ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভর্তি পরীক্ষা

পাঠ্য বইয়ের দখলেই ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত

প্রকাশিত : ২১:০০, ৩ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ১৮:১২, ৪ অক্টোবর ২০১৭

শিক্ষাজীবনে অনেক শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার। অন্যদের মতো আমার স্বপ্নটিও অভিন্ন ছিলো। স্কুল জীবন থেকেই আমি সেই স্বপ্নটিকে লালন করতে থাকি। স্বপ্ন লালন করার পাশাপাশি প্রস্তুতিও নেওয়া শুরু করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির বিষয়ে বিভিন্ন খোঁজখবর রাখতে শুরু করি। ভর্তি পরীক্ষা ও প্রস্তুতির অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ করে নেওয়ার জন্য যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো সচেতনা বা সব সময় চোখ-কান খোলা রাখা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাস থেকেই প্রশ্ন করা হয়। সবাই উচ্চ মাধ্যমিকে একই সিলেবাসে পড়াশুনা করে আসেন। তবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় সবাই কিন্তু ভালো করতে পারে না। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাশ করেন। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ফেল করেন। তাই আমি বলবো, উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ালেখা করার সময় একটু সচেতনভাবে পড়ালেখা করলে বা খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্তে রাখলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে ভালো করা সম্ভব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে আমি সবসময় পাঠ্য বইয়ের উপর জোড় ‍দিতাম। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশুনার সময়ই পাঠ্য বইগুলো ভালোভাবে পড়তাম। কেননা ভর্তি পরীক্ষার অধিকাংশ প্রশ্নই পাঠ্য বই থেকে করা হয়।

অনেকে আবার মনে করেন কোচিংয়ে ভর্তি না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় না, এটা ঠিক নয়। এমন মানসিকতা থেকে শিক্ষার্থীদের বেরিয়ে আসা উচিত। আমি মনে করি পাঠ্যবই ভালোভাবে পড়লে যে কোনো শিক্ষার্থীই ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে পারেন। যে সকল শিক্ষার্থীরা কোচিং করে থাকেন তারা কোচিং থেকে সাজেশান্স পেয়ে বিভিন্ন ধরনে অনেক বই কিনে থাকেন। এসব পড়তে গিয়ে তাদের পাঠ্য বই পড়ার সময় থাকে না এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়ে যায়। ফলে অধিক পরিশ্রম করা সত্ত্বেও ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে পারে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত কয়েক বছরের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পর্যালোচনা করলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায়। ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অবশ্যিক বিষয় বাংলা (২৪ নম্বর), ইংরেজি (২৪ নম্বর), হিসাব বিজ্ঞান (২৪ নম্বর), ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ (২৪ নম্বর) এবং ফিন্যান্স-ব্যাংকিং ও মার্কেটিং-এর যেকোনো একটি বিষয়ে ( ২৪ নম্বর) প্রশ্ন থাকেssss। বিষয় ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা সাহিত্য পাঠ এবং নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ থেকেই প্রায় সব প্রশ্ন কমন পরেছে। তাই এ বইগুলো ভালোভাবে পড়লেই কোচিং করার প্রয়োজন হয় না।

আর ইংরেজি বিষয়ের জন্য উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্য বইয়ের প্রত্যেকটি টপিক অর্থসহ বুঝে বুঝে পড়া উচিত। প্রতিটি বাক্যের গ্রামার এবং বাক্যের গঠন ও ধরণ বুঝে বুঝে পড়লে প্রশ্ন কমন পরবে। পাশাপাশি ইংরেজি শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে হবে। এ জন্য নিয়মিত ইংরেজি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করলে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি। এছাড়া গ্রামার অংশের জন্যেও বোর্ড স্বীকৃত একটি গ্রামার বইটি ভালো দখলে রাখা উচিত।

হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ, ফিন্যান্স-ব্যাংকিং এবং মার্কেটিং-এর ক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্য বইয়ের বিষয়গুলো গদবাধা ভাবে মুখস্থ না করে বুঝে বুঝে পড়া উচিত। সেই সাথে এসব বিষয়ের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার হলে ক্যালকুলেটর ব্যবহারের বিধান নেই বলে অনেকেই মনে করেন হিসাব বিজ্ঞানের অংক করা সম্ভব নয়। আমি মনে করি সূত্রগুলো ভালোভাবে বুঝলে এবং সূত্রগুলো কিভাবে প্রয়োগ করতে হয় তা জানা থাকলে যে কোনো অংকের সমাধান করা খুবই সহজ। নতুন ব্যাংক এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত নতুন তথ্য পেতে পত্রিকার ব্যবসা-বাণিজ্য পাতাটি নিয়মিত পড়া উচিত।

‘ঘ’ ইউনিটে মোট ১২০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষার হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৩০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে বাংলা অংশ থেকে। আর ৩০ নম্বরের প্রশ্ন হয় ইংরেজি বিষয় থেকে। বাকি ৬০ নম্বরের প্রশ্নেই হয়ে থাক সাধারণ জ্ঞান অংশ থেকে। ব্যবসা শাখার যে সব শিক্ষার্থী ‘ঘ’ ইউনিটে পরীক্ষা দিতে চান তাদের জন্য এ সাধারণ জ্ঞান অংশটি একেবারেই নতুন। মজার বিষয় হলো এই সাধারণ জ্ঞানের নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। এর পরিসরটা অনেক বড়। তাই সাধারণ জ্ঞানে ভালো করার জন্য দেশের অভ্যন্তরে ও বিশ্বের চলমান ঘটনাবলি সম্পর্কে ভালো করে জানতে হবে। প্রতিদিন নিজেকে আপডেট রাখতে হবে। বাংলাদেশ ও বিশ্ব মানচিত্র সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা থাকতে হবে। কোনো দেশের সম্পর্কে যদি কোনো তথ্য পাওয়া যায় তাহলে সেই দেশকে মানচিত্রের মাধ্যমে চিহিৃত করে পড়া যেতে পারে।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেন সিস্টেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ভর্তি পরীক্ষায় সি ইউনিটে ৩২তম স্থান অধিকারী)।

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি