ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশ তো আমারই দেশ : জহর সেনমজুমদার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৪৭, ২০ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২১:৫২, ২৪ নভেম্বর ২০১৭

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পাঠকপ্রিয় কবি জহর সেনমজুমদার। দুই বাংলাতেই সমান জনপ্রিয় তিনি। এ পর্যন্ত তার ১৬টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টি ও আগুনের মিউজিকরুম’, ‘বিপজ্জনক ব্রহ্মবালিকাবিদ্যালয়’, ‘ভবচক্র : ভাঙা সন্ধ্যাকালেশীর্ষক গ্রন্থগুলো ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এ বছরের একুশে বইমেলায় কাগজ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার কাব্য সংকলন শ্রেষ্ঠ কবিতাসদ্য সমাপ্ত আন্তর্জাতিক সাহিত্যের আসর ঢাকা লিট ফেস্টেঅংশগ্রহণ করেন তিনি। উৎসবের সমাপনী দিন ১৮ নভেম্বর একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন বাংলা সাহিত্যের অগ্রগণ্য এ কবি। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সিনিয়র সহ-সম্পাদক দীপংকর দীপক

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : ৭ম ঢাকা লিট ফেস্টে’ আপনাকে স্বাগতম। আন্তর্জাতিক এ সাহিত্য আসরে এসে কেমন লাগছে?

জহর সেনমজুমদার :‘ঢাকা লিট ফেস্ট’ ইতিমধ্যেই বিশ্ব সাহিত্য অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এ উৎসবে বিভিন্ন দেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিকরা স্বাচ্ছন্দ্যে অংশগ্রহণ করছেন। বিশ্ব সাহিত্যের এ আসরে আমাকে একজন কবি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোয় নিজেকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে। গত বছরও আমি ‘ঢাকা লিট ফেস্টে’ অংশগ্রহণ করেছি। তবে এবারের আসরটিকে আমার আরো প্রাণবন্ত মনে হয়েছে। এখানে এসে বিভিন্ন দেশের অনেক গুণি ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। বাংলাদেশের খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পেরেছি। সব মিলিয়ে চমৎকার একটি সময় পার করেছি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: অভিযোগ আছে, এখানে ইংরেজি সাহিত্য প্রাধান্য পাচ্ছে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

জহর সেনমজুমদার : ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা। তাই এ ভাষাকে কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। তবে আমি মনে করি, ‘লিট ফেস্ট’ বাংলাদেশে আয়োজিত হওয়ায় এখানে বাংলা ভাষাকেই সর্বোচ্চ প্রধান্য দেয়া উচিত। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে আরো ভাবতে হবে। তবে গত বছরের চেয়ে এবারের উৎসবে বাংলা সাহিত্যের চর্চা বেশি হয়েছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : এ বছর মোট ৪ জন জেমকন সাহিত্য পুরুস্কার পেয়েছে। আপনি এ পুরস্কার আসরের একজন বিচারক ছিলেন। পুরস্কৃত ব্যক্তিদের সাহিত্যের মান কতটা উন্নত মনে হয়েছে?

জহর সেনমজুমদার : এবারের পুরস্কৃত ব্যক্তিরা হচ্ছেন- মোহাম্মদ রফিক, আশরাফ জুয়েল, মামুন অর রশিদ ও নুসরাত নুসিন। তিন বিভাগে মোট চারজনকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদ রফিক তার “দু’টি গাথাকাব্য” গ্রন্থের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে তিনি ৮ লাখ টাকা পেয়েছেন। তরুণ কথাসাহিত্যিক হিসেবে আশরাফ জুয়েল এবং মামুন অর রশিদ যৌথভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন। তাদের প্রত্যেকে ৫০ হাজার টাকা পেয়েছেন। তাছাড়া জেমকন তরুণ কবি হিসেবে ‘দীর্ঘ স্বরের অনুপ্রাস’ পাণ্ডুলিপির জন্য পুরস্কার পেয়েছেন নুসরাত নুসিন। তিনি পেয়েছেন এক লাখ টাকা। তাদের প্রত্যেকের লেখার ধরন আমার কাছে মানসম্পন্ন বলে মনে হয়েছে। অর্থের দিক থেকেও এটি একটি মানসম্পন্ন পুরস্কার। সবমিলিয়ে এ পুরস্কার তরুণ সমাজকে লেখায় আরো উদ্বুদ্ধ করছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : বাংলাদেশের আতিথিয়তা কতটা পছন্দ হয়েছে?

জহর সেনমজুমদার : আতিথিয়তায় বাংলাদেশের বেশ সুনাম রয়েছে। এখানকার মানুষের মধ্যে মমতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ অনেক বেশি। আমাদের সবাই খুব খাতির-যত্ন করেছেন। এখানকার খবার-দাবারও অনেক রুচি সমৃদ্ধ। তাছাড়া বাংলাদেশ তো আমারই দেশ। কারণ, আমার পূর্বপুরুষের ভিটা বরিশালে। তাই এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে আমার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। 

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : আপনার কোনো বই বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে কী?

জহর সেনমজুমদার : এপার বাংলা থেকে আমার নতুন কোনো মৌলিক বই প্রকাশিত হয়নি। তবে এ বছরের একুশে গ্রন্থমেলায় কাগজ প্রকাশন আমার কাব্য সংকলন ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ প্রকাশ করেছে। এখানে আমার অধিক জনপ্রিয় কবিতাগুলো স্থান পেয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন পরিবেশক রকমারি ডট কমেও আমার কয়েকটি কাব্য সমগ্র পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘মধ্যযুগের কাব্য স্বর ও সংকট’, ‘অপরূপ সমগ্র’, ‘প্রসবসমগ্র’, ‘সূর্যাস্তসমগ্র’ ও ‘অগ্নিসমগ্র’। বইগুলো কলকাতা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। শুনেছি এ বইগুলো বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে।

একুশে টিভি অনলাইন : আপনার ‘জীবনানন্দ ও অন্ধকারের চিত্রনাট্য’ শীর্ষক গ্রন্থটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে। অনুভূতি কেমন?

জহর সেনমজুমদার : আমার গ্রন্থ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা শিখছে, এটা ভাবতেই গর্ব হচ্ছে। একজন লেখক কিংবা কবি চান, তার জ্ঞানাদর্শ সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়–ক। তরুণ সমাজ সম্মুখে পথ চলার সঠিক নির্দেশনা পাক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ছাড়াও বিভিন্ন আবৃত্তি সংগঠনের সদস্যরা আমার কবিতা নিয়মিত পাঠ করছেন। সত্যিকারার্থে সবার এমন ভালোবাসায় আমার লেখক জীবন সার্থক বলে মনে হচ্ছে।

একুশে টেলিভিমন অনলাইন : আপনার বেশ কিছু কবিতা আমি পড়েছি। এসব কবিতা পড়ে আমার উপলব্ধি হয়েছে, আপনি সীমাবদ্ধ কালের গণ্ডিকে পেরিয়ে গেছেন। আপনার লেখায় অতিত-বর্তমান ও ভবিষ্যত- সময়ের এ তিন চক্রই প্রাধান্য পেয়েছে। এ বিষয়ে কিছু বলুন।

জহর সেনমজুমদার : কবিতার মাধ্যমে আমি পুরো সময়চক্রকে আয়ত্ত্ব করতে চেষ্টা করেছি। অক্ষর বিন্যাস ও শব্দ চয়নেও অতিতের সঙ্গে বর্তমানের মেলবন্ধন ঘটিয়েছি। অনেকেই আমার লেখার এ ধরনকে পছন্দ করছেন। তবে কেউ কেউ সমালোচনা করতেও ছাড়ছেন না। প্রকৃতপক্ষে একজন কবিকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকেও নানা সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাই এ নিয়ে আক্ষেপ করার কিছু নেই।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : কাব্যচর্চার ক্ষেত্রে দুই বাংলার মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছেন কী?

জহর সেনমজুমদার : স্থান-কাল-পাত্র ভেদে কিছুটা পার্থক্য তো থাকবেই। এপার বাংলার লেখকদের মধ্যে প্রতিরোধী ধারা খুবই সক্রিয়। অন্যদিকে ওপার বাংলায় বৃদ্ধিবৃত্তিক চর্চাটা বেশি হচ্ছে। তবে দুই বাংলার লেখকরাই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা তুলে ধরছেন। তাদের লেখনীতে নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনচিত্র পরিপূর্ণভাবে ফুটে উঠছে।

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি