ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সংজ্ঞা হারিয়েই বরং ভালো থাকেন ফাতেমারা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২২:৫৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দশ মাস দশদিন গর্ভে ধারণের পর সন্তানকে পৃথিবীর আলোয় নিয়ে এসেছেন মা। নানা যন্ত্রণা সহ্য করে তিল তিল করে বড় করে তুলছেন বুকের ধনকে। এমন সময় যমদূত হয়ে আসে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। চোখের সামনে শিশু সন্তানকে, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আগুনে পুড়িয়ে মারতে দেখে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন ফাতেমা। কিন্তু লাখো ভাগ্যাহত মানুষের মাঝে হারিয়ে যায় তার বুকের মানিক। পাগলের মতো ছুটতে থাকেন এদিক-ওদিক। বৃষ্টিভেজা মাটিতে গড়াগড়ি দিতে থাকেন। তবু মেলেনা সন্তানের দেখা। এক পর্যায়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে থাকেন কাদামাটিতে।  হয়ত ওইটুকু সময়ে বরং ভালো থেকেছেন ফাতেমা।

স্বামীকে মিয়ানমারে রেখে সন্তানকে কোলে করে গত বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন ফাতেমা বেগম। সন্তান নিয়ে কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। রোববার দুপুরে লাখো মানুষের ভিড়ে শিশু আজিজুলকে হারিয়ে ফেলেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সন্তানের দেখা পাননি তিনি। সন্তান হারানোর বেদনা সইতে না পেরে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় গড়াগড়ি করে আহাজারি শুরু করেন এই মা।

বুক চাপড়াচ্ছেন আর বিলাপ করছেন। তার আশপাশে অনেক শিশু জড়ো হলেও নিজের সন্তানকে দেখছেন না তিনি। কোনোভাবেই তার কান্না থামেনা। একপর্যায়ে বৃষ্টির পানিতে গড়াগড়ি করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি।

শনিবার আরেক মা রাজিয়া বেগম তার সন্তানকে খুঁজতে খুঁজতে দিশেহারা হয়ে পড়েন। কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া এই মা জানেন না তার সন্তান কোথায় হারিয়েছে। কিছুক্ষণ আগেও নাড়িছেঁড়া সন্তানটি তার সঙ্গেই ছিল। কিন্তু ক্যাম্পের বাইরে খেলতে গিয়ে হারিয়ে যায় তার সন্তান। সন্তান হারিয়ে তিনি নির্বাক হয়ে পড়েছেন। ক্ষুধা তাকে স্পর্শ করে না। সন্তান হারানোর শোকে ত্রাণ নিতেও যান না তিনি। তার সামনে শুধুই সীমাহীন অন্ধকার।

সন্তান হারানোর কথা জানিয়ে মংডু জেলার মাছছিল্লা পাড়ার আব্দুর রহিমের স্ত্রী খায়রুন বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়ন ও ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে ছেলেকে নিয়ে এখানে আসি। স্বামী ওপারে থেকে গেছে। কিন্তু এখানে এসে দু’দিন যেতে না যেতেই সন্তানকে হারিয়ে ফেলছি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাইনি।

সন্তান হারিয়ে অন্তত মায়ের পক্ষে এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকা অর্থহীন। কোথায় আছে তাদের বুকের মানিক, কি খাচ্ছে, কোথায় ঘুমাচ্ছে— এসব নানা চিন্তা ভর করে তাদের মনে। শোকে শোকে পাথর হয়ে যাচ্ছেন সন্তানহারা রোহিঙ্গা মায়েরা।

শিশু হারানোর এ ঘটনা ঘটছে অহরহ। কেউ ত্রাণের খোঁজে এদিক-ওদিক ছোটাছটি করছেন আবার কেউ সন্তান খুঁজে ফিরছেন। কিন্তু কোথাও দেখতে পান না সন্তানের প্রিয় মুখ।

স্থানীয়রা বলছেন, চোখের সামনে নৃশংস কায়দায় স্বজনকে হত্যা, জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে দেখেছেন অসংখ্য রোহিঙ্গা। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এমন অনেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। এর উপর সন্তান হারানোর বেদনায় অনেকে পাথর হয়ে গেছে। অনেকেই ঠিক মতো খাচ্ছেন না। ত্রাণের প্রতিও তাদের কোনো আগ্রহ নেই। দুর্বিষহ জীবন নিয়ে কোনোমতে দিন কাটছে তাদের।

ডব্লিউএন

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি