ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মোবাশ্বের ও সাবেরকে একহাত নিলেন পাপন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:১৬, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১১:৪০, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ ও কাউন্সিলর তালিকাকে অবৈধ বলার ব্যাপারে অবশেষে মুখ খুললেন বিসিবির বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এ দুটো বিষয়ে তিনি বিসিবির সাবেক সভাপতি ও লিগ্যাল নোটিশদাতা মোবাশ্বের হোসেনকে একহাত নিলেন।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিসিবি কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার বর্তমান পর্ষদকে নিয়ে লিগ্যাল নোটিশ ও চিঠির তীব্র প্রতিক্রিয়ায় সাবেক সভাপতি ও নোটিশদাতাকে `ভন্ড` বলেও অ্যাখ্যায়িত করেন তিনি।

বিসিবির গঠনতন্ত্র-সংক্রান্ত এক মামলায় গত ২৬ জুলাই দেওয়া আপিল বিভাগের রায় নিজেদের পক্ষে দাবি করে আগামী ২ অক্টোবর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও বিশেষ সাধারণ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ। এ মামলার বাদী স্থপতি মোবাশ্বের কদিন আগে সাধারণ সভা ও বিশেষ সভাসহ বোর্ডের সব কার্যক্রম বন্ধের জন্য বিসিবিকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ২০১২ সালে সংশোধিত বিসিবির গঠনতন্ত্র এবং সে অনুযায়ী করা কাউন্সিলর তালিকাকে অবৈধ উল্লেখ করে এজিএম না করতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসানকে চিঠি দিয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী।

এসবের জবাবে নাজমুল হাসান আজ জানিয়েছেন, এ দুটি ঘটনায় তিনি মোটেও বিচলিত নন, ‘এই গঠনতন্ত্রটা (২০১২ সালে সংশোধিত) অবৈধ, এটা কোথায় বলা হয়েছে? কোনো রায়ে তো উল্লেখ নেই। ক্রিকেটে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এটার দায়িত্ব এখনো আমাদের হাতে। যত দিন থাকবে, তত দিন অগ্রযাত্রা ধরে রাখার চেষ্টা করব। যদি কেউ প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করে, তাতে আমরা বিচলিত নই। আমরা কোনো বেআইনি কিছু করব না এটা নিশ্চিত।’

সাবের হোসেনের এজিএম না করার বিষয়ে পাপন বলেন, ‘এজিএম যথাসময়ে হবে। এ নিয়ে আদালত থেকেও কিছু বলা হয়নি। একজন চিঠি দেবেন, একজন উকিল নোটিশ পাঠাবেন, আর তাতেই আমরা বন্ধ করে দেব? বন্ধ করলে এর প্রভাবটা কি হবে সেটা দেখেছেন? ১০ তারিখে আইসিসির বোর্ড মিটিং। আমরা ৮ মিলিয়ন থেকে যে ১৬ মিলিয়ন ডলার পাব, সেই সিদ্ধান্ত হবে এই মিটিংয়ে। ওখানে (এজিএম না হলে) আমাদের ঢুকতেই দেবে না। যদি বলেন অ্যাডহক কমিটি করবে, আইসিসি সেটাও অনুমোদন করবে না। ক্রিকেটের অগ্রযাত্রা তারা বন্ধ করতে চায়।’

 ‘মোবাশ্বের হোসেনের দেওয়া লিগ্যাল নোটিশের পেছনে কে? সাবের হোসেন চৌধুরী কি কলকাঠি নাড়ছেন পেছন থেকে?’ এমন প্রশ্নে পাপনের দৃঢ় জবাব, `অবশ্যই। উনি ছাড়া আর কে আছেন! আমার তো জানা আছে। এটা প্রথম থেকেই আমরা জানি। এটা উনিই করাচ্ছেন।’

তিন দিনের মধ্যে নোটিসের জবাব না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করেন মোবাশ্বের হোসেন। আর তাতেই খেপে যান পাপন।

তিনি বলেন ‘দুটো চিঠি এসেছে। একটা চিঠি এসেছে সাবের হোসেন এমপি, ওনার কাছ থেকে। আর একটা লিগ্যাল নোটিশ এসেছে।’ দেশের ক্রিকেটকে ধ্বংস করতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমনটা করা হচ্ছে। ওনারা যে বিষয়ে মামলাটা করেছেন বা যেটা চাচ্ছেন তা হলো ২০০৮ এর গঠনতন্ত্র, সেটাকে ওনারা ধরে নিচ্ছেন ভ্যালিড। সেটার আলোকে যেন নির্বাচনটা হয়। প্রথম কথা হচ্ছে ওনারা দুজনের কেউই ২০০৮ এর কাউন্সিলর না। ওই গঠনতন্ত্রে যদি নির্বাচন হয় তাহলে তারা নির্বাচনে আসছেন না। ওনাদের কিন্তু বোর্ডে আসার বা বোর্ড পরিচালনার কোনো ইচ্ছা নাই।’ বলেই প্রশ্ন রাখেন পাপন, ‘তাহলে কেন করছেন?’

উত্তরটাও দেন নিজেই, ‘গত চার বছরে ছেলেরা ভালো খেলেছে। এখানে আমি তো কোনো ক্রেডিট নিচ্ছি না বা আমাদের বোর্ডের কথা বলছি না আমি। তারা সত্যি ভালো খেলেছে। এগুলো তো সাফল্য। এখন ওনাদের তো আমার কিছু বলার নেই। আমি এসব ব্যাপারে কথাই বলতে চাই না। আপনাদের জানা উচিৎ ওনাদের উদ্দেশ্যটা কি। মূলের বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করেন। এরা যেটা চাচ্ছে তা খুব সাধারণ। এই অগ্রযাত্রাটাকে বন্ধ করতে। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দেশে ও বিদেশে ছোটো করা। এছাড়া কিচ্ছু না।’

তাহলে কি ভুল ব্যাখ্যা করছেন মোবাশ্বের হোসেন, সাবের হোসেনরা? পাপন বলে যান, ‘সাবের হোসেন চৌধুরী এর আগে আমাকে একটা চিঠি দিয়েছিলেন যে কেন এজিএম করি না। মোবাশ্বের সাহেবকে আমি টকশোতে কয়েকবার বলতে শুনেছি `এজিএম করে না, এজিএম করে না`। দেখলেন তো!’ আরো স্পষ্ট উচ্চারণে পাপন বলে দেন,  ‘এগুলো ভণ্ডামী। এগুলো আমার পছন্দ না। এই যে আমরা এজিএম ডাকলাম সাথে সাথে তারা সেটা বন্ধ করতে হুলস্থুল লাগিয়ে দিলেন। ওদের উদ্দেশ্য কিন্তু এসব কিছু না। উদ্দেশ্য অন্য। দেশের মানুষের জানা উচিৎ।’ 

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১ মার্চ গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছিল বিসিবি। তবে সেটাকে অনুমোদন দেয়নি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। পড়ে কিছু সংশোধনী এনে ওই বছরের নভেম্বরে সংশোধিত গঠনতন্ত্র তৈরি করে। এ কারণেই ডিসেম্বরে এনএসসির সংশোধিত এ গঠনতন্ত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন বিসিবির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত ইউসুফ জামিল বাবু ও মোবাশ্বের হোসেন। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি এনএসসির সংশোধিত গঠনতন্ত্র অবৈধ সে মামলার রায় দেয় হাইকোর্ট। পরের দিন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে এনএসসি ও বিসিবি। গত ২৬ জুলাই বিসিবির গঠনতন্ত্র সম্পর্কিত আপিলের রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। রায়ে উল্লেখ ছিল, বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধন এনএসসি না, থাকবে বিসিবির হাতেই। পাশাপাশি ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দেওয়া হাইকোর্টের রায়কেও সঠিক বলেছেন। হাইকোর্টের সে রায়ে এনএসসির সংশোধিত গঠনতন্ত্রকে অবৈধই বলা হয়েছিল।

ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি