ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

ইমোজি: যা না বললেই নয়

সেলিম জাহান

প্রকাশিত : ১৯:০৪, ১১ জুলাই ২০২০

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহান কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে বিশ্বব্যাংক, আইএলও, ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে পরামর্শক ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বই- বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি, অর্থনীতি-কড়চা, Freedom for Choice প্রভৃতি।

ইদানীং দেখছি অবয়ব পত্রে নানান জনের লেখায় মন্তব্যের জায়গায় অনেকেই যা ব্যবহার করেন, তার ইংরেজী নাম Emoji -সম্ভবত: জাপান থেকে এর উৎপত্তি। অবয়ব পত্রে ‘Like’ দেয়ার প্রচলন বেশ কিছু দিনের, তবে Emoji’র প্রাদুর্ভাব সাম্প্রতিক সময়ের। যদি অনুমতি দেন, তবে কয়েকটা কথা বলি।

আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি যে, Emoji’র ব্যবহার কখনো কখনো অপরিশীলিত, অযথাযথ ও অশোভন হতে পারে। সব ক’টি বিষয়ের উদাহরণ দেয়ার দরকার নেই, তবে শেষ বিষয়টির একটি উদাহরণ দেই। মাত্র গতকাল তাঁর ১৩৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আমি জ্ঞানতাপস ড: মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র ওপরে একটি স্মৃতিমূলক লেখা লিখেছিলাম। এমন কোন লেখা নয়, তবু সেটা বহুজনের হৃদয় স্পর্শ করেছে। কি সুন্দর সুন্দর মন্তব্য লিখেছেন কত জন, কেউ কেউ স্মৃতিচারণ করেছেন, নতুন নতুন তথ্য তুলে এনেছেন, অনেকেই ছোট্ট করে লিখেছেন, ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’। ভারী ভালো লেগেছে।

কিন্তু সেই সঙ্গে খুবই খারাপও লেগেছে, যখন দেখেছি- মন্তব্যের জায়গায় অনেকেই Emoji ব্যবহার করেছেন, যার কিছু কিছু অশোভন। ড: শহীদুল্লাহর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘একটি বিড়ালের স্যালুট’ কিংবা ‘একজন মার্কিন সৈন্যের স্যালুট’কে আমি ঐ জ্ঞানতাপসের প্রতি অসম্মানের প্রতীক বলেই আমি মনে করি। এটুকু বোধ আমাদের থাকা প্রয়োজন। ঐ সব Emoji ব্যবহার করে আমরা কি মনে করি, আমরা খুব সৃজনশীল, খুব চৌকস?

মন্তব্য করতেই হবে, এমন কোনও কথা নেই। কিন্তু ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’ এটুকু লিখতেই যদি আমাদের অনীহা থাকে, কিংবা আমাদের ব্যস্ততা যদি তার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে ছোট্ট করে ‘like’ দিলেই যথেষ্ট। সেটা করারও ইচ্ছে বা সময় যদি না থাকে, তাহলে কোন মন্তব্য না করলেও হয়। কিন্তু অনভিপ্রেত Emoji সেঁটে কারো প্রতি অশ্রদ্ধা না দেখানোই শ্রেয়।

সবার জ্ঞাতার্থে বলে রাখি, মন্তব্যের জায়গায় ‘অনভিপ্রেত’ Emoji পাঠালে আমি তা সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলবো। ইদানীং সময়ে ‘স্যালুটরত এক মার্কিন সৈন্যের’ Emoji খুবই জনপ্রিয় বলে দেখি। জানিয়ে রাখি, ঐ দেশটির প্রতি কিংবা সে দেশের সেনাবাহিনীর প্রতি আমার আগ্রহ বড় কম। সুতরাং তার ওপর ক্রমাগত Emoji আমাকে আনন্দিত করার বদলে তা আমাকে বিরক্তির উপাদান হয়ে দাঁড়াবে।

শেষের কথা বলি। আমি Emoji ব্যবহারের বিরুদ্ধে নই, যদিও তার ব্যবহারের ব্যাপারে আমি অত্যুৎসাহীও নই। ওতে আমার দিলচসপী নেই। কিন্তু ওটা ব্যবহার করার সময়ে আমরা যাতে আমাদের বিচার-বুদ্ধি, বোধ-উপলব্ধি, সংবেদনশীলতা দ্বারা চালিত হই। ওটার যত্রতত্র ব্যবহার যেন একটি রোগে পরিণত না হয়। এটুকুই শুধু আমার অনুরোধ ও আবেদন।

এনএস/ 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি