ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

২৪ বছর পর যেভাবে নিখোঁজ মেয়ের সন্ধান পেলেন বাবা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:০৩, ৪ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১৬:০৪, ৪ এপ্রিল ২০১৮

দুই যুগ ধরে সন্ধান করার পর চীনে এক পিতা তার কন্যাকে খুঁজে পেয়েছেন। ২৪ বছর আগে মেয়েকে হারানোর পর তার খোঁজে হন্যে হয়ে গিয়েছিলেন পিতা ওয়াং মিংকিং। কোন একদিন পথে মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে এই আশায় বেছে নিয়েছিলেন ট্যাক্সিচালকের পেশাও। তিনি স্বপ্ন দেখতেন যে চেংডু শহরে গাড়ি চালাতে চালাতে হয়তো একদিন তিনি তার হারিয়ে যাওয়া মেয়েকেই যাত্রী হিসেবে তুলে নিয়েছেন।

অবশেষে এবছরের শুরুর দিকে কন্যার সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়ে যায়। তবে রাস্তায় গাড়ি চালানোর সূত্রে নয়, তাদের মধ্যে যোগাযোগ হয় ইন্টারনেটের কল্যানে। অনলাইনে                                                                                                                                   পিতার একটি পোস্ট দেখে মেয়েটি নিজেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।

গতকাল মঙ্গলবার তারা আবার একত্রিত হয়েছেন। ওয়াং তার মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন- বাবা তোমাকে ভালোবাসে।

অবিশ্বাস্য এই খবরটি চীনের সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে এই ঘটনায় আনন্দ উৎসবও করেছেন। ওয়াং এর কন্যা কিফেং হারিয়ে যায় যখন তার বয়স ছিলো মাত্র তিন বছর।

ওয়াং সংবাদ মাধ্যমে জানান, তিনি এবং তার স্ত্রী লিও দেংগিং রাস্তায় ফল বিক্রি করতেন। একদিন মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে স্বামী স্ত্রী রাস্তার পাশে একটি স্টল বসিয়ে ফল বিক্রি করছিলেন। একজন ক্রেতার কাছে ফল বিক্রি করা শেষে তিনি হঠাৎ দেখলেন যে তাদের মেয়ে কিফেং তাদের সঙ্গে নেই।

মেয়ের খোঁজে তারা তাদের শহরে ও আশেপাশের এলাকায় বছরের পর বছর ঘুরে বেড়িয়েছেন। পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। পোস্ট দিয়েছেন অনলাইনে। এই দম্পতি তাদের মেয়েকে খুঁজে পাবেন এই আশায় তারা কখনও চেংডু শহর ছেড়ে যাননি। তারা ভেবেছিলেন কিফেং যদি রাস্তা খুঁজে বাড়িতে ফিরে আসে। কিন্তু সেরকমটা হয়নি।

ওয়াং তার এই খোঁজ বাড়াতে ২০১৫ সালে যোগ দেন একটি ট্যাক্সি কোম্পানিতে। তার গাড়ির কাঁচে তিনি মেয়ের সন্ধান চেয়ে একটি বিজ্ঞাপন লাগিয়ে দিয়েছিলেন। যেখানে যেতেন সেখানেই তিনি কিছু কার্ড বিতরণ করতেন যেখানে কিফেং এর ব্যাপারে কিছু তথ্য লেখা ছিলো। যেসব যাত্রীকে তিনি তার গাড়িতে তুলতেন তাদের কাছেও তিনি এই কার্ড বিলি করতেন।

এই দম্পতির আরও একটি মেয়ে আছে। কিফেং-এর কোন ছবি ছিলো না এই পরিবারটির কাছে। সে কারণে পিতা কিফেং লিফেলটে তার অন্য মেয়ের ছবি ব্যবহার করতেন। কারণ তাদের চেহারায় মিল ছিলো। তার এই অভিনব কৌশল চীনা সংবাদ মাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, হয়তো একদিন আমার মেয়ে আমার গাড়িতেই উঠবে।

এর মধ্যে চীনা পুলিশ বেশ কয়েকজন নারীকে চিহ্নিত করে যারা কিফেং হতে পারে বলে তারা ধারণা করেছিলেন। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা গেছে সেরকম কিছু নয়। কিন্তু এই সন্ধানে বড় ধরনের অগ্রগতি ঘটে গত বছরের শেষ দিকে। পুলিশ বিভাগের একজন শিল্পী পিতা ওয়াংকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। বড় হয়ে যাওয়ার পর কিফেং দেখতে কেমন তার একটা ছবি এঁকে দেন তিনি। তারপর সেই ছবিটি ছড়িয়ে দেওয়া হয় অনলাইনে। তখন চীনেরই হাজার মাইল দূরের একটি জায়গায় কাং ইং নামের এক নারী এই ছবিটি দেখতে পান। তার সঙ্গে ছবিটির এতো মিল দেখতে পেয়ে তিনি চমকে যান।

এবছরের শুরুর দিকে তিনি ওয়াং এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার সঙ্গে কথা বলে দেখতে পান ওয়াং এমন কিছু চিহ্নের কথা বলছেন যার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। যেমন তার কপালের ছোট্ট একটি দাগ। আরও বলেন, তার মেয়ে যখন কাঁদতো তখনই তার বমি হতো। তারপর খুব দ্রুত ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এবার ফল হলো ইতিবাচক। ওয়াং শেষ পর্যন্ত ২৪ বছর আগে হারিয়ে ফেলা তার মেয়েকে খুঁজে পেলেন।

গত সোমবার তারা একটি ভয়েস ম্যাসেঞ্জার অ্যাপের মাধ্যমে কথা বলেন প্রথমবারের মতো। ওয়াং বলেন, এখন থেকে বাবা তোমার সঙ্গে। কোন কিছু নিয়ে আর তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। বাবা তোমাকে সাহায্য করবে।

গতকাল মঙ্গলবার তারা সত্যিকার অর্থেই মিলিত হলেন। উত্তরের ঝিলিন প্রদেশ থেকে বিমানে করে উড়ে এলেন চেংডুতে। সঙ্গে ছিলো তার স্বামী, পুত্র ও কন্যাও। পরে কাং ইং সাংবাদিকদের কান্না মেশানো কণ্ঠে বলেন, সবাই বলতো আমার কোন মা নেই। কিন্তু আছে।

ওয়াং বরেন, গত ২৪ বছর ধরে আমি কি ধরনের আশা, হতাশা আর কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছি সেটা আমি আপনাদের বলতে পারবো না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা একে অপরকে খুঁজে পেয়েছি।

চীনা সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, কাং ইং তার পিতার বাড়ি থেকে মাত্র ১২ মাইল দূরের একটি শহরে বেড়ে উঠেছেন। কিন্তু এর বাইরে তিনি আর কিছুই বলেননি।

সূত্র: বিবিসি

একে//  এআর

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি