ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪

পুরোনো সাময়িকীতে আফগানিস্তানের হারানো অতীত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৫২, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ০০:০০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

১৯২০এর দশকে প্রকাশিত উজ্জ্বল বা বর্ণিল আফগান সাময়িকী জাভান্দুন চলেছিল পাঁচ দশক ধরে। এই ইংরেজি সাময়িকীর সংখ্যাগুলোয় ফুটে উঠেছে সে যুগের অভিজাত আফগানদের জীবন ও তাদের আকাঙ্খা।

ওই দশকগুলোয় আফগানিস্তানের সুদূর প্রসারী পরিবর্তন হয়েছিল। জাভান্দুন পত্রিকায় থাকতো সেই সময়ের খবরসহ বিশ্বের নানা দেশের সমাজ ও ইতিহাস নিয়ে নিবন্ধ, সিনেমা আর ফ্যাশন জগতের মজার মজার খবর।

জাভান্দুন বেরুতো এমন একটি দেশ থেকে যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই ছিল নিরক্ষর। এর পাঠক আর লেখকরা প্রধানত কাবুল শহরেরই বাসিন্দা ছিলেন। তারা ছিলেন প্রগতিশীল লোক।

সেই অঞ্চলের জন্য ১৯৪৯ সালটি ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পুরোনো ইউরোপিয় সাম্রাজ্যগুলো তখন ভেঙে পড়ছে। আফগানিস্তানের প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান আর ইরানে তখন উপনিবেশবাদ-উত্তর চিন্তাধারা চালু হয়েছে।

আফগানিস্তানের রাজা জহীর বুঝলেন, তাকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে, ব্যাংকে কিছু টাকা থাকতে হবে। তিনি তার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে বিদেশী উপদেষ্টাদের ডাকলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্য চাইলেন।

আরিয়ানা নামে আফগান বিমান সংস্থা চালু হলো ১৯৫৫ সালে। অর্ধেক বিশ্বের সাথে আফগানিস্তানের যোগাযোগ স্থাপিত হলো। এর সবচেয়ে বিখ্যাত রুট ছিল কাবুল থেকে তেহরান, দামেস্ক, বৈরুত, আর আংকারা হয়ে জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট। একে বলা হতো `মার্কো পোলো রুট।` যেসব আফগান শহর পার্বত্য এলাকা বা মরুভূমি দিয়ে বিচ্ছিন্ন ছিল, সেগুলো এখন নিয়মিত ফ্লাইট দিয়ে সংযুক্ত হলো।

১৯৬০-এর দশক থেকে জাভান্দুনে দেখা দিতে লাগলো বিজ্ঞাপন। গাড়ি, ফ্রিজ, গুঁড়ো দুধ- এগুলোর দাম তখন ছিল বেশির ভাগ লোকেরই সাধ্যের বাইরে। কিন্তু অল্প কিছু লোকের জন্য এটা ছিল জীবনযাপনের ক্ষেত্রে একটা বিপ্লবের মতই পরিবর্তন, বিশেষ করে নারীদের জন্য।

রাজা জহীরকে ১৯৭৩ সালে ক্ষমতাচ্যুত করেন তারই সম্পর্কীয় ভাই মোহাম্মদ দাউদ। ঐতিহ্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে তিনি নিজেকে রাজা নয়, বরং নতুন এক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করলেন।

তিনি যখন কারখানা ও সেবাখাত গড়ে তোলার ওপর জোর দিলেন, তখন তারও প্রতিফলন ঘটলো জাভান্দুনের পাতায়। ১৯৭৮ সালে একদল কমিউনিস্ট সেনা অফিসার দাউদ খানকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। আফগানিস্তনে এই বিদ্রোহের মধ্যে দিয়ে যে যুদ্ধের সূচনা হলো তার প্রতিক্রিয়া এখনো চলছে।

সোভিয়েত বাহিনী রাশিয়ায় ঢোকে ১৯৭৯ সালে । তার পর জাভান্দুনের পাতা থেকে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন উধাও হয়ে যায়। তবে তার পরও জাভান্দুনে এক ভিন্ন ধরণের স্বপ্নের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছিল। হলিউডের সিনেমার জায়গা নিল সোভিয়েত সিনেমা। টেপ রেকর্ডার আর ফ্রিজের পরিবর্তে দেখা গেল কৃষি যন্ত্রপাতি।

১৯৯০এর দশকে সোভিয়েত বাহিনীর পরাজয়ের পর জাভান্দুন, কাবুল বা অন্য সব সাময়িকী বন্ধ হয়ে গেল। লেখক, প্রকাশক, পাঠকদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালালেন। তালিবানের উত্থানের ফলে এরা কেউই আর দেশে ফেরেন নি। তবে লাইব্রেরী এবং ব্যক্তিগত সংগ্রাহকরা এগুলোর কপি সযত্নে রক্ষা করেছেন।

এখন আর জাভান্দুনের কপি বিশেষ পাওয়া যায় না। মার্কিন লাইব্রেরি অব কংগ্রেস পাকিস্তান সীমান্ত এলাকা থেকে জাভান্দুনের একটি প্রায় সমপূর্ণ সেট উদ্ধার করে। এগুলো এখন ডিজিটাল আকারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে কার্নেগি করপোরেশনের সাথে অংশীদারিত্বে।

সূত্র: বিবিসি

একে/টিকে

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি