ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

শীতে নাক, কান, গলার সমস্যা ও তার প্রতিকার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৪৬, ২৫ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৬:৪৮, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু

অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু

বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। প্রতি বছর ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। প্রকৃতিতে শীতের হাওয়া বইছে। আবহাওয়ার বিপর্যয়, পরিবেশ দূষণের কারণে শীতকালেও অনেক রোগ ব্যাধি দেখা দেয়। অনেক সময় শীতকালে নাক, কান, গলায় বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে। যেমন : সর্দি, কাশি, অ্যালার্জি, টনসিলে প্রদাহ, গলা ব্যথা ইত্যাদি।

একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) ‘দি ডক্টরস্’ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু।

প্রশ্ন : শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রকোপ বা মাত্রা বেড়ে যায়। এর মধ্যে নাক-কান-গলার সম্পর্কিত অনেক রোগের সংক্রমণ বাড়ে। আপনি বলবেন কি নাক কান গলার রোগগুলো শীতের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এ সময় বেশি দেখা দেয়?

উত্তর : শীতে সাধারণত সাইনোসাইটিস, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস (নাক দিয়ে পানি পড়া), অ্যালার্জির সমস্যা, টনসিলাইটিস, গলা বসে যাওয়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, কানের প্রদাহ বেড়ে যায়।

তবে একটা কথা বলতে চাই- আসলে তাপমাত্রা কোনো সমস্যা না। সাইবেরিয়াতেও কিন্তু মানুষ থাকে। সেখানে তাপমাত্রা মাইনাসে থাকে। আবার সৌদি আরবেও মানুষ থাকে। সেখানে কিন্তু ফোরটি প্লাস তাপমাত্রা থাকে।

যখনই ঋতু পরিবর্তন হয় অর্থাৎ গরম থেকে শীত আসতে শুরু করে এটা ক্ষতিকর একটা সময়।     

প্রশ্ন : এ সময়টাতে অনেকেই বলেন আমার টনসিল ফুলে যাচ্ছে। এটি কেনো হয়?

উত্তর : আমাদের শরীরের ভেতরে অর্থাৎ টনসিল, নাসিকা, গলা এই বিভিন্ন জায়গাতে অসংখ্য ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া থাকে। যখনই তাপমাত্রা কমে যায় তখন এগুলো বিকশিত হয়। এরপর ইনফেকশন তৈরি করে। সে কারণেই টনসিলাইটিসসহ নাক, কান, গলার এই সমস্যাগুলো হয়।

প্রশ্ন : টনসিলাইটিসের লক্ষণগুলো কি কি?

উত্তর : গলা ব্যাথা করে। রোগীর কাছে মনে হয় মাছের কাটা আটকে আছে। গলায় খোঁচা লাগে। এছাড়া বাইরে গ্রন্থি ফুলে যায়। হঠাৎ করে হলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে। ব্যাথাও বৃদ্ধি পায়। জ্বরও হতে পারে।

প্রশ্ন : টনসিলের ক্ষেত্রে চিকিৎসা কি?

উত্তর : আমরা এসময় এন্টিবায়টিক দিই। রোগী ও পাঠকদের জন্য বলবো- যদি এমন লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে সরাসরি এক চামচ লবন, এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে দিয়ে গলাটা ভালো করে রিংঝিং করতে হবে। সকালে, দুপুরে এবং রাতে ১৫ মিনিট ধরে করতে হবে। যদি ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে না কমে তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

এছাড়া এন্টিবায়টিক খেলে এগুলো কমে যায়। তবে এটি যদি বারবার হয় অর্থাৎ বছরে তিন বারের বেশি হয় তবে চিন্তার বিষয়। আসলে এর একটি মাপকাঠি আছে। অর্থাৎ দুই বছরে যদি তিন তিন ছয় বার হয় তাহলে আমরা অপারেশনে যাই।

কিন্তু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় আমরা একটা সিঙ্গেল অ্যাটাকেও অপরেশন অ্যাডভাইজ করতে পারি। যদি আমরা দেখি এটা এতো বড় যে বাচ্চার খাওয়ার সমস্যা হচ্ছে, নিশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে এবং এটা থেকে কানের বিভিন্ন  সমস্যা হচ্ছে তখন এই সিদ্ধান্ত নিই।

প্রশ্ন : শীতের এই সময়টাতে আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যায়।  অনেকেই বলে থাকেন এ সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। এটি কেন হয়ে থাকে?

উত্তর : আমরা যদি বিশ বছর বয়স পর্যন্ত হিসাব করি সারা দুনিয়ার প্রত্যেকটি ব্যাক্তিরই নাক দিয়ে একবার হলেও রক্ত যাবে। নাক দিয়ে রক্ত যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে ইডিওপ্যাথিক। ৯০% ক্ষেত্রে এটির কোনো কারণ নেই। তবে শীতকালে যে কারণে এটি বাড়ে তা হচ্ছে আমাদের নাকের মাঝখানে যে পর্দাটি থাকে, এটি হয় ডান দিকে অথবা বাম দিকে একটু বাকা থাকে। যদি বাম দিকে বাকা থাকে তাহলে সেদিক থেকে বাতাস জোরে যাবে। সম পরিমান যদি দুই দিক থেকে যায় তখন যেদিকের ছিদ্রটি ছোট সেই দিকে চাপ বেশি পায়। শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে নাকের ঝিল্লিও শুকিয়ে যায়। এ কারণে রক্তপাত হয়।  

 

প্রশ্ন : শীতের অন্য একটি সমস্যা হচ্ছে অনেকেই বলেন গলা বসে গেছে। এটি অনেকের ক্ষেত্রে স্থায়ী হয়। এটি কেনো হয়?

উত্তর : এটি সাধারণত ভাইরাসের কারণে হয়। যখনই ঠাণ্ডা লাগে, যখন আবহাওয়ার তারতম্য হয়, ঠাণ্ডা বাতাস যখন গলার মধ্যে ঢোকে তখন ভাইরাসগুলো ছড়িয়ে পড়ে। যেখান থেকে আমরা কথা বলি সেখানে ভোকাল কড আক্রান্ত হয়। অনেক সময় অ্যালার্জি বেড়ে যায়। সে কারণেও ভোকাল কড আক্রান্ত হতে পারে। নাকের নাসারন্ধ্র থেকে শুরু করে একেবারে লাঞ্চ পর্যন্ত একই ঝিল্লি। এর যেকোন জায়গায় অ্যালার্জির প্রকোপ হলে এটি সবজায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকেও হতে পারে।

প্রশ্ন : যাদের সাইনোসাইটিসের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় এ সময়টাতে বেশি বেড়ে যায়। তাদের ক্ষেত্রে আপনি কি বলবেন?

উত্তর : যাদের টনিক সাইনোসাইটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা, ধুলাবালি এবং অ্যালার্জি প্রকোপ বেড়ে গেলে ইডিমা হয়। নাকের যে ঝিল্লি, সাইনোসাইটিসেরও একই ঝিল্লি। এটি আলাদা কিছু না। তাই আগে থেকে যদি প্রস্তুতি নেওয়া হয়, এন্টাজল জাতীয় ড্রপ নেয় তাহলে রোগী ভালো থাকতে পারবেন। আর যদি সাইনোসাইটিস হয়েই যায় সে ক্ষেত্রে বাষ্প টানতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে এন্টিবায়টিক খাবে। আর প্যারাসিট্যামল জাতীয় ওষধ দিনে তিনবার খেলে ব্যাথাটা একটু কম থাকবে।  

প্রশ্ন : শীতে অ্যালার্জির প্রকোপ, অ্যাজমার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে আপনার কি পরমর্শ?

উত্তর : শীতে দুটি কারণে অ্যালার্জি এবং অ্যাজমার প্রকোপ বেড়ে যায়। একটি হচ্ছে ঠাণ্ডা। অনেকের কোল্ড অ্যালার্জি থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠান্ডা অ্যালার্জিটাকে জাগিয়ে দেয়। আর একটি হচ্ছে- শীত কালে ধুলাবলির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। গরমের সময় থেকে দশগুণ বৃদ্ধি পায়। এই অ্যালার্জি কিন্তু নির্মূল হয় না। এটি নিয়ন্ত্রেণে রাখা যায়। যারা অ্যালার্জিতে ভোগেন তাদেরকে আমাদের প্রথমেই বলা উচিৎ আপনার অসুখ টা কি ধরণের এবং আপনি কি করতে পারেন!

আসলে অ্যালার্জির কোনো প্রতিকার নেই। অ্যালার্জি কন্ট্রোল করা যাবে। এটাকে নিয়ন্ত্রণরে মধ্যে রাখা যাবে। প্রথম কথা হচ্ছে তাকে চিহ্নিত করতে হবে যে- কি কারণে তার অ্যালার্জিটা হচ্ছে। কোন খাবার থেকে হচ্ছে, নাকি ধূলাবালি থেকে হচ্ছে, নাকি ঠাণ্ডা থেকে হচ্ছে। এটি খুঁজে পাওয়ার পর সেই হিসেবে পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি ধুলাবলি দিয়ে হয় তবে ধুলাবলি পরিহার করতে হবে। যদি ঠান্ডা থেকে হয় তবে ঠান্ডা যাতে না লাগে সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।

ঠাণ্ডা যাতে না লাগে সেই বিষয়টিতে মানুষ আসলে পরিষ্কার না। যেমন বাতাস থেকে ঠাণ্ডা লাগে, সেরকম কিন্তু আমাদের খাবার থেকেও ঠাণ্ডা লাগে। আর একটা হচ্ছে আমরা যখন বাইরে থেকে ঘরে আসি আর সঙ্গে সঙ্গে এসি চালিয়ে দিই। এই যে তারতম্য ঘটে এ কারণেও ঠাণ্ডা লাগতে পারে। বাইরে থেকে যদি সরাসরি গোসলে চলে যাই তাহলেও ঠাণ্ডা লাগতে হবে।

এ জন্য আমার পরমর্শ হচ্ছে সব সময় আপনাকে গরম থাকতে হবে। গরম খাবার, পানি, গরম থাকতে হবে গোসলের ক্ষেত্রে, ঘরে পরিবেশ যাতে ডাম্প না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। আরও একটা বিষয় হচ্ছে যদি অ্যালার্জিটা কাপড় থেকে হয় তবে সুতি জাতিয় কাপড় পড়তে হবে।  

অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু

বিভাগীয় প্রধান নাক, কান, গলা বিভাগ

স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল

শ্রুতিলেখন : সোহাগ আশরাফ।

/ এআর /

 

 

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি