ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

নতুন প্রতিষ্ঠানের জন্য তহবিল সংগ্রহ করছে ই-ক্যাব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৫৫, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৮:১২, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

সময় এখন ডিজিটাল যুগের। বর্তমান সময়ে প্রসারিত হচ্ছে ডিজিটাল বাণিজ্য তথা ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স। আমাদের দেশের বাজারে অনলাইন ব্যবসা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ই-ক্যাব।

ই-ক্যাবের সার্বিক বিষয় নিয়ে সম্প্রতি ইটিভি অনলাইনের মুখোমুখি হন ই-ক্যাবের সভাপতি রাজীব আহমেদ, স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি নিয়ামত উল্লাহ মোহন, সংগঠনটির স্টার্টআপ অ্যান্ড ফান্ডিং কমিটির সহ-সভাপতি আলাউদ্দীন সোলেন এবং সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী হাসান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইটিভি অনলাইনের সহ-সম্পাদক সোলায়মান শাওন। তিন পর্বের সাক্ষাৎকারের ১ম পর্ব আজ পাঠকদের জন্য দেওয়া হলো-

ইটিভি অনলাইনঃ শুরুতেই জানতে চাইব ই-কমার্স কী?

রাজীবঃ ই-কমার্স বলতে আলাদা কিছু নেই, নতুন কিছু নেই। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বা ডিজিটালাইজডভাবে যেসব ব্যবসা বা বাণিজ্য করা হয় সগুলোই ই-কমার্স। যেমন কেউ হয়তো কাপড় বিক্রি করেন। সে তার দোকানের পাশাপাশি অথবা দোকান ছাড়াই অনলাইনেও সেই কাপড় বিক্রি করেন। সে যদি সাধারণভাবে কাপড় বিক্রি করেন সেটা তো ব্যবসাই। আর যদি সে অনলাইনে তা বিক্রি করেন তবে সেটা ই-কমার্স।

ইটিভি অনলাইনঃ এবার আসি ই-ক্যাবের প্রসঙ্গে। ই-ক্যাব কী?

রাজীবঃ ই-ক্যাব হচ্ছে ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। যারা অনলাইনে বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে নিজেদের ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবসা করেন তাদের সংগঠন ই-ক্যাব। তবে যারা অনলাইনে পণ্য বিক্রি করেন শুধু তারাই এর সদস্য নয় বরং এই বিক্রির সঙ্গে যারা সম্পর্কিত যেমন ডেলিভারি কুরিয়ার, পেমেন্ট গেটওয়ে, ডিজিটাল ফটোগ্রাফি, কনটেন্ট এমনকি নিউজ পোর্টালও ই-কমার্সের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এদের সবারই সংগঠন ই-ক্যাব। মোট কথা আমরা যেটা বিশ্বাস করি, বর্তমানে যে ব্যবসা বা ই-কমার্সের কথা বলছি আমরা তার সবকিছুরই ভবিষ্যৎ ই-কমার্স। উদাহরণস্বরুপ গার্মেন্টসের জন্য যেমন বিজিএমইএ তেমনি আমরা ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য।

জয়েন্ট স্টক এক্সচেঞ্জের অধীন নিবন্ধিত একটি সংগঠন আমরা। সেইসঙ্গে বলে রাখি, আমরা ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিরও সদস্য।

ইটিভি অনলাইনঃ ই-ক্যাবের শুরুর প্রেক্ষাপটটা জানতে চাচ্ছি।

রাজীবঃ ২০১৪ সালে আমরা ই-ক্যাব প্রতিষ্ঠা করি। এটা আনতে আমাদেরকে অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে আমরা সরকারকে বোঝানো শুরু করি যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিশেষত প্রতিবেশি ভারত ও চীন ই-কমার্সে এগিয়ে গেছে। তাই এখন-ই যদি আমরা একটা উদ্যোগ না নিই এই ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণ করার এবং এখানে যেসব দুর্নীতি হয় অথবা এ খাতে কাজ না করা হয় তাহলে একদিকে যেমন তা সরকারের জন্য একটি মাথাব্যথার কারণ হবে তেমনি আমরা জাতীয় অর্থনীতিতে পিছিয়ে পড়ব। কারণ ই-কমার্সই একটি জায়গা যেখানে ২৪ ঘন্টা লেনদেন হয়। অর্থনীতির একটি সহজ হিসেব হচ্ছে, টাকার লেনদেন যত বেশি হবে দেশের জিডিপি’র উন্নয়ন তত বেশি হবে। কোটি কোটি টাকা সিন্দুকে পরে থাকলে কিন্তু জিডিপি বাড়বে না। তাই ই-কমার্সের গুরুত্ব অনেক। এসব প্রেক্ষাপট থেকেই আমরা ই-ক্যাবের যাত্রা শুরু করি।

ইটিভি অনলাইনঃ ই-কমার্স খাতে ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষায় আপনাদের উদ্যোগ কি ?

রাজীবঃ প্রথমত বলি আমরা ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন। ভোক্তা বা গ্রাহকদের জন্য আলাদা একটি সংগঠন আছে। কনজিউমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ক্যাব। সে অর্থে আমাদের গ্রাহকদের স্বার্থ দেখার কথা না। তবুও আমাদের সংগঠনের সদস্য এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের দ্বারা কোনো গ্রাহক যদি প্রতারিত হয়েছেন বলে মনে করেন অথবা কাংখিত সেবা পাচ্ছেন না বলে মনে করেন তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। সত্যি কথা বলতে, মাঝে মাঝেই আমরা এমন অভিযোগ পাই। তখন আমরা চেষ্টা করি আমাদের সেই সদস্য প্রতিষ্ঠান এবং গ্রাহকের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে দিতে এবং গ্রাহককে তার অধিকার ফিরে পেতে।

আসলে ই-কমার্স যেহেতু নতুন এক ধরণের ব্যবসা। আর এ ব্যবসায় যারা উদ্যোক্তা তাদের অনেকেই তরুণ। গড় বয়স ২৫ এর কাছাকাছি। আবার বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ই-কমার্স ব্যবসা বোঝার বা শেখার কোনো জায়গা নেই। তাই এসব তরুণ বা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলেছি। এরইমধ্যে এর সদস্য সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। এ গ্রুপে একজন উদ্যোক্তা যেকোনো সমস্যার কথা জানালে অতি দ্রুত সমাধান পেয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া চলতি বছরের শুরুর দিকে ১০০ জন উদ্যোক্তাকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ই-কমার্সে প্রশিক্ষণের দিয়েছি। সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশে ই-কমার্সের ওপর বাংলা ভাষার কোনো বই নেই; জ্ঞান ভাণ্ডার নেই। আমাদের ব্লগের সাইট আমরা করেছি বাংলা ভাষায়। এর লেখা বা কনটেন্টগুলো বাংলা ভাষায় করা হচ্ছে। এতে করে বাংলা ভাষায় একটি তথ্য ভাণ্ডার তৈরি হচ্ছে। blog.e-cab.net এই ঠিকানায় ব্লগের লেখাগুলো পড়া যাবে।

ইটিভি অনলাইনঃ আপনাদের সদস্য হতে কী করতে হয়?

রাজীবঃ আমাদের সদস্যপদ নেয়া খুবই সহজ। ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে, টিন সার্টিফিকেট থাকতে হবে। এর সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি দিতে হবে। প্রথম বছরে বাৎসরিক ফি ৩ হাজার টাকা আর দ্বিতীয় বছর থেকে ২ হাজার টাকা। এসোসিয়েশনগুলোর মধ্যে আমাদের ফি’ই সবচেয়ে কম।

ইটিভি অনলাইনঃ যারা অনলাইনে ব্যবসা করছেন তাদের জন্য ই-ক্যাব কতটুকু প্রয়োজনীয়?

রাজীবঃ আমাদের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৭১৫। এত দ্রুত বাংলাদেশের কোনো অ্যাসোসিয়েশন এত বেশি সদস্য পেয়েছে বলে আমার জানা নাই। অন্তত গত ২০ বছরে তো নয়ই। আমাদের কিছু সদস্য আছে যাদেরকে জায়ান্ট বলা চলে যেমন গ্রামীণ ফোন, রবি, আড়ং, এসিআই, প্রাণ আরএফএল, নিটল-নিলয় গ্রপ ইত্যাদি। এর সবথেকে বড় সুবিধা হচ্ছে আমরা একসঙ্গে এক জায়গায় একত্রিত হতে পারছি। খেয়াল করলে দেখবেন একজনের সঙ্গে কেউ আগ্রহ দেখায় না। আমরা অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান যখন এক সঙ্গে হই তখন সবাই আগ্রহ দেখায়। এমনকি সরকার চাইলেও প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলতে পারে না। সরকার চাই কোন এসোসিয়েশনের সঙ্গে কথা বলতে। তাই আমাদের সঙ্গে থাকলে আপনার স্বার্থ রক্ষায় আমরা সবাই কাজ করতে পারব এক সঙ্গে।

ইটিভি অনলাইনঃ যদি নির্দিষ্ট করে জানতে চাই যে, ই-ক্যাব সদস্য এবং সদস্য নয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দেওয়া সুবিধার পার্থক্য কী?

রাজীবঃ প্রথম বিষয়টিই হচ্ছে ‘বিশ্বাসের’। আপনি যখন ই-ক্যাবের কোন সদস্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন করবেন তখন আপনি জানেন যে, আপনি যদি কাংখিত সেবা বা পণ্য না পান তাহলে আপনার অভিযোগের একটি জায়গা রয়েছে। আমাদের সংগঠনের ভিতর থেকেই এসব সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা আছে। তাই বিশ্বাস পাওয়াটা একটি বড় সুবিধা। আপনি ই-ক্যাবের সদস্য না হলে অনেকেই আপনার পণ্য বা সেবা নিয়ে আপনাকে বিশ্বাস করবে না।

একটি ছোট উদাহরণ দিয়ে বলি। আপনি কারও কাছ থেকে ডোমেইন সেবা নিবেন। এর দাম খুবই কম তবুও যদি কাংখিত সেবা না পান তাহলে সেটাই হবে আপনার মাথা ব্যথা।

এছাড়া আর্থিক কিছু সুবিধা আছে। আমাদের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো পেমেন্ট গেটওয়ে চালু করতে চাইলে তারা খুবই সীমিত পরিসরে এ সুবিধা নিতে পারেন। সাধারণত আপনার অনলাইন শপে পেমেন্ট গেটওয়ে চালু করতে রেজিস্ট্রেশন ফি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। অন্যদিকে আমাদের সদস্য হলে এর জন্য খরচ হবে মাত্র ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। যেমন গত মাসে আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এসএসএল বিনা পয়সায়ও দিয়েছে। আরও বললে বিকাশের সঙ্গে আমাদের মার্চেন্ট একাউন্টের চুক্তি আছে। আমাদের যারা সদস্য তারা মার্চেন্ট একাউন্টে কিছু সুবিধা পান। এছাড়া আমাদের ওয়ান ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি আছে, আইএফআইসি ব্যাংকের সঙ্গে আছে। এসোসিয়েশন যেহেতু সেহেতু বেশকিছু সুবিধা পাওয়াই যায়।

আমরা আরেকটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি এখন। তা হচ্ছে স্টার্টাপ ফান্ডিং এর জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ করছি। যারা নতুন স্টার্টাপ নিয়ে আসছেন তাদের জন্য একটা অর্থ ভাণ্ডার তৈরির জন্যই এ কাজ করছি।

ইটিভি অনলাইন : নুরুন্নবী ভাই আপনার কাছে জানতে চাইব স্টার্টাপ ফান্ডিংয়ের বিষয়টি নিয়ে কিভাবে কাজ করছেন?

নুরুন্নবীঃ যারা ই-কমার্স ব্যবসায় আসতেছেন এবং স্টার্টাপ চালু করতে চাচ্ছেন তাদের ব্যবসার জন্য মূলধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যায় যে, কেউ একজন তার ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে একটি স্টার্টাপ চালু করল কিন্তু অর্থের অভাবে বেশিদূর এগুতে পারল না। আমরা মূলত তাদের জন্য একটি মূলধনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি আমাদের এই স্ট্যান্ডিং কমিটির মাধ্যমে।

তবে বলে রাখি এখনই আমরা ই-ক্যাব থেকে এ মুহূর্তে কোনো ফান্ডিং করছি না। আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করছি। সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ, এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের সঙ্গে কাজ করতেছি। এদের সঙ্গে কাজ করে সরকারের প্রজেক্টগুলোর মাধ্যমে স্টার্টাপে ফান্ড এর কাজ করছি।

যেমন চলমান ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৭’-তে আমরা নতুন ৫টি স্টার্টাপ প্রতিষ্ঠানকে বিনামূল্যে স্টল নেওয়ার সুযোগ দিয়েছি। এতে করে তারা তাদের ব্যবসাকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরতে পারবে। দেখা যাচ্ছে, সেখান থেকেও আমাদের মাধ্যমে তারা একটি বিনিয়োগ মূলধন পাবে।

ইটিভি অনলাইনঃ ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা ব্যাংকিং সুবিধা তেমন একটা পান না। লোন পান না। এ বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?

নুরুন্নবীঃ কথাটি আসলেই সত্য। আর এটাও সত্য যে, ব্যাংক ই-কমার্স ব্যবসায়ীকে লোন দিবে না। কারণ হচ্ছে, একজন ই-কমার্স ব্যবসায়ীর কাছে কী আছে? তার ওয়েবসাইট ছাড়া আর কিছু তো নাই। যেমন ধরুন ফেসবুকের ওয়েবসাইটটি ছাড়া বাংলাদেশে আর কী আছে? ই-কমার্স ব্যবসার বাড়ি নাই গাড়ি নাই। তাহলে ব্যাংক লোন দিবে কেন? আর এ কারণেই আমরা প্রাথমিকভাবে ব্যবসায়ীদের জন্য একটি মূলধন ফাণ্ড যোগানের জন্য কাজ করছি। ই-কমার্স, আইটি এরা মূলত ব্যাংকিং সহায়তা পায় না। লোন পায় না। তখন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফাণ্ডিং এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ইটিভি অনলাইনঃ তাহলে এটা কী ই-কমার্স খাতের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতা না?

নুরুন্নবীঃ অবশ্যই প্রতিবন্ধকতা। আর এ কারণেই আমরা ই-ক্যাব কাজ করে যাচ্ছি। অন্য স্টেক হোল্ডাররা এগিয়ে আসলে এ ব্যবসা আরও দ্রুত প্রসারিত হবে।

/ এ / এআর


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি