ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

যাকাতের অর্থে মওকুফ হবে আয়কর

প্রকাশিত : ১৫:৩৮, ২৯ মে ২০১৮ | আপডেট: ১০:৩৩, ৩১ মে ২০১৮

ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অন্যতম। ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ যাকাত ব্যবস্থা চালু হয়। রাষ্ট্রের দরিদ্র ব্যক্তিদের কল্যাণে ধনীদের প্রদেয় এ যাকাত ব্যবস্থা বিশ্বের কোনো কোনো দেশে বাধ্যতামূলক, কোনো কোনো দেশে প্রচলিত ধারা, আবার কোনো কোনো দেশে একেবারেই নেই।

শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে যাকাত ব্যবস্থা নেই,  সেখানে আছে বিভিন্ন ধরণের কর। সৌদি আরবে আবার যাকাত থাকলেও কর নেই। আর বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের করের পাশাপাশি আছে যাকাত দেওয়ারও ব্যবস্থাও। তাই সরকারের কোষাগারে কর প্রদানকারী অনেকের জিজ্ঞাসা, যে ব্যক্তি সরকারকে আয়কর দিচ্ছে, সে কেন আবার যাকাত দেবে? তবে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে ১৯৮২ সালে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেট। গেজেটে যে পরিমান সম্পদের উপর যাকাত দেওয়া হবে সে পরিমান সম্পদ আয়করের হিসেব থেকে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ গেজেটের যাকাত ফান্ড অর্ডিনেন্স-১৯৮২ এর ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদের আয়কর মওকুফ কোটেশনে বলা হয়ছে, ‘ইনকাম ট্যাক্স অ্যাক্ট ১৯২২’ অনুযায়ী যে কোনো ব্যক্তি যাকাত ফান্ডে যে পরিমান সম্পদের উপর যাকাত দিবে, সে পরিমান সম্পদ তার আয়করের হিসেবে থেকে বাদ যাবে। শুধু তাকে সরকারি যাকাত ফান্ডের রশিদ প্রদর্শন করতে হবে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসলামী ফাউন্ডেশনের হালাল সনদ ও যাকাত ফান্ড বিভাগের পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, আমাদের দেশে অনেকেই জানেন না যে, যাকাত দিলে আয়করের হিসেবে থেকে বাদ দেওয়া হয়। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির যদি ১০ লাখ টাকা সম্পদের মধ্যে ৪ লাখ টাকা সম্পদের যাকাত দেন, তবে তার আয়কর দেওয়ার সময় মাত্র ৬ লাখ টাকা সম্পদের উপর যাকাত দিলেই হবে। বাকি ৪ লাখ টাকা সম্পদের জন্য যাকাত দিতে হবে না। সেক্ষেত্রে  ফান্ডের রশিদ প্রদর্শন করলেই হবে। 

মুসলিম আইন অনুযায়ী, প্রতি বছর ব্যয় নির্বাহের পর কোনো মুসলিমের কাছে যদি উদ্বৃত্ত সম্পদ থাকে তাহলে সেখান থেকে তাকে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত দিতে হবে। অন্যদিকে আয়কর হচ্ছে ব্যক্তি বা সত্ত্বার আয় বা লভ্যাংশের উপর প্রদেয় কর। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর আওতায় কর বলতে অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রদেয় আয়কর, অতিরিক্ত কর, বাড়তি লাভের কর, এতদসংক্রান্ত জরিমানা, সুদ বা আদায় যোগ্য অর্থকে বুঝায়। অন্যভাবে বলা যায় যে, কর হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বসাধারণের স্বার্থে রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে প্রদত্ত বাধ্যতামূলক অর্থ।

ইসলামী ফাউন্ডেশনের যাকাত বোর্ড হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই মোল্যা বলেন, সরকারি যাকাত ফান্ডে যাকাত দেওয়ার ব্যাপারে অনেকের অনীহা ও ভুল ধারণা আছে। যার কারণে আমাদের যেভাবে যাকাত আদায় হওয়ার কথা সেভাবে হয় না। যেমন যাকাতের অর্থ যে আয়কর থেকে মওকুফ পাওয়া যায় এটা অনেকে জানে-ই না। অনেকে মনে করেন যাকাত ফান্ডের অর্থ সঠিক খাতে বন্টন হয় না। সত্যিটা হচ্ছে- এখানে যাকাত দিলে পুরোটাই বণ্টন করা হয় যাচাই-বাছাই করেই।

ফাউন্ডেশনের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে আর্তমানবতার সেবায় আমরা ৩ কোটি ১৭ লাখ ৭ হাজার ৩৬০ টাকা আদায় করি। যার পুরোটাই ১২টি খাতে ব্যয় করেছি। ব্যয়ের খাতগুলির মধ্যে দেশের ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে যাকাত দেওয়া হয় ১ কোটি ৩২ লাখ ৩ হাজার ৬৮০ টাকা, যাকাত বোর্ড শিশু হাসপাতালে গরীব রোগীদের মধ্যে ওষুধ বিতরণ করে ১০ লাখ টাকার, সেলাই প্রশিক্ষণার্থী দু:স্থ নারীদের যাকাত ভাতা দেওয়া হয় ৫২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, সেলাই প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী মুসলিম দু:স্থ নারীদের সেলাই মেশিন কিনতে ব্যয় হয় ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, দু:স্থ প্রতিবন্ধী পুনর্বাসনে ৫ লাখ টাকা, দু:স্থ পুরুষদের কর্মসংস্থানে ১৬ লাখ টাকা, দু:স্থদের যাকাত ভাতা ১০ লাখ টাকা, দু:স্থ নওমুসলিম স্বালম্বিকরণে ৪ লাখ টাকা, দু:স্থ ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তিতে ১৫ লাখ টাকা, দু:স্থ রোগীদের চিকিৎসা সহায়তায় ২৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬৮০ টাকা, ৩টি পার্বত্য জেলায় দু:স্থদের জন্য আর্থিক সহায়তায় ২ লাখ ১০ হাজার, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ ও দু:স্থদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন ২৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয় করা করা হয়।

যাকাত বোর্ডের কার‌্যক্রম নিয়ে যাকাত ফান্ড বিভাগের পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, গতবার আমাদের ৩ কোটি টাকা যাকাত আদায় হয়েছে। এবার সেটি আরও বাড়বে নি:সন্দেহে। কারণ এবারই প্রথম আমরা যাকাত আদায়কারী যেকোনো ব্যক্তির জন্য ১০ শতাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। তাতে এলাকার বিভিন্ন মক্তবে মাসিক সামান্য সম্মানিপ্রাপ্যরাও যাকাত সংগ্রহে এগিয়ে আসবেন। তারা ১০ শতাংশ পাওয়ার প্রত্যাশায় এগিয়ে আসলে আমাদের নতুন করে প্রায় ৮০ হাজার লোক যাকাত সংগ্রহের কাজে যোগ হবে। তাছাড়া সরকারি যাকাত ফান্ডে যাকাত দিতে আমরা উপজেলা পর্যায়ে মাইকিং, বেনার, ফেস্টুন, সেমিনার ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করছি। তাতে এবার যাকাত আদায়ে বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করছি।

/ এআর /

 

 

 

 

 

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি