ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পর্ব-২

স্মার্টফোন-ইন্টারনেটে বাড়ছে পর্নগ্রাফি ও নানা অপরাধ

প্রকাশিত : ১৮:৩৭, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২১:২৯, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

আধুনিক যুগে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেটের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এসবের অপব্যবহার হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে সামাজিক শৃংখলা। দিনে দিনে পর্নোগ্রাফি হয়ে উঠেছে খুবই সহজলভ্য। আর জঙ্গি কার্যক্রমের নিরাপদ যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট। স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের মায়াজালে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর-তরুণ-যুবকসহ সব বয়সী মানুষ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবারিক মূল্যবোধের অভাব, সামাজিক অবক্ষয় এবং প্রযুক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণহীনতাই এসবের কারণ। এমন কোনো অ্যাপস যদি আবিস্কার করা সম্ভব হয় যে, টিনএজাররা স্মার্টফোনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জিনিস দেখতে পারবে, অপ্রয়োজনীয় জিনিস ছুঁতে পারবে না, তবেই এ সামাজিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

পর্নগ্রাফি

ইন্টারনেট আর স্মার্টফোনের সুবাধে পর্নগ্রাফি এখন এতটাই নাগালে এসেছে যে, কিশোর-তরুণ থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সবাই এর দর্শক। তবে কিশোররাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ জানার অতিরিক্ত কৌতুহল থেকেই অনেকে ঝুঁকছে পর্নগ্রাফির দিকে।

পিছিয়ে নেই বয়স্করাও। সমাজ সচেতন বলে পরিচিত রাজনীতিবিদরাও এদিকে ঝুঁকে পড়ছেন। একটি ব্রিটিশ পত্রিকায় খবরে বলা হয়েছে যে, গেল বছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ছয় মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা অধিবেশন চলাকালীন সময়েই রোজ গড়ে ১৬৫ বার পর্নোগ্রাফিক সাইটে ঢু মারেন।  

ইন্টারনেটে ভিডিও দেখার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবও এখন মুক্ত নয় পর্নগ্রাফি থেকে। কেউ যদি ভিডিও দেখার এসব ওয়েবসাইটে পর্নো ভিডিও নাও দেখে থাকেন তবুও অনেক সময় এসব সাইট থেকেই ‘সাজেশন’ আকারে অশ্লীল ভিডিও’র লিংক দেওয়া হয়। তখন বুঝে বা না বুঝে সেই লিংকে ক্লিক করলেই দেখতে পাবেন এমন অশ্লীল, আপত্তিকর ভিডিও। আর এসব ভিডিও খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে কিশোর এবং তরুণদের মাঝে।

অনেকেই মনে করেন যে, পর্নগ্রাফি শুধু ছেলেরাই দেখে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক নারীও পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত। আর এসব ভিডিও দেখেই দিন দিন অনৈতিক-অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে তরুন-তরুণীরা। ভালোবাসার মত আত্মার সম্পর্ক এখন অনেকের কাছে শুধু শারীরিক সম্পর্কের আরেক নাম।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামাল ইটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ছোটদের মানসিক বিকাশে স্মার্টফোন-ইউটিউবের এমন ব্যবহার খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ইউটিউব বা সেক্সটিউবগুলোতে পর্ন ভিডিওগুলো দেখে শিশুকাল থেকেই তাদের মধ্যে এক ধরনের ভোগবাদি সত্ত্বা তৈরি হয়। তাদের নৈতিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নারী পুরুষের একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটু গভীরে গেলে আমরা দেখতে পাব যে, একটি ছেলে একসঙ্গে একাধিক মেয়ের সঙ্গে প্রেমে লিপ্ত। আবার একটি মেয়েও একাধিক ছেলের সঙ্গে প্রেমে জড়িত। এ বিষয়গুলো কেন হচ্ছে? এ বিষয়গুলো হচ্ছেই আমাদের অসতর্ক এবং অসচেতন ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে।’

তাহলে এর সমাধান কী? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. মোহিত কামাল বলেন, ‘একটা নিয়ন্ত্রণ যদি কোথাও রাখা যায় তাহলে এর সমাধান সম্ভব। এমন কোনো অ্যাপস যদি থাকে যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে যে, টিনএজাররা প্রয়োজনীয় জিনিস দেখবে, অপ্রয়োজনীয় জিনিস তারা দেখবে না, তাহলে ভালো হয়। আবার যেমন শিশুরা দিনে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবে কিন্তু রাতে পারবে না। নির্দিষ্ট সময় ব্যবহার করতে পারবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পারবে না। এমন যদি ব্যবস্থা করা যায় তাহলে অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব।’  

ইন্টারনেটে জঙ্গিবাদ

স্মার্টফোন যে শুধু আমাদের জন্য অদৃশ্যমান এবং সুদূরপ্রসারী ক্ষতি করছে তাই নয়। এর নেতিবাচক ব্যবহারের কুফল হাতেনাতেই পাচ্ছি আমরা। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ইন্টারনেটে যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক এস্টেট বা আইএস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা তাদের সদস্যদের সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে। তাদের নেটওয়ার্ক এতটাই মজবুত যে, বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সে ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক ভাঙতে আজও ব্যর্থ। এমনি বিশ্বজুড়ে তাদের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমও চলে এই অনলাইন মাধ্যমেই।

এমনই এক জঙ্গির নাম তাহাজুল ইসলাম (২২)। পুলিশ জানায়, একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে রাতের শিফটে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করত তাহাজুল। রাতে সজাগ থেকে দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে ইউটিউবে ভিডিও দেখতেন তিনি। এভাবে ভিডিও দেখতে দেখতেই একদিন তিনি পেয়ে যান কিছু ধর্মীয় ভিডিও’র সন্ধান। ধর্মীর প্রতি অনুরাগ থেকেই সেগুলো নিজের ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করতে থাকেন। ঘটনার ধারাবাহিকতায় একদিন আমন্ত্রণ পান আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য হওয়ার।

পুলিশকে তাহাজুল জানায় যে, তার জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত হওয়ার কোনো ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য ছিল না। মাত্র নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করা তাহাজুল নিজের অজান্তেই এসব ভিডিও দেখতে দেখতে একটা ঘোরের মধ্যে আটকা পরে যায়। নিজের প্রবল ইচ্ছা না থাকলেও হাটতে শুরু করেন এ পথে।

তবে তথ্য-প্রযুক্তির ফাঁদ ব্যবহার করেই আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্প্রতি তাকে আটক করেছে।

সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম ডিভিশনের প্রধান উপ কমিশনার আলিমুজ্জামান ইটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অনলাইনের মাধ্যমে জঙ্গিরা তাদের কর্মকাণ্ডের একটি বড় অংশ পরিচালনা করে। আমরা নিয়মিতভাবে এদিকে নজর রাখছি। তবে কেউ কেউ আছে যারা না বুঝে এসবের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। বলা যায়, ইন্টারনেটের সচেতন ব্যবহার না করার কারণেই এমনটা হচ্ছে। তাই আমাদের সবারই উচিত ইন্টারনেটের সচেতন এবং ইতিবাচক ব্যবহার করা।’

এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রথম পর্বটি পড়ার জন্য ক্লিক করুন এখানে

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি