ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

বিদেশের চেয়ে দেশেই ই-শপিংয়ের সাড়া বেশি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৩৩, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৬:২৮, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে ই-শপিং জনপ্রিয় হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। বাংলাদেশেও এর বাজার দিনে দিনে বাড়ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে। বাংলাদেশে বর্তমানে তিন মিলিয়ন বা ৩০ লাখ মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করেন। আর প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার পণ্যের কেনাকাটা হয়। প্রতিটি পণ্য প্রায় গড়ে এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়। এতে বলা যায় এ বাজার ছোট নয়। আর বাজার আরও বাড়ছে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ই-শপিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ই-শপিং হলো দারাজ। বাংলাদেশে ই-শপিং এর বর্তমান-ভবিষ্যৎ এবং আগামীর সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয় দারাজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোস্তাহিদুল হকের সঙ্গে। তিনি গ্রাজুয়েশন করেছেন যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বোকারেস ইউনিভারসিটি থেকে সেই সঙ্গে তিনি এসিসিএ-এর সদস্যও। তিনি ২০০৮ সালে ক্যারিয়ার শুরু করেন যুক্তরাজ্যের স্পটস ডিরেকটর ডটকমে। পরে ২০১১ সালে তিনি দেশে ফিরে যোগদান করেন হোদা ভাসি  অ্যান্ড কো. এ অডিট অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল কনসালটেড হিসেবে। পরে ২০১৪ সালে তিনি ডরাজে সিএফও হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৭ সালের জুনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পান। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সহ-সম্পাদক শামসুল হক। একুশে টেলিভিশন অনলাইন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

একুশে টেলিভিশন: কেমন আছেন?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: হ্যাঁ ভালো আছি।

একুশে টেলিভিশন: আপনাদের দারাজের শুরু হয় কিভাবে?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: দারাজ প্রথমে পাকিস্তানে ২০১২ সালে শুরু করে। আর বাংলাদেশে ২০১৪ সালে। আবার ২০১৪ সালেই শীলঙ্কাতেও শুরু করা হয়। এখন নেপাল ও মিয়ানমারে রয়েছে। এর শুরুতে রকেট ইন্টারনেট বিনিয়োগ করে। রকেট ইন্টারনেট হলো জার্মানভিক্তিক প্রতিষ্ঠান। যা ই-শপিংয়ের প্রসারে কাজ করছে।

একুশে টেলিভিশন: দারাজ এখন কতগুলো পণ্য বিক্রি করে?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: আমাদের এখন প্রায়  দুই লাখ ৫০ হাজার পণ্য রয়েছে। সব ধরনের পণ্য আমাদের ই-শপিং-এ পাওয়া যায়।

একুশে টেলিভিশন: প্রথম কোন পণ্য দিয়ে শুরু হয়?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: প্রথমে পাকিস্তানে ফ্যাশন পণ্য বিক্রি শুরু করি। আর বাংলাদেশে ইলেকট্রনিকস পণ্য দিয়ে শুরু করা হয়। এখন প্রায় সব ধরনের পণ্য পাওয়া যায়।

একুশে টেলিভিশন: দেশে না বিদেশে এর ব্যবসা ভালো হচ্ছে? অর্থাৎ কোথায় বেশি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: দেশে বিদেশে দারাজ ভালো ভালো সাড়া পাচ্ছে। তবে বিদেশের চেয়ে দেশে বেশি সাড়া পাচ্ছে। বলা যায়, দেশে এর বাজার বড় হচ্ছে।

একুশে টেলিভিশন: বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে জনবল কত?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: বর্তশানে বাংলাদেশে প্রায় ৯০০ জন লোক কাজ করছে। এছাড়া অন্য চারটি দেশেও কাজ করছে। সব মিলে প্রায় এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৭০০ জন লোক কাজ করছে আমাদের দারাজে।

একুশে টেলিভিশন: ই-শপিংয়ে সারাদেশে সব মিলে কেমন লোক কাজ করছে?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: সারাদেশে ই-শপিংয়ে সব মিলে প্রায় তিন হাজার লোক কাজ করছে। তবে সবচেয়ে বেশি লোক কাজ করে আমাদের দারাজেই মনে হয়।

একুশে টেলিভিশন: আপনাদের লেনদেন কিভাবে হয়?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: লেনদেন কয়েকভাবে হয়ে থাকে। যেমন নগদ লেনদেন হয়, বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন হয়, ব্যাংকের এটিএম কার্ড ব্যবহার করেও লেনদেন হয়। অর্থাৎ যেকোনো ব্যাংকের এটিএম কার্ড ব্যবহার করে লেনদেনের  সুযোগ রয়েছে।

একুশে টেলিভিশন: আপনারা অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে পণ্য বিক্রি করে থাকেন। সেক্ষেত্রে পণ্যের মান কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: দেখেন আমরা ভালো ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করি। আর যাদের পণ্য ভালো তাদের সঙ্গে চুক্তি করেই কেবল নিজেরা যাচাই করেই সরবরাহ করি। ভালো মানের পণ্যের নিশ্চয়তা দিয়ে আমরা এটা করে থাকি। তাই মান খারাপ কোনো পণ্য সরবরাহ করি না। আমরা গ্রাহকের বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

একুশে টেলিভিশন: আপনারা ঢাকার বাইরে পণ্য সরবরাহ করছেন। সেটা কিভাবে?

 সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: আমাদের সব পণ্য ঢাকা অফিস থেকে যাচাই করেই সরবরাহ করা হয়। যেমন কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের পণ্যের শো-রুম হয়তো ওই জেলা শহরে আছে। কিন্তু আমরা ওই জেলা শহরের ওই শো-রুম থেকে পণ্য নেই না। আমরা ঢাকা অফিসে মান পরীক্ষা করেই কেবল সরবরাহ করি। এছাড়াও আমরা ঢাকার বাইরে বর্তমানে ১৯ জেলায় কাজ করছি। এ বছরে সব জেলায় কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

একুশে টেলিভিশন: আপনারা উপজেলা পর্যায়ে বা গ্রামীণ পর্যায়ে কাজ করবেন কি? করলে কীভাবে?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: হ্যাঁ আমরা ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে কাজ শুরু করেছি। দারাজ স্টোর নামে আমাদের সেবা থাকবে। ইতোমধ্যে আমরা ৫৭০টি দারাজ স্টোর চালু করেছি। আর এ বছরেই প্রায় চার হাজার দারাজ স্টোর চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

 একুশে টেলিভিশন: এ দারাজ স্টোরগুলো কি অন্য কোম্পানির শো-রুমের মতো হবে?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: না সে রকম না। এ স্টোরগুলো হলো ওই উপজেলায় বা বাজারে একটি দোকান থাকবে। আর সেই দোকানে আমরা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ সরবরাহ করবো। এর পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবস্থাও সরবরাহ করা হবে। এতে ওই স্টোরে এসে যেকেউ আমাদের পণ্যের অর্ডার দিতে পারবেন। এতে সহায়তা করবে ওই স্টোরের ওই ব্যক্তি। বিনিময়ে ওই ব্যক্তিকে আমরা মুনাফার একটা অংম দিবো।

একুশে টেলিভিশন: কোনো পণ্য অনলাইনে দেখে অর্ডার করার পর যদি অনলাইনের পণ্যের  সঙ্গে না মিলে তাহলে কি করেন?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: কোনো পণ্য যদি কোনো গ্রাহক অর্ডার করার পরে মনে করেন, সেই পণ্যের সঙ্গে মিলে না তাহলে তাকে ওই পণ্য দেওয়া হয় না। আর এ জন্য আলাদা কোনো চার্জ  বা টাকা নেওয়া হয় না। এছাড়াও ওই পণ্য যদি খারাপ বা ভালো নয় মনে হয়। তাহলে ওই পণ্য সম্পর্কে সাত দিনের মধ্যে অভিযোগ দিলে তা ফেরত নেওয়া হয়।

একুশে টেলিভিশন: দারাজে বর্তমানে বিনিয়োগ কারা করেন?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: দারাজে বিনিয়োগ রয়েছে বাইরের দুটি প্রতিষ্ঠানের। ২০১৫ সালে ব্রিটিশ কোম্পানি সিডিসি এবং এপেক্স আইজি বিনিয়োগ করে। বর্তমানে দারাজের বিনিয়োগ রয়েছে ৭৫ কোটি টাকা। আগামী পাঁচ বছরে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

একুশে টেলিভিশন: আমরা জানতে পেরেছি গত ঈদ-উল-আজহায় কোরবানির গরু বিক্রি করেছেন আপনারা। কেমন সারা পেয়েছেন এবং আসছে ঈদে পরিকল্পা কেমন?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: হ্যাঁ ঠিক জেনেছেন। আমরা গত ঈদে খুব ভালো সারা পেয়েছি। আর এবার ঈদে আমরা পরিসর আরও বাড়াবো। অর্থাৎ আমরা আরও বেশি সুযোগ দিবো এবার গ্রাহকদের জন্য।

একুশে টেলিভিশন:  ই-শপিংয়ে চ্যালেঞ্জ কেমন?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: হ্যাঁ ই-শপিংয়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে লজিস্টিকস সাপোরর্ট। এছাড়াও ইন্টারনেট ব্যবস্থা সহজ করা দরকার।

একুশে টেলিভিশন: নতুন উদ্যোক্তাদের এ ব্যবসায় কেমন সম্ভাবনা রয়েছে? পুঁজি কেমন লাগতে পারে?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: হ্যাঁ নতুনরা এ ব্যবসায় আসতে পারেন। অপার সম্ভাবনা রয়েছে এ খাতে। ছোট বড় যে কোনো কেউ আসতে পারেন। কম পুঁজি নিয়েও এখানে ব্যবসা করতে পারেন আবার বেশি পুঁজি নিয়েও আসতে পারেন।

একুশে টেলিভিশন: নতুন উদ্যোক্তারা কিভাবে সফল হতে পারেন এখাতে?

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: নতুন উদ্যোক্তা সফল হতে পারেন। এজন্য তাদের নতুনত্ব নিয়ে আসতে হবে। পণ্যের মধ্যে নতুনত্ব থাকবে । তারা বাজারে যা আছে তার চেয়ে আলাদা কিছু করবেন। পণ্যের গুনগত মান ভালো করতে হবে।

একুশে টেলিভিশন: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক: আপনাকে ও একুশে টেলিভিশন পরিবারকে ধন্যবাদ।

 

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি