ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে ঘুরে আসুন বাংগুরী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৫৫, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৫:৫৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাংগুরী গ্রাম। ঢাকার ধামরাই উপজেলা ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার সীমান্তঘেঁষা সহোদরা গ্রাম। প্রতিটি মৌসুমে প্রকৃতির রূপ বদলের সাক্ষী হতে নিজের রং-রূপও বদলে নেয় এই গ্রাম। বৈশাখের আম্রমুকুলের ঘ্রাণে মাতোয়ারা, কৃষ্ণচূড়ার লালে সাজে। মাঠ সবুজ হয়ে ওঠে বোরো ধানের সবুজে। শীতে সেই মাঠ পরে সরষের হলুদ শাড়ি। সেই হলুদ বসন থেকে বাতাসে ভেসে আসে সুগন্ধ। ঘুম ভাঙ্গে পাখির কিচির মিচির আর কলতানে।

প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার রূপ প্রকৃতি  ফিরে আসতে চান বারবার এমন কোন গ্রামে, যেখানে লক্ষ্মীপেঁচা ডাকে শিমুলের ডালে, সন্ধ্যার বাতাসে ওড়ে সুদর্শন, সবুজ করুণ ডাঙা জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা থাকে। পায়ে লাল ঘুঙুর পরা কিশোরী হয়ে কলমীর গন্ধভরা জলে ভাসতে ভাসতে হাঁস হতে চান কবি। কার্তিকের নবান্নে কুয়াশার বুকে ভেসে ভোরের কাক, শালিক, ধবল বক কিংবা শঙ্খচিল হয়েই আবার ধানসিঁড়ির তীরে ফেরার ইচ্ছা সেই কবির। 

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও মন ভুলিয়ে দিত আজ আমরা তেমন এক সুনসান নীরব গ্রামের কথাই বলব। যেখানে প্রকৃতি তার সব সুন্দর নিয়ে বসে আছে পরিব্রাজকের মন জোগাতে।

সেই সময় কোনো এক অচিন পরিব্রাজকেরও ইচ্ছে করে ওই হলদে জমিনে লুটিয়ে পড়ে ভোরের শিশিরভেজা সরষে ফুলের রেণু মাখতে।

এখনকার রূপ ভিন্নতর। সময়টা ভাদ্রের শরৎ হলেও বর্ষা এখনো প্রকৃতিকে ছেড়ে যায়নি। চারদিকে জল থই থই করে । রাস্তাঘাট জলের নিচে। মাঝির বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দে এগিয়ে চলে নৌকো চিরচেনা গ্রামের দিকে। অর্ধডুবন্ত বাড়িঘরের সম্মুখে খড়ের গাদা, তার পাশেই জল ছুঁই ছুঁই গরুর গোয়াল, পাশেই যোগাযোগের বাহন কোষা নৌকা।

নয়নজুড়ানো এমন দৃশ্য দৃষ্টির সীমানায় আসতেই মননে মগজে শৈশব ভিড় করে। বর্ষার ভরা জলে কবি বন্দে আলীর মিয়ার-  ‘আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান/ আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাঁচাইছে প্রাণ/ মাঠ ভরা ধান তার জল ভরা দিঘি/ চাঁদের কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি!’-ছড়া কাটতে কাটতে দিনমান ডুবসাঁতারে চোখ লাল করে ফেলার পর সন্ধ্যায় মায়ের বকুনিতে রাত নামে।

বর্ষায় মিষ্টি পানির মৎস্য আহরণ দেখবেন না তা তো হয় না।যার জালে যত বেশি মাছ, তার মুখে হাসি তত চওড়া। চাইলে এই গ্রামে ঢোকার পথেই মাথাভাঙ্গা বিলের পাশের কোনো এক বাড়িতে অর্ডার দিয়ে কাচালঙ্কা সহযোগে ফুটি, মলা, খলসে, কই, টেংরা, মেনি, কাকিলা বা বড় রুই-কাতলার মুচমুচে ভাজাও খেয়ে নিতে পারবেন।

গ্রামের পশ্চিম পাশের সীমানায় বর্ষায় সৃষ্ট অস্থায়ী জলাধারে। দেখলে মনে হবে যেন এক গহীন  বিল। খানিক দূরে কলাগাছের ভেলায় করে শামুক কুড়োচ্ছে গ্রাম্যবালা। আশপাশে শাপলা ফুলের মৌনতা। শাপলা সাধারণত সকালে ফোঁটে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। হয়তো কড়া রৌদ্রের ছোঁয়াচ ওদের ভালো লাগে না। প্রকৃতিও এখানে দারুণভাবে ধারণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ রং।

বর্ষার জল সুধায় সেজে ওঠে বিস্তীর্ণ সবুজ ধানক্ষেত। জেলের নৌকার ছইয়ে থাকে উদীয়মান সূর্যের লাল রং। আর এভাবেই জনপদে আঁকা হয়ে যায় আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ। মেঘের ক্যানভাসে জল, নৌকা, শাপলা, ধানের সবুজ পত্রপল্লব ও বিমুগ্ধ করবে যেকোনো পরিব্রাজককে ।বর্ষার সবুজ আর শরৎ মেঘের মেলবন্ধন দেখতে চাইলে ছুটতে হয় এমন গ্রামের স্বর্গেই। আর কণ্ঠে তখন নিশ্চয় অনুরণন তুলবে নির্মলেন্দু গুণের ‘হুলিয়া’-

দীর্ঘ পাঁচ বছর পরিবর্তনহীন গ্রামে ফিরছি আমি

সেই একই ভাঙাপথ, একই কালো মাটির আল ধ’রে গ্রামে ফেরা

আমি কতদিন পরে গ্রামে ফিরছি।

এমন মনোমুগ্ধকর গ্রাম যেখানে কান পাতলেই মেলে বাতাসে আন্দোলিত গাছের শব্দ, ভাটিতে জল বয়ে চলার শব্দ, মেঘের গর্জন, পাখপাখালির ডাক। এসবের মিলিত শব্দ  যেন সংগীত হয়ে বাজে।

 আর দৃষ্টি জুড়ায় অসীম আকাশ। স্বচ্ছ সফেদ জলরাশি ও শস্য সবুজে গ্রামীণ মানুষের যাপিত জীবন দেখতে হলে বর্ষার গ্রাম একবার হলেও দেখা চাই।

এমন গ্রাম রবিঠাকুরের মতো করে পায়ে ধরে আপনাকে ঘরের বাহির না করতে  পারে?

 তাহলে কবি জসীমউদ্দীনের ‘নিমন্ত্রণ’ থাকল ভ্রমণপিপাসু আপনাকেও :

 তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়

 গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;

 মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি

 মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,

 মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে,

ভায়ের স্নেহের ছায়...

যাতায়াত

ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন বা টাঙ্গাইলের দূরপাল্লার যেকোনো বাসে কালিয়াকৈর নামতে হবে। ভাড়া নেবে ১০০ টাকার মতো।কালিয়াকৈর থেকে শ্রীফলতল, বলিয়াদি, দেওয়াইর বাজার হয়ে সাত কিলোমিটার গেলেই বাংগুরী গ্রাম। বাসস্ট্যান্ডে দুই আড়াইশ টাকায় সিএনজিও পাওয়া যাবে। আর ব্যক্তিগত পরিবহনে বাসের রুট ছাড়াও ঢাকার ধামরাই থেকে ধানতারা বাজার হয়ে বাংগুরী গ্রামে যাওয়া যাবে।

বর্ষার জলে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ার কারণে এই সময় কালিয়াকৈর থেকে বংশাই নদীপথে নৌকাই হতে পারে উপযুক্ত বাহন। পানি নেমে গেলে প্রাইভেট কার বা সিএনজিতে পৌঁছানো যাবে। ঢাকা থেকে এই গ্রামের দূরত্ব মাত্র ৬৫ কিলোমিটারের মতো। কাজেই ভ্রমণ শেষে ঢাকা ফেরা যাবে অথবা থাকতে চাইলে কালিয়াকৈরের সোহাগপল্লী, রাঙামাটি ওয়াটার ফ্রন্ট বা আনন্দ রিসোর্টের মতো আধুনিক মানের বেশ কয়েকটি রিসোর্টেও পরিবার পরিজন নিয়ে রাত্রি যাপন করতে পারবেন ।

কেআই/ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি