ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

খবর নেই জামালপুরের সেই ডিসির 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২৭, ৩১ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ১৯:২৮, ৩১ আগস্ট ২০১৯

যৌন কেলেঙ্কারীতে ফেঁসে যাওয়া জামালপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের আর কোনো খবরই পাওয়া যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ে অফিস না করে একরকম আত্মগোপনেই চলে গেছেন তিনি। এমনকি তার স্বজনদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ নেই বলে জানা গেছে। 

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিজ কার্যালয়ের নারী অফিস সহকারীর সঙ্গে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে সমালোচনায় পড়েন জেলার এ সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওএসডি) মর্যাদায় মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করে। 

সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। তাকে যেহেতু কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি, তাই কাজ হচ্ছে নিয়মিত অফিস করা। মন্ত্রণালয়ের লাইব্রেরীতে রক্ষিত খাতায় তিনি নিয়মিত স্বাক্ষর করলেই হবে। কিন্তু তিনি তা করছেন না। ঢাকা এসে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট করে তিনি আর অফিসে হাজিরা দেন নি। তবে সূত্র জানায়, আহমেদ কবীরের সঙ্গে তদন্ত দলের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।

সূত্রটি জানায়, ওএসডি কর্মকর্তারা অফিসে আসলেন কি না, তা আসলে খোঁজ খবর নেওয়া হয় না। আর তিনি তো একটা বিশেষ কারণে ওএসডি হয়েছেন, তাই এনিয়ে আমরা বেশি খবর নিচ্ছি না।

অন্য একটি পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তাদের সঙ্গে আহমেদ কবীরের তেমন যোগাযোগ নেই। তিনি নিজের মতো করে আছেন।

জানা যায়, মন্ত্রণালয়ে যুক্ত হওয়ার পর অনেকটাই আত্মগোপনে চলে গেছেন আহমেদ কবীর। জামালপুরে দায়িত্বপালনকালে এই ডিসি অফিস চলাকালীন সময়ে ঐ নারীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। এমনকিওই সময় নিজ খাস কামড়ার দরজায় বসানো হয়েছিল লাল ও সবুজ বাতি। অবৈধ কাজ চলাকালে লালবাতি জ্বলে উঠতো।

গত রোববার আহমেদ কবীরকে ও এসডি করে পরিকল্পনামন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) মোহাম্মদ এনামুল হককে জামালপুরে নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তদন্তের পর জামালপুরের ওএসডি হওয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীরের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে জানিয়েছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। পাশাপাশি যে নারীর নাম এসেছে তাকেও তদন্তের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী।

গত ২১ আগস্ট ওএসডি হবেন এমন খবরে জনরোষ আতংকে রাতের আঁধারে জামালপুর ছেড়ে চলে আসেন আহমেদ কবির। বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শনিবার রাত ৩টায় জামালপুর ত্যাগ করে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন আহমেদ কবীর। এরপর থেকে তার কোন হদিসই যেন পাওয়া যাচ্ছে না। 

ভাইরাল হওয়া ঐ ভিডিওতে ডিসি আহমেদ কবীরকে তার নারী অফিস সহকারীর সঙ্গে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক করতে দেখা যায়। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড এবং ২৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের দুটি ভিডিওতেই জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরকে তার নারী অফিস সহকারীর সঙ্গে বেশ অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা গেছে।

গত ২২ আগস্ট মধ্যরাতে খন্দকার সোহেল আহমেদ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে ঘটনাটি ‘সাজানো’ বলে দাবি করেছেন জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর।

আহমেদ কবীরকে যে শুদ্ধাচার সনদ দেওয়া হয়েছিল তা কেড়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। গত বুধবার জামালপুরে যান এ ঘটনায় গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। এ সময় তারা ঐ নারী অফিস সহকারীকে জিজ্ঞাসাবাদও করে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট বিকেলে ‘খন্দকার সোহেল আহমেদ’ নামের একটি পাবলিক ফিগার ফেসবুক পেজ থেকে জেলা পর্যায়ের সর্বোচ্চপদধারী এই সরকারি কর্মকর্তা তার অফিসেই একজন নারীর সঙ্গে অবৈধ মেলামেশার এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়। ফেসবুক আইডি থেকে এটি ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ব্যাপক হারে নজরে আসতে থাকে ফেসবুক আইডি ব্যবহারকারীদের কাছে। এদিকে শুক্রবার ভোররাত থেকে রহস্যজনক কারণে ওই আইডির ওয়াল থেকে ভিডিও লিংকটি সরিয়ে নেয়ায় সন্দেহ আরো দানা বেঁধে উঠেছে।

এমন ভিডিও প্রকাশ পাওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। ৪ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে যে কক্ষটি দেখা যাচ্ছে সেটি জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের অফিস কক্ষে তার চেয়ারের ঠিক ডান পাশের ছোট একটি কক্ষ। ছোট এই কক্ষটিতে একটি ছোট খাট বসানো হয়েছে। কক্ষটি বেশ পরিপাটি দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটিতে পুরুষ ব্যক্তিটিই জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর। আর যে নারীকে দেখা যাচ্ছে তিনি এই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমেই সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া একই অফিসের একজন অফিস সহায়ক।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৭ মে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর জামালপুরে যোগদান করেন। যোগদানের কিছুদিন পর থেকেই তিনি তার অফিসের কক্ষের পাশে ছোট্ট একটি কক্ষে ধূমপান ও ব্যক্তিগত সরকারি গোপনীয় বৈঠকের জন্য কক্ষটি ব্যবহার করে আসছেন। সম্প্রতি ওই কক্ষে বিশ্রাম নেয়ার জন্য একটি খাট বসানো হয়েছে। তাতে বিশ্রাম নেয়ার মতো বালিশ, চাদর সবকিছুই আছে। ওই কক্ষে একাধিক নারীর যাতায়াতকে কেন্দ্র করে গোটা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত ওই কক্ষে একজন নারীর সঙ্গে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের অবৈধ মেলামেশার ভিডিওটি ভাইরাল হয়।

এমএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি