ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি

বাংলা বিষয়ের প্রস্তুতি নিবেন যেভাবে

প্রকাশিত : ১৭:৫৯, ২২ আগস্ট ২০১৭ | আপডেট: ১৬:৫০, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

লেখাটি তাদের উদ্দেশে, যারা বিসিএসে আবেদন করেছেন; অথচ সিলেবাসই জানেন না। ইতস্তত করছেন, কীভাবে শুরু করা যায়। কষ্ট করে লেখাটি একবার পড়ুন। ‘পাইলেও পাইতে পারেন সমস্যার সমাধান!’

সব সময় মনে রাখবেন পৃথিবীর মানুষ উদীয়মান সূর্যের পূজা করে, অস্তমিত সূর্যের নয়। বিসিএস ক্যাডার হওয়া কোনো স্বপ্নতো নয়-ই, বরং অন্যান্য চাকরির মতো এটি শেষ পর্যন্ত একটা চাকরি বই অন্য কিছুই নয়।

‘আজ কোনো ভূমিকা নয়, একটা চাকরির পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ে তুলনামূলক ভালো নম্বর পাওয়ার কতক উপায় নিয়ে আশাব্যঞ্জক বাণী শোনানোই আমার মুখ্য উদ্দেশ।’-এ বাক্যটির দিকে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, কিঞ্চিত শ্রুতিমধুর বাক্যটি শেষ অবধি না পড়লে আপনার মন আন-চান করবে। দায়িত্ব নিয়ে বলছি, এরকম আকর্ষণীয় ও শ্রুতিমধুর সহজ-সরল বাক্যই আপনাকে কাক্সিক্ষত লক্ষে পৌঁছে দেবে। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা হওয়ার কারণে এদেশে চাকরির পরীক্ষায় সবিশেষ মর্যাদা পেয়ে থাকে। আপনার-আমার সৌভাগ্য যে, বিসিএস পরীক্ষা এখন-অবধি বাংলাতেই, হ্যাঁ বাংলাতেই দেয়া সম্ভব। প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চস্তর; সর্বত্র বাংলা ভাষায় আমরা শিক্ষা-অর্জন করেছি। আপনার অর্জিত শিক্ষার ফল পেতে পারেন, যদি আপনি এ পর্যন্ত অর্জিত বাংলা ভাষা বিষয়ক জ্ঞানকে সহজভাবে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উপস্থাপন করতে পারেন।

বাংলা বিষয়ের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে দেখা যায়, সাহিত্য অংশের প্রস্তুতি নিতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে। যে ছাত্র/ছাত্রী বাংলা সাহিত্যে স্নাতক-স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছে,তার জন্য যেমন সমস্যা; আপনার জন্যও ঠিক তেমনই সমস্যা। মনে রাখা জরুরী, বিসিএস নামক চাকরির পরীক্ষায় সব ডিসিপ্লিনের ছেলেমেয়েরা অংশগ্রহণ করে। যে কারণে আবেদনকারীর সংখ্যা অন্য যেকোনো চাকরির তুলনায় অনেক বেশি হয়ে থাকে। ৩৮ তম বিসিএসের আবেদনের সংখ্যা পূর্বেও যেকোনো বিসিএসর রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসের চাকরি এখনও যে তীব্র আকর্ষণীয় চাকরি, এটি তারই প্রমাণ। বিসিএসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ে কীভাবে ভালো করা যায় সে বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা করছি।

দেখতে অ্যামিবা প্রকৃতির প্রিলিমিনারির সিলেবাসটি আপনার মাথা নষ্ট করে দিতে বদ্ধপরিকর। মনে রাখবেন, প্রিলিমিনারির পড়া দিয়েই আপনি লিখিত পাশ করত পারবেন, যদি আপনি পড়াশুনার ক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। বাংলা বিষয়ে ব্যাকরণ (ভাষা) অংশ ও সাহিত্য অংশ। প্রথমেই ব্যাকরণ অংশ নিয়ে কিছু কথা চাই।


ব্যাকরণ (ভাষা) অংশ:

এখানে অবশ্যই আমি বাংলা ভাষার কথা বলছি। ভাষাকে ভাসিয়ে দিতে না চাইলে খুব কম পড়–ন। প্রথমেই চিহ্নিত করুন, আপনি কী জানেন না। সেটি চিহ্নিত করতে পারলে নিজেই সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। যদি সমস্যার সমাধান না পেয়ে থাকেন, তাহলে নিচের দিকে তাকান; নচেৎ সাধু সাবধান।

বাংলা ভাষা বা ব্যাকরণ অংশ থেকে মোট ১৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে প্রিলিমিনারির পরীক্ষার জন্য। শুধু প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, লিখিত পরীক্ষায়ও এই অংশ অসামান্য কাজে দিবে। এক্ষেত্রে সামান্য সচেতনা পারে আপনার সারা জীবনের ক্লান্তি দূর করতে।

প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ: ধরা যাক, এ শব্দযুগল আপনি ইহজীবনে এই প্রথম শুনলেন। তাহলে চট করে একটি গাইড বই কিনে ফেলুন। প্রথমেই এ বিষয়টি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিন। আরেকটি উপায় কার্যকরী হতে পারে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলায় অনার্স/ মাস্টার্স পড়া বন্ধুটির কাছ থেকে প্রথম বর্ষের গাইড সংগ্রহ করুন। টানা পড়ে ফেলুন। দেখবেন, দুদিনেই আপনি বিশেষ-অজ্ঞ হতে বিশেষজ্ঞ হতে চলেছেন। রাস্তাঘাটে আপনার অত্যাচারে বাংলা ভাষার ভুল বানান দৌঁড়ে পালাবে।

বানান ও বাক্য শুদ্ধি:

বানান মানেই বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানান। গাইড বইগুলো এ বিষয়ে মারাত্মক জগাখিচুড়ি করেছে বলে আমার মনে হয়। বাংলা একাডেমির ‘ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’-এর শেষ পৃষ্ঠাগুলোতে বাংলা বানানের নিয়ম দেয়া আছে। অথবা, মাত্র ২০ টাকা খরচ করে বাংলা একাডেমি থেকে বাংলা বানানের নিয়ম সংগ্রহ করুন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বানানের নিয়ম/বাংলাদেশের পাঠ্যক্রমের বানানের নিয়ম/ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার বানানের নিয়ম/বাংলাদেশের প্রথম আলো পত্রিকার বানানের নিয়ম বেমালুম ভুলে যান। শোনেন ভাই, এই একটি পড়া আপনাকে লিখিত পরীক্ষার ৫ নম্বর ম্যানেজ করে দিবে। এর সাথে গাইড বই থেকে শুদ্ধ বানান অংশের প্রস্তুতি নিয়ে নিন। মনে রাখবেন, আমাদের দেশের সকল চাকরির পরীক্ষায় বানান শুদ্ধি থেকে একাধিক প্রশ্ন আসে। বিসিএস-ই একমাত্র নয়, জীবনে শান্তিমতো বেঁচে থঠশতেও বানান শুদ্ধি জানা জরুরী ।

সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ:
শিক্ষা জীবনের প্রাথমিক স্তর থেকে আমরা সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ শিখে আসছি। স্মৃতিকে পুনরায় ফেরত আনুন আর নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বইটা আরেকবার পড়ে নিন। পাশাপাশি বাজারের যেকোনো একটি গাইড বই অনুসরণ করতে পারেন।

পারিভাষিক শব্দ:
আগের বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্ন পর্যালোচনা করলে একটি বিষয় দেখা যায় যে প্রায় প্রত্যেকটি পরীক্ষায় অন্তত একটি প্রশ্ন এসেছে। ক্ষেত্র বিশেষ একাধিক প্রশ্নও দেখা গেছে। তাই এ অংশটি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
 
সন্ধি ও সমাস:
এ দুটো বিষয়ের সাথে সন্ধি করতে পারলে সব চাকরির পরীক্ষায় অন্তত পক্ষে ১ নম্বর নিশ্চিত আপনার পক্ষে জমা হবে।

ধ্বনি, বর্ণ, শব্দ, পদ, বাক্য:
এ অংশের জন্য যে কোনো একটি গাইড বই আপনি অনুসরণ করতে পারেন। তবে অবশ্যই নবম-দশম শ্রেণির বই এক্ষেত্রে টেক্সট হিসেবে নিতে হবে। বিসিএস ছাড়াও অন্য যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একাধিক প্রশ্ন পেতে পারেন।


সাহিত্য অংশ:
মোটা দাগে সাহিত্য অংশের উত্তর করা প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য তুলনামূলক কষ্টের। ভালো ফল পেতে হলে এ অংশে নিবিড়ভাবে পড়াশুনা করুন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য বাংলা সাহিত্যাংশের নম্বর বিভাজন রয়েছে। চলুন তাহলে নম্বর বিভাজনের আলোকে সাহিত্য অংশ নিয়ে দু’একটি কথা বলা যাক।  

প্রাচীন ও মধ্যযুগ:
এই অংশ থেকে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মাত্র ০৫ নম্বরের প্রশ্ন আসবে। বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদ (৬৫০ অথবা ৯৫০) হতে ১৮০০ সাল পর্যন্ত- এ সুদীর্ঘ সময়ের বাংলা সাহিত্যাংশ থেকে আপনার জন্য মাত্র ০৫ নম্বর বরাদ্দ থাকবে। বেশি সময়ের সাহিত্য কর্ম হলেও পড়াশুনা খুব বেশি নয়, যদি আপনি কিছু কৌশল অবলম্বন করেন। প্রথমে আপনি বিগত সালের এই অংশের প্রশ্নগুলো নিয়ে একটু বিশ্লেষণ করুন। এ অংশের জন্য  চর্যাপদ, অন্ধারযুগ, বৈষ্ণব পদাবলী, মঙ্গলকাব্য, নাথ সাহিত্য, অনুবাদ সাহিত্য, জীবনী সাহিত্য বিষয়গুলো একটু ভালোভাবে দেখুন।  এ অংশের জন্য যে কোনো একটি  গাইড বই থেকে ঈস্খস্তুডু নিন।

আধুনিক যুগ (১৮০০-বর্তমান):
এ অংশে অসীমের মাঝে আপনি নিমজ্জিত হতে চলেছেন। কূল হারা নদীর মধ্যে আপনি ভাসছেন। সুতরাং যত দ্রণু কূলের দিকে আপনি ধাবিত হবেন ততই মঙ্গল। এক্ষেত্রে আপনাকে বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্মের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যাঁদের নাম শুনতে শুনতে আপনার শিক্ষার্থী-জীবন অতিষ্ট হয়েছিল। যেমন ধরুন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, জসীম উদ্দিন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, প্রমথ চৌধুরী, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মেলেন্দু গুণ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। শুরুতেই আপনি নবম-দশম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র বই সংগ্রহ করুন। এরপর লেখক পরিচিতি পড়ে ফেলুন। এর পর একাদশ-দ্বাদশের বই সংগ্রহ করে পড়ে ফেলুন। এছাড়া বাজারের প্রচালিত যেকোনো একটি বই সংগ্রহ করে পড়ে ফেলুন। এ অংশে জবষধঃব (তুলনামূলক) পদ্ধতিতে পড়ে ধীরে ধীরে এগোতে হবে।

বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার নাম, সম্পাদক ও প্রকাশ সাল গুরুত্ব দিয়ে পড়–ন। এখান থেকে প্রতি প্রিলিমিনারির পরীক্ষায় এক বা একাধিক প্রশ্ন থাকে। এছাড়া বিভিন্ন সাহিত্যিকদের উপাধি, ছদ্মনামও গুরুত্বসহকারের আয়ত্ব করুন। এ বিষয় থেকেও একটি প্রশ্ন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আসে।
 
সাহিত্য অংশের জন্য আরো যেসব বই পড়তে পারেন:
১.লাল নীল দীপাবলি ও কতো নদী সরোবর- হুমায়ুন আজাদ
২.বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ও বাংলাদেশের সাহিত্য- মাহবুবুল আলম।
৩.নিশ্চয়ই বাজারের গাইডগুলোর কথা আমাকে বলে দিতে হবে না।

মনে রাখবে একটি প্রশ্নের ভুল উত্তর আপনাকে যেমন প্রিলিমিনারির প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দিয়ে দিতে পারে। ঠিক তেমনটি একটি সঠিক উত্তরও আপনাকে প্রিলিনারি পরীক্ষায় উত্তর্ণী করে দিতে পারে। তাই প্রস্তুতি নেওয়া ক্ষেত্রে কোনো কিছু বাদ দেওয়া উচিত হবে না।

জীবনে ভালোভাবে বেঁচে থাকাও কম আনন্দের নয়। যে যে অবস্থাতেই থাকুন, আনন্দে থাকুন, ভালো থাকুন। আমার অভিজ্ঞতা বলে, কেউই তাঁর বর্তমান চাকরি নিয়ে সন্তুষ্ট নন। আপনার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি।

 

লেখক: বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা, বাংলা), ৩৫তম বিসিএস।


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি