ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করছে তরুণরা: অর্থমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৩৬, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২৩:৩৭, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করছে এদেশের তরুণ সম্প্রদায়। আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছি আজকে তার মূল কৃতিত্বের দাবিদার এ তরুণরা। বিশ্বের দরবারে তথ্য প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের তরুণরা নেতৃত্ব স্থানে আছে।” শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৭’ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।

সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, “প্রায় ৪ বছর পরিশ্রম করে আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করি। আমার সঙ্গে সে সময় ছিলেন মোস্তফা জব্বার ও আরও অনেকে। আমাদের সেই নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করছে মূলত তরুণরাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণ সম্প্রদায়কে ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দেন। এখন তাদেরকেই তা লালন করতে হবে।”

বর্তমান সময়ে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে পৌঁছে গেছি মন্তব্য করে এ অর্থনীতিবীদ বলেন, “আগামী ১২ ডিসেম্বর থেকে  প্রতি বছর এ দিনটি আইসিটি দিবস হিসেবে পালিত হবে। আশা করি আমাদের তরুণ সমাজ এর জন্য প্রস্তুত।”

এর আগে ইন্টারনেট সংযোগের ওপর ভ্যাটের প্রসঙ্গে বেসিস সভাপতি মোস্তফা জব্বারের এক মন্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “ইন্টারনেট সংযোগের ওপর এখন ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হচ্ছে। এ সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে বলছি, দেখা যাক আগামী অর্থবছরে কী করা যায়!”

এর আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থমন্ত্রী মনে ২০০৮ সালেই বুঝে গিয়েছিলেন যে আমরা ডিজিটাল বিশ্বে পদার্পন করব। যে কারণে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।”

এবারের আসরে বুদ্ধিভিত্তিক রোবট সোফিয়া আগমনে প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলছেন আগামী বছর ২০১৮ এর আয়োজনে যেন দেশের তৈরি সামাজিক রোবট আমরা সবার সামনে উপস্থাপন করতে পারি। গতকাল ‘বন্ধু’ নামের দেশীয় একটি রোবট আমি দেখেছি। আশা করি সামনে আরও দেখব।”

বক্তব্যের এক পর্যায়ে বিদেশি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “প্রতি বছর প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রযুক্তি পণ্য আমাদেরকে আমদানি করতে হয়। ওয়ালটন বা এ ধরনের দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মত যদি আমরা নিজেরাই প্রযুক্তি পণ্য তৈরি করতে পারি তাহলে এ খাত আরও প্রসারিত হবে। আমরা একদিন নিজেরা নিজেদের ফেসবুক তৈরি করব।”

ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের এবারের ৫ম আসরের সফলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এবারের আসর আগের সবগুলোর রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। সোফিয়া আসার আগে এবং পরেও এমনকি আজ বৃষ্টির দিনেও দর্শনার্থীদের মাঝে ব্যাপক উতসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়। পাঁচ লক্ষাধিক দর্শনার্থী এসেছে। শুধুমাত্র অনলাইনেই রেজিস্ট্রেশন করেছে এক লাখ ৬৫ হাজার দর্শনার্থী। এবারের আসর নিয়ে হ্যাশ ট্যাগ দেওয়া হয় অন্তত  আট  লাখ বার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট হিট হয়  এক কোটি ১৮ লাখ বার। রিভিউ হয় ৯৯ লাখ ৩১ হাজার বার।”

আগামীতে এক হাজার ইনোভেশন প্রকল্পের আওতায় তিন লাখ তরুণকে প্রশিক্ষিত করা হবে এবং ২১ লাখ তরুণ-তরুণীকে প্রযুক্তি খাতে নিয়োজিত করা হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী পলক।

বেসিস সভাপতি মোস্তফা জব্বার বলেন, “১৯৯৭ সালে আমরা প্রথম কম্পিউটার মেলা করেছিলাম। আর এখন প্রযুক্তি মেলা দেখছি। সবার এত এত আগ্রহ দেখে ভাল লাগছে।” এসময় প্রযুক্তি খাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজে একসময় হাতে প্রেস রিলিজ লিখে পত্রিকাগুলোয় দিয়ে আসতেন। আমরা সেই প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি। একমাত্র তার হাতেই আমাদের দেশ নিরাপদ।”

তবে এসময় ইন্টারনেট সংযোগের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং পাঁচ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দেবার সমালোচনা করেন তিনি। এ শুল্ক কমাতে অর্থমন্ত্রীর প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ভূটানের ডাক ও টেলিযোগমন্ত্রী ডি এন ডাঙ্গাল। তিনি বলেন, “ঢাকা ডিজিটাল ঢাকা হচ্ছে। স্মার্ট ঢাকা হচ্ছে। বাংলাদেশ এমন উন্নতি দেখে ভাল লাগছে।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ বলেন, “আমরা আগামীর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের জন্য প্রস্তুত বলব না। বরং আমি বলব আমরা এখনই প্রস্তুত।”

সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আইসিটি বিভাগের সচিব সুধীড় কিশোর চৌধুরী। এসময় বক্তারা ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর ২য় দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার জন্য ভুটানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

শেষে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নাগরিক সেবা, সফটওয়্যার ইনোভেশন, স্থানী সরকারসহ তথ্যপ্রযুক্তির ১১টি  খাতে বিভিন্ন প্রকল্প ও ব্যক্তিকে ‍পুরস্কৃত করে আইসিটি বিভাগ।

`রেডি ফর টুমোরো’ শিরোনামে আয়োজিত ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’ এর এ বছরের আসরে গুগল-নুয়ান্সসহ খ্যাতিমান তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই শতাধিক বক্তা অংশ নেন।   ৪৪টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আইটি ক্যারিয়ারবিষয়ক সম্মেলনের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে ছিল ডেভেলপার সম্মেলন।

এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে ৩০০ টি প্রতিষ্ঠান ৫০২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন সাজিয়েছিল। প্রযুক্তি প্রেমীদের জন্য প্রদর্শনীতে সফটওয়্যার শোকেসিং, ই-গভর্নেন্স এক্সপো, স্টার্টআপ জোন, কিডস জোন, মেড ইন বাংলাদেশ জোন এবং ইন্টারন্যাশনাল জোন ছিল। এছাড়াও আইসিটি সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু প্রদর্শনী স্টল তাদের প্রযুক্তি পণ্য ও সেবা সম্পর্কে ধারণা উপস্থাপন করে।

এবারের ডিজিটাল ওয়ালর্ল্ডের মূল আয়োজক সরকারের আইসিটি ডিভিশন। সহযোগী ছিল বেসিস, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, এটুআই।

অংশীদার হিসেবে ছিল বিসিএস, বাক্য, আইএসপিএবি, বাংলাদেশ উইমেন ইন আইটি (বিআইডব্লিউটি), ই-ক্যাব, বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম, সিটিও ফোরাম,. বিডিওএসএন, মায়া আপা, বিআইজেএফ, বোল্ড এবং ভিসিপিইএব

 

এসএইচএস/এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি