোরালো হয়নি, চলছে ঢিমেতালে।

প্রজ্ঞাপন আসতে বিলম্ব হলেও হাল ছাড়েননি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি আদায়ের কৌশল হিসেবেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। যেমনটি বলছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্যতম মুখপাত্র নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, তারা বিশ্বাস করেন দেরিতে হলেও কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন আসবে। তিনি জানান, সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে কোটা কত শতাংশ থাকবে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকারের প্রতিনিধি দল কোটা ২৫ শতাংশ রাখতে মত দিয়েছে। আর শিক্ষার্থীদের চাওয়া সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কোটায় নিয়োগ হবে বাকিটা মেধায়। প্রজ্ঞাপন নিয়ে আশাবাদী নূর জানান, প্রজ্ঞাপন জারি না হলে রাজপথে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

আন্দোলনকারীরা শুধু নন, দেশের প্রতিথযশা শিক্ষাবিদরাও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ঘোষণা দিয়েছেন সেহেতু কোটার প্রজ্ঞাপন জারি হবে। আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতায় প্রজ্ঞাপন আটকে আছে। সেই প্রজ্ঞাপন কী কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন নাকি কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন সেটি নিয়ে যদিও ধোয়াশা কাটে নি। যেমনটি বলছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন চাকরিতে কোনো কোটা থাকবে না। আদিবাসী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়োগ দেওয়া হবে। এ বিশেষ ব্যবস্থা নির্ধারণ, নিয়োগ প্রক্রিয়া কোন ধরণের হবে-এসব নির্ধারণে হয়তো কিছুটা সময় লাগছে। অধ্যাপক আকাশ মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কোটার বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা একবার দিয়েছেন, তাই প্রজ্ঞাপন অবশ্যই আসবে।

কোটা ইতোমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে-এমন মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক আমানুল্লাহ ফেরদৌসের। তিনি বলেন, সংসদে দাঁড়িয়ে মাননীয় যখন বলছেন যে, কোটা বাদ, তখনি কোটা বাতিল হয়ে গেছে। সংসদে সরকার প্রধান যখন একটা সিদ্ধান্ত দেন, সেটা সংসদীয় প্রক্রিয়ায় কার্যপ্রণালীর অংশ হয়ে যায়। সেটা রেকর্ডও থাকে আবার লিখিতও থাকে। তাহলে প্রজ্ঞাপনে জারিতে বিলম্ব হচ্ছে কেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে  এ শিক্ষাবিদ বলেন, আমার মনে হয় সচিবরা এ বিষয়ে একটু হোমওয়ার্ক করছেন। সচিবদের হোমওয়ার্কে একটু সময় লাগে, এটা অসম্ভব কিছু না।

শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারির তাগিদ দিয়েছেন সৃজনশীল প্রশ্নপত্র প্রনয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. শফিউদ্দিন আহমেদ ভুঁইয়া।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দেড় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও কোটার প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়াকে দু:খজনক বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. শামীম রেজা। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এই শিক্ষাবিদ বলেন, কোটার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন না আসার কারণটা বাইরের কারো পক্ষে জানা সম্ভব না। প্রজ্ঞাপন জারি করা, প্রজ্ঞাপনের বিষয় ঠিক করা, পুরোটাই সরকারের বিষয়। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাই এক প্রকার আইন। রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী হিসেবে তার সে ক্ষমতা আছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়াটা দু:খজনক। তবে আমরা আশা করছি দ্রুত এ প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন আসবে এমনটাই বিশ্বাস কথাসাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, কোটা ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা যাবে না। তবে বর্তমানে যে অবস্থায় ৫৬ শতাংশ কোটা রাখা হ‌য়ে‌ছে তা অযৌক্তিক। ‌কোটা সংস্কার ক‌রে ১৫ থে‌কে ২০ শতাংশে না‌মি‌য়ে আনার পক্ষে মত দেন তিনি। ‌

হুট করেই প্রজ্ঞাপন জারি করা সম্ভব নয় বলে মত দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জিয়া রহমান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তা তিনি হয়তো করবেন। সে প্রক্রিয়া তো শুরু হয়ে গেছে। একেবারে এখনই করতে হবে এমন ঠেকায় তো কেউ পড়ে নাই। এটা তো হুট করে করা যায়ও না। এটার তো একটি আইনী ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া আছে।

শিক্ষার্থীদের প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে আরও ধৈর‌্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবুল মনসুর। তিনি বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলবো এটার ( প্রজ্ঞাপনের) জন্য সময় দেওয়া উচিত। কারণ এরই মধ্যে একটি কমিটি করে প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে বলে পত্রিকায় খবর এসেছে। আমার বিশ্বাস এ কমিটি খুব দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন দেবে এবং সে প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের প্রকাশ ঘটানো হবে।

কথাসাহিত্যিক মঞ্জুরুল ইসলামের মতো সংস্কারের ভিত্তিতে কোটার প্রজ্ঞাপনের কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শান্তনু মজুমদার। তিনি বলেন, আমি মনে করি সংখ্যাগরিষ্ঠতা সবসময় ন্যায্যতা নির্ণয় করতে পারে না। সুতরাং অভিমান করে, চাপের মুখে বা ভোটের মুখে নয়, কোটা ব্যবস্থার একটা যৌক্তিক সংষ্কার দরকার ন্যায্যতার ভিত্তিতে এবং অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের দ্বারা যথাযথ বিচার-বিবেচনার ভিত্তিতে।

তবে কোটা বাতিল বা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন বিলম্ব হওয়ার পেছনে যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে বলে মত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ফাহমিদুল হক। তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপন বিলম্বিত হওয়ার পেছনে যৌক্তিকতা আছে। কারণ এ ধরণের রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটু গবেষণা বা যাচাই-বাঁছাইয়ের ব্যাপার থাকে। এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা, বিশেষজ্ঞদের মতামত জানার দরকার আছে। তার জন্য সময় একটু লাগতেই পারে।

তার যুক্তি হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের কথা বলছেন, সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির বিষয়টি দেখার কথাও বলেছেন। ওই আলাদা করে দেখা বা ওই প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জায়গাটা একটু নির্ধারণ করার ব্যাপার আছে। যার জন্য একটা বিশেষজ্ঞ পর্যালোচনার দরকার আছে। যার কারণে প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথা কাগজ-কলমে বাস্তবায়নে একটু সময় লাগবে। আবার এ প্রজ্ঞাপন দেওয়ার সঙ্গে এক ধরণের আমলাতন্ত্রের ব্যাপারও আছে। ফলে এটা স্বাভাবিকভাবেই একটু দেরি হতে পারে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী তো দেশেও ছিলেন না বেশিকিছু দিন।

প্রজ্ঞাপন জারিতে বিলম্ব হওয়ার জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে আমলে নিয়ে আমলাদের দরকার ছিল খুব তাড়াতাড়ি প্রজ্ঞাপন জারি করা। যেহেতু আমদের রাষ্ট্রটি আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র তাই আমলারা ফাইল চালাচলি করতে করতে প্রচুর সময় নষ্ট হয়ে যায়। প্রজ্ঞাপন খুব দ্রুত জারি করার তাগিদ দিয়ে এ শিক্ষাবিদ বলেন, যেহেতু কোটা সংস্কার আন্দোলন ছাত্রদের প্রাণের দাবি তাই কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল, অতি শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা। এটা নিয়ে সময়ক্ষেপণ করা কাম্য নয়।

/ এআর /

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি