ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ নিরাপত্তা পরিষদে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৫৫, ১৫ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৬:৫৯, ১৯ মে ২০১৮

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় ও সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখে যাওয়ার পর সোমবার ওয়াশিংটনে পরিষদের এক বৈঠকে এই আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত ক্রমবর্ধমান মানবাধিকার সংকট নিরসনে সত্যিকার পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পরিষদে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রস্তাব গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের কারণেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিলম্ব হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে মিয়ানমার।

গত বছরের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার অভিযোগে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ওপর অমানুষিক অত্যাচার করে ওই দেশের সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ আর অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানামর কর্তৃপক্ষ যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে আসলেও সম্প্রতি সরেজমিনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখে গেছেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা।

জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেছেন, আমরা সবাই রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের শিকার হওয়ার কথা শুনেছি যা ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবেই বিবেচনা করা যেতে পারে। এবার নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা নিজের চোখে দেছেন কী সংকট তৈরি করা হয়েছে। আর সে কারণেই এখন পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই।

নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্ভোগের প্রত্যক্ষ বিবরণ শুনেছেন জানিয়ে নিকি হ্যালি বলেন, রাখাইন রাজ্যের সংকট ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যক্ষ করা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের জন্য সত্যিই কঠিন ছিল। এই সফরের অন্যতম মূল কারণ ছিল সংকট নিয়ে মিয়ানমার সরকারের চলমান নিস্পৃহতা। মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া বিচার করে দেখলে দেখা যাবে, এই সংকটে তারা তাদের ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

১৫ সদস্যের পরিষদে দ্রুত এমন একটি প্রস্তাব গ্রহণের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান হ্যালি যাতে বিশালাকার ও বাড়তে থাকা এই মানবিক ও মানবাধিকার সংকট সমাধানে সত্যিকার পদক্ষেপ নেওয়া যায়। তিনি বলেন, সেটাও একটি চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ পরিষদের কয়েকটি সদস্য দেশ নিজেদের স্বার্থজনিত কারণে এই ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রেখেছে। কেউ কেউ সফরের সময়েই পরিষদের ঐক্যকে অবজ্ঞা করে অপ্রয়োজনীয় সম্পাদনা করে বিবৃতিকে দুর্বল করেছেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি কারেন পিয়ার্স বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা ঘটেছে তার ব্যাপ্তি দেখে পরিষদের সব সদস্যই আঘাত পেয়েছেন। আর পরিষদের সবাই ব্যক্তিগত দুর্ভোগ, বিশেষ করে শিশুদের কথা শুনে তাড়িত হয়েছেন।

কারেন পিয়ার্স আরও বলেন, আমি মনে করি পরিষদের সদস্যরা সংকটের বিপুলতা দেখে হতবিহ্বল হয়েছেন। কারণ আপনি যেখান থেকেই দিগন্তের তাকান বা দাঁড়ান, শুধু শরণার্থীদেরই দেখবেন।

চীনের দূত বলেন, এই সফরের পর সংশ্লিষ্ট দেশগুলো সংকট সমাধানে পদক্ষেপ জোরালো করেছে। এর মধ্যে ঝুলে থাকা একটি সমঝোতা স্মারক শিগগিরই স্বাক্ষরিত হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশ সমাধান করবে। আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিৎ তা এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পরিস্থিতি উন্নয়নে মানবিক সহায়তা দেওয়া।

জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের দূত হাও ডো সুয়ান বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থামিয়ে রাখতে বাংলাদেশ অজুহাত তৈরি করছে। প্রকৃত ঘটনা বিকৃত করে তার দেশের মানহানি ঘটাচ্ছে বলেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন মিয়ানমারের দূত। রাখাইনে অপরাধের অভিযোগের তদন্তে নিজের সরকারের প্রতিশ্রুতি পুর্নব্যক্ত করে তিনি বলেন, বর্তমান সংকটের শুরু হয়েছে উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চেকপোস্টে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার কারণে।

মিয়ানমারের দূত আরও অভিযোগ করেন, এটা খুবই নিন্দনীয় দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী নিজেদের প্রতিশ্রুতি পুরণের পরিবর্তে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে ক্রমাগত অভিযোগ তৈরি করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মধ্যস্ততা করার পরিবর্তে মিয়ানমারের ওপর চাপ সর্বোচ্চ করাতেই বাংলাদেশ এমনটি করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশি দূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করার এটাই সবচেয়ে ভালো সময়। তিনি বলেন, যেভাবে এই সংকটের বিস্তৃতি ঘটেছে তাতে এটা পরিষ্কার যে, এই ইস্যুতে নিয়মিতভাবে নিরাপত্তা পরিষদকে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। রাখাইন রাজ্যের সংকট সামনে আনতে মিয়ানমার সরকার সময়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আসছে। মিয়ানমারের সেই প্রক্রিয়ায় স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সহায়তা দিতেই নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা উচিৎ।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি