ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্ব অর্থনীতির আধিপত্য হারাচ্ছে মার্কিন ডলার!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:২৬, ১৮ আগস্ট ২০১৮

মার্কিন ডলার আধিপত্য ধরে রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি রাশিয়ান রুবলের মতো উঠতি মুদ্রার দাপটে মার্কিন ডলার তার আধিপত্য হারাতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলারের ‘পতন` কামনাও করেছে মস্কোও বলে জানা গেছে।

কোনো মুদ্রার স্থিতিশীলতা যদি পুরোপুরি তার ইস্যুকারীর ওপর নির্ভর করে, তাহলে ডলারের অবস্থা বেশ নাজুকই বলা চলে৷ ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের সবার সঙ্গে লড়াইয়ে বেশি ব্যস্ত৷ তার প্রশাসন চীনসহ অন্যান্য দেশের পণ্যে শুল্ক আরোপ এবং বড় বড় কথা দিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধে ব্যস্ত৷

সম্প্রতি, রাশিয়া এবং তুরস্কের সঙ্গেও বিবাদে জড়িয়েছেন ট্রাম্প৷ ওয়াশিংটনকে সুযোগ বুঝে পালটা জবাবও দিচ্ছে তারা৷ এখন রাশিয়া ও তুরস্ক, উভয়ের পক্ষ থেকেই চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে মার্কিন ডলারের আধিপত্যকে৷

ইউরো বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত এবং প্রচলিত মুদ্রা৷ এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সাধারণ মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃত৷ ইইউ-এর ২৮টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৯টি দেশে এই মুদ্রার প্রচলন রয়েছে৷ যেসব দেশে ইউরো চলে, তাদের ‘ইউরোজোন’ বলা হয়৷ এছাড়া কসোভো, মন্টেনিগ্রো এবং ভ্যাটিকান সিটিতেও ইউরোর চল রয়েছে৷

মার্কিন মুদ্রার জয়যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি৷ মিশরের সুয়েজ খালের পাশে গ্রেট বিটার হ্রদে নোঙর করা ইউএসএস কুইন্সি নামের জাহাজে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট এবং সৌদি বাদশাহ ইবনে সৌদ উপস্থিত ছিলেন৷

সৌদি তেলে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকার এবং ডলারের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে দেশটিকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেন রুজভেল্ট৷

এর মধ্যে অনেকবারই সৌদি-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা ছড়িয়েছে, কিন্তু এই চুক্তির বরখেলাপ করেনি কোনো পক্ষই৷ পরবর্তী দশকগুলিতে তেলের চাহিদা যতই বেড়েছে, মার্কিন ডলারের চাহিদাও বেড়েছে তরতর করে৷ বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যম হয়ে ওঠে মার্কিন ডলার৷

এখনও মোটামুটি একই অবস্থানেই আছে মার্কিন ডলার৷ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ-এর হিসেব মতে বিশ্বের মোট রিজার্ভের প্রায় ৬২ শতাংশই সংরক্ষিত আছে ডলারে৷ বাকি অংশের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ আছে ইউরোতে এবং ইয়েন ও ব্রিটিশ পাউন্ডে সংরক্ষিত আছে ৫ শতাংশ রিজার্ভ৷

বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মার্কিন ডলার৷ বিশ্বজুড়ে লেনদেনের ৮৫ শতাংশই হয়ে থাকে ডলারে৷

মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভও ডলারের নেতৃত্ব ধরে রাখার নীতিই ধরে রেখেছে এবং পর্যাপ্ত তারল্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে, যাতে বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলারের কর্তৃত্ব ঠিক থাকে৷

ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক৷ বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ দর হারিয়েছে লিরা৷ এর ফলে বিশ্বের ১৮তম বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশটি আরও মারাত্মক সংকটে নিমজ্জিত হতে যাচ্ছে৷ এর ধাক্কা এসে লাগছে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশ, এমনকি ইউরোপের মার্কেটেও৷

ডলারের তারল্য বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে৷ যেকোনো সময় ডলার দ্রুত বিনিময় করা যায় বলে এটিকে তারা একটি নিরাপদ মুদ্রা বলে মনে করে থাকেন৷

কিন্তু এর বিপরীত দিকও রয়েছে৷ কোনো বিপদের গন্ধ পেলে সবাই ডলারের দিকেই ছুটে যায়৷ কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতির বড় সব ধাক্কার উৎস বেশিরভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রেই হয়ে থাকে৷ ২০০৭-০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের সময়ও একই ঘটনা ঘটেছিল৷

অর্থনীতিবিদ ব্যারি আইখেন গ্রিন এই অবস্থাকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি ‘নিদারুণ সুবিধা` হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷ কিন্তু এই মুহূর্তে ডলারের কোনো বিকল্পও তিনি দেখতে পাচ্ছেন না৷ ডলারের সম্ভাব্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপের ইউরো এবং চীনের ইউয়ান নিজেরাই অনেক সমস্যায় আছে৷ আইখেনগ্রিন বলছেন, ইউরোর ওপর রাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, অন্যদিকে ইউয়ানের ওপর রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ অনেক বেশি৷

অর্থাৎ, বড় ধরণের সংকটের মুহূর্তে ইউরোকে সমর্থন দিয়ে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার মতো একক কোনো সরকার নেই৷ অন্যদিকে, চীনের ইউয়ান বাজারের গতিপ্রকৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ না হয়ে দেশটির সরকারের ইচ্ছে অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়৷

তথ্যসূত্র: ডয়েচে ভেলে।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি