ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

কেমন ছিলেন শেখ কামাল?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:১১, ৫ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ১৬:১৩, ৫ আগস্ট ২০২০

বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল। মাত্র ২৬ বছরের জীবনসীমায় দেশ ও সমাজের জন্য যা করে গেছেন তা নিছক কর্ম নয় বরং সেটি তরুণদের উজ্জীবিত হওয়ার মূলমন্ত্রও বটে। ক্ষণজন্মা এই মহীয়ান পুরুষের আজ ৭১ তম জন্মদিন। ১৯৪৯ সালের আজকের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের সংসার আলোকিত করে পৃথিবীতে শুভ আগমন ঘটে শেখ কামালের।

৭১- এর ২৫ মার্চ ভয়াল কালরাতে পাকহানাদার বাহিনী যখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ করে, ঠিক সেই সময় দেশকে স্বাধীন করার জন্য ধানমন্ডির বাড়ি থেকে পাড়ি জমায় রণাঙ্গনে। প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে এসে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এমজে ওসমানীর এডিসি হিসেবে কাজ করেন। তরুণ বয়সে শুধু মুক্তিযুদ্ধে গিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি বরং একজন তরুণের জীবন কতখানি কর্মময় হতে পারে তা শহীদ শেখ কামালের সংক্ষিপ্ত জীবন বিশ্লেষণে আমাদের কাছে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

আসুন জেনে নেয়া যাক কেমন ছিলেন তিনি-

শেখ কামালের প্রতিভার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শেখ কামাল একদিকে যেমন ক্রীড়া সংগঠক ছিল; সাংস্কৃতিক জগতেও তার প্রতিভা রয়েছে। স্পন্দন শিল্পগোষ্ঠী সে সৃষ্টি করেছে। থিয়েটারে সে অভিনয় করতো, গান গাইতো, সেতার বাজাতো। খেলাধুলায় তার সবচেয়ে বড় অবদান। ধানমন্ডি এলাকায় কোনো ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল না। সে উদ্যোগ নেয় এবং ওই অঞ্চলের সবাইকে নিয়ে আবাহনী গড়ে তোলে। মুক্তিযুদ্ধের পরেও এই আবাহনীকে শক্তিশালী করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা মানুষের মধ্যে এই যে বহুমুখী প্রতিভা। এটা সত্যিই বিরল ছিল। পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে তার ভূমিকা সেটাও অপরিসীম।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শহীদ শেখ কামাল ছিলেন দূরদর্শী ও গভীর চিন্তাবোধের অধিকারী এবং নির্লোভ, নির্মোহ। যিনি ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে থেকেও ছিলেন অতি সাধারণ।

তিনি বলেন, শেখ কামাল বুঝতে পেরেছিলেন রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন চাইলে রাজনীতির সংস্কৃতি বদলাতে হয়। রাজনীতির সংস্কৃতিকে টেকসই করার জন্য শেখ কামাল সংস্কৃতির রাজনীতির উপর গুরুত্বরোপ করেছিলেন। ক্রীড়া ও সংস্কৃতিকে তিনি গ্রহণ করেছিলেন আত্মপোলব্ধির সোপান হিসেবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশ বিভাগের মাধ্যমে সৃষ্ট সদ্য পাকিস্তান রাষ্ট্রে শেখ কামালের জন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রে শোষণ বঞ্চনা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালির স্বাধীনতা আদায়ের সংগ্রামের পরিক্রমা আর শেখ কামালের বেড়ে ওঠা ছিল সমান্তরাল। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে তিনি খুব কাছ থেকেই বাঙালী জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামের বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, শেখ কামাল শুধু দেশে নয় বিশ্বের রাজনৈতিক নেতার ছেলেদের জন্য উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পুত্র হয়েও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ৬৯-এ পাকিস্তানি সামরিক জান্তা সরকার ধর্মীয় উগ্রতার পরিচয় দিয়ে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করে। শেখ কামাল তখন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের সংগঠিত করেন এবং রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি খ্যাতিমান শিল্পী জাহিদুর রহিমকে দিয়ে বিভিন্ন সভা ও অনুষ্ঠানে গাওয়ানোর উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধুর সন্তান তিনি, জন্ম থেকেই তার ধমনীতে নেতৃত্বগুণ আর জাতীয়তাবোধের চেতনা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই বিশ্বকবির গান গেয়ে অহিংস প্রতিবাদের অসাধারণ উদাহরণ রেখেছেন।

শেখ কামাল বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, তার মতো ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠক, সাংস্কৃতিক সংগঠক, মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রনেতা এ ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করেনি।  

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, শেখ কামাল যেমন ছিলেন মেধাবী, তেমনি ছিলেন একজন বড় মাপের সাংস্কৃতিককর্মী। ক্রীড়াঙ্গনেও তার অবদান ছিলো বিশাল। অসামান্য সাংগঠনিক দক্ষতার অধিকারী শেখ কামাল মুক্তিযুদ্ধেও সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। শেখ কামাল আসলে এক অনন্য মানুষ ছিলেন। অনেক গুণে গুনান্বিত এই মানুষটির বিচরণ যেমন ছিলো ক্রীড়াঙ্গনে, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে।

তিনি বলেন, শেখ কামাল জাতির পিতার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও একেবারেই সাধারণ জীবনযাপন করতেন। সবার সঙ্গে তিনি যেভাবে মিশতেন এবং সুসংগঠিত করতেন, আজ এত বছর পরেও কিন্তু তিনি আমাদের মধ্যে চিরঞ্জীব-চিরভাস্বর হয়ে আছেন। এক মিনিটের জন্যও যারা তার সান্নিধ্যে এসেছেন তারা এখনও তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোর স্মৃতিচারণ করেন।
এসএ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি