ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

এরশাদের সম্পদ কে কতটুকু পাচ্ছেন?

প্রকাশিত : ১৮:৩৭, ১৪ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ১৮:৫২, ১৪ জুলাই ২০১৯

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কত টাকার সম্পত্তি রেখে গেছেন সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই কারও কাছেই; কোন সম্পত্তি তিনি কাকে দিয়ে গেছেন, তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। তবে মৃত্যুর পর তার বিপুল সম্পদের মালিকানা কে হচ্ছেন এমন প্রশ্ন জোরালো হয়ে পড়েছে। অনেকের-ই জিজ্ঞাসা- আসলে কে হবেন সম্পদের মালিক তার পুত্র এরিক এরশাদ না তার প্রথম স্ত্রী রওশান এরশাদ। না অন্য কেউ।

সাবেক এ রাষ্ট্রপতির পরিবারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাবেক এই রাষ্ট্রপতি তার সম্পদের একটি অংশ ট্রাস্টে দান করেছেন এবং বাকিটা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়ে গেছেন বলে তার ।

রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ‘গরিব দেশের ধনী প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে পরিচিত এরশাদ ৯০ বছর বয়সে রোববার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান। সেনাপ্রধান থেকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে নয় বছর দেশ শাসনের পর ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের ক্ষমতা হারানোর পরও বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্ব নিয়ে ছিলেন এরশাদ।

আওয়ামী লীগের গত সরকারে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের মর্যাদায় থাকার পর একাদশ সংসদে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন তিনি, তবে অসুস্থতার জন্য এই দায়িত্বে সক্রিয় হতে পারেননি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৪ এপ্রিল নিজের স্বাক্ষর জাল ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কার কথা জানিয়ে বনানী থানায় জিডি করেছিলেন এরশাদ।

জিডিতে তিনি বলেন, “তার বর্তমান ও অবর্তমানে স্বাক্ষর নকল করে পার্টির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, দলের বিভিন্ন পদ-পদবী বাগিয়ে নেওয়া, ব্যাংক হিসাব জালিয়াতি এবং পারিবারিক সম্পদ, দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য হাতিয়ে নেওয়া ও আত্মীয়-স্বজনদের জানমাল হুমকির মুখে রয়েছে। এ কারণে তিনি মনে করেন অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে কেউ যেন এমন অপরাধ করতে না পারে, সে বিষয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দরকার।”

থানায় জিডি করার পাঁচ দিন পর গত ২৯ এপ্রিল রাতে বনানীতে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এরশাদের কক্ষের লকার ভেঙে ৪৩ লাখ টাকা লুট হয়ে যায়।

এরশাদের উত্তরাধিকারদের মধ্যে রয়েছেন প্রথম স্ত্রী রওশন এরশাদের ছেলে রাহগির আল মাহি (শাদ এরশাদ), দ্বিতীয় স্ত্রী বিদিশার ছেলে শাহতা জারাব (এরিক এরশাদ)। বিদিশার সঙ্গে এরশাদের বিচ্ছেদ ঘটলেও রওশন স্ত্রী হিসেবে ছিলেন।

নিজের গড়া দল জাতীয় পার্টিতে উত্তরাধিকার হিসেবে ভাই জি এম কাদেরকে মনোনীত করে যান এরশাদ। দলে জ্যেষ্ঠ কো চেয়ারম্যান পদে রওশনও রয়েছেন।

কত সম্পদ ছিল এরশাদের?
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এরশাদ নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন, তাতে তিনি তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১ কোটি ৭ লাখ টাকা।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, সংসদ সদস্য, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানী ও ব্যবসা থেকে তার এই অর্থ আসে বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এছাড়া ব্যবসা থেকে তার আয় দেখান দুই লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা।

এরশাদ বছরে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা বেতন-ভাতাদি বাবদ পেতেন। এরমধ্যে রাষ্ট্রীয় বিশেষ দূত হিসেবে সম্মানী ১৯ লাখ ৪ হাজার ৬৯৬ টাকা; সংসদ সদস্যের সম্মানী ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানী ৭৪ লাখ ৭১ হাজার ১০ টাকা।

এরশাদ তার গুলশান ও বারিধারায় দুটি ফ্ল্যাটের দাম দেখিয়েছিলেন এক কোটি ২৪ লাখ টাকার কিছু বেশি।

এর বাইরে ৭৭ লাখ টাকা দামের একটি দোকান রয়েছে তার। স্ত্রীর গুলশানের দুটি ফ্ল্যাটের দাম ছয় কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর বাইরে বসুন্ধরায় একটি ফ্ল্যাট এবং ঢাকার পূর্বাচল ও রংপুরে ৫০ লাখ টাকার বেশি দামের দুটি জমি রয়েছে স্ত্রীর নামে।

ছয় মাস আগে নির্বাচনী হলফনামার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এরশাদের হাতে নগদ অর্থ ছিল ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৮ টাকা।

এছড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এরশাদের জমা ছিল ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬ টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের তিন একাউন্টে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৮৩১ টাকা; ৮ লাখ ৫৮ হাজার ২১ টাকা এবং ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩২ টাকা।

দুই একাউন্টে সোনালী ব্যাংকে ১৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯৯৫ টাকা ও ২২ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৩ টাকা; ব্র্যাক ব্যাংকে ৭৩ হাজার ৩৪৩ টাকা এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে ২৭ হাজার ৫২৪ টাকা ছিল এরশাদের।

এর বাইরে শেয়ারে অর্থের পরিমাণ ছিল ৪৪ কোটি ১০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও এফডিআর ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা; ডিপিএস ৯ লাখ টাকা।

এরশাদের ৫৫ লাখ টাকা দামের ল্যান্ড ক্রুজার জিপ, ১৮ লাখ টাকা দামের নিশান কার এবং ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের আরেকটি ল্যান্ড ক্রুজার জিপ রয়েছে।

নিজের কোনো স্বর্ণালঙ্কার না থাকলেও ৩০ হাজার টাকা দামের ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৩০ হাজার টাকার আসবাব ছিল তার।

ব্যবসায় মূলধন আছে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১৫৪ টাকা; জমির বিক্রি করে রয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

এরশাদের কোনো কৃষি ও অকৃষি জমি নেই। তবে ৭৭ লাখ টাকা দামের দোকান; বারিধারায় ৬২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের ফ্ল্যাট এবং গুলশানে ৬২ লাখ টাকা দামের আরেকটি ফ্ল্যাটের কথা হলফনামায় লেখেন তিনি।

স্ত্রীর নামে ৩৩ লাখ টামা দামের রংপুরে এবং ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দামের জমি রয়েছে ঢাকার পূর্বাচলে।

পূর্বসুত্রে পাওয়া বসুন্ধরায় ফ্ল্যাট রয়েছে এরশাদের। গুলশানের দুটি ফ্ল্যাটের একটির মূল্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা; আরেকটির দাম ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

হলফনামায় এরশাদ ঋণ দেখিয়েছেন ইউনিয়ন ব্যাংকে ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৬৮৯ টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৬ টাকা।

যা যা দান করেছেন
এরশাদ তার সম্পত্তির কতটুকু কাকে দান করেছেন, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য জাতীয় পার্টির নেতারাও জানাতে পারেননি; তার পরিবারের সদস্যরাও এনিয়ে মুখ খোলেননি।

জাতীয় পার্টির একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন, পাঁচ সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে এরশাদ তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সেখানে লিখিতভাবে দান করেছেন। “তবে ট্রাস্টি বোর্ডে দান করা সম্পত্তির বর্ণনা দেননি এরশাদ, সেখানে শুধু দানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।”

দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা স্ত্রী রওশন ও ভাই জিএম কাদেরকে ট্রাস্টি বোর্ডে রাখেননি এরশাদ। বড় ছেলে শাদকে না রাখলেও ছোট ছেলে এরিককে বোর্ডে রেখেছেন এরশাদ। এছাড়াও বোর্ডে আছেন এরশাদের একান্ত সচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর খালেদ আক্তার, চাচাতো ভাই মুকুল ও তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার পর গত জানুয়ারি মাসে এরশাদ তার সমস্ত সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা করে দিয়েছেন বলে পার্টির আরেকজন নেতা জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, “এরশাদ তার বড় ছেলে শাদ এরশাদ, ছোট ছেলে এরিক, পালিত কন্যা জেবিন ও ভাই-ভাতিজার মধ্যে সম্পদ ভাগ করে দিয়েছেন।” এছাড়া কিছু সম্পত্তি দলের নামেও এরশাদ লিখে দিয়েছেন বলেও ওই নেতা জানান।

জার্তীয় পার্টির একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জানান, রংপুর সদরে কোল্ড স্টোরেজ ছাড়াও রংপুরের সব সম্পত্তি তার ভাই জি এম কাদের ও এক ভাতিজাকে লিখে দিয়েছেন এরশাদ।

গুলশান-২ এর বাড়িটি অনেক আগেই স্ত্রী রওশনকে দিয়েছেন তিনি। বারিধারার ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদের একমাত্র ছেলে এরিক এরশাদের নামে দেওয়া হয়েছে। পালিত ছেলে আরমানকে দিয়েছেন গুলশানের অন্য একটি ফ্ল্যাট।

ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির প্রধান কার্যালয় এবং রংপুরের জাতীয় পার্টি অফিস দলকে দান করেছেন।

গুলশান বনানী এলাকায় কয়েকটি মার্কেটে এরশাদের বেশ কিছু দোকান থাকলেও সেগুলো কাকে লিখে দিয়ে গেছেন সে বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য জানা যায়নি।

টিআর/আরকে


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি