ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকা জেলার সেরা করদাতা কে এই তরুণ

সাভার প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৬:০৪, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

২০০৭ সালে লেখা পড়া শেষ করে ব্যবসার চিন্তা মাথায় ঢোকে তার। কিন্তু হাতে পুঁজি নেই। মায়ের কাছে ব্যবসার কথা বলতেই প্রথমে বিরোধিতা। পরে মা তিন লাখ টাকা হাতে ধরিয়ে দেন ছেলেকে। মায়ের দেওয়া সেই টাকা আর আর্শীবাদের উপর ভর করে পথচলা শুরু করেন তানভীর আহম্মেদ রুমান ভুঁইয়া নামের যুবক।

ছেলের বায়না মেটাতে নিজের সঞ্চয় থেকে ছেলেকে তিন লাখ টাকা দিয়েছিলেন মা। সেই ছেলেটি এখন ঢাকা জেলার সেরা করদাতা খেতাব অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, গত চার বছর ধরে সর্বোচ্চ কর পরিশোধের এই খেতাবটিও ধারাবাহিকভাবেই জমা হয়েছে তার ঝুলিতে!

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের তরুণ ব্যবসায়ী হিসেবে এবারও সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন তানভীর আহমেদ রোমান ভূইয়া। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাতে ঢাকার রেডিসন ব্লু হোটেলে তাকে এই সম্মননা স্বারক তুলে দেন সরকারের অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম. মোস্তাফা কামাল।

রোমান ভূইয়া ২০০৭ সালে মুঠোফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের প্রথম এক্সক্লুসিভ আউটলেট দিয়ে ব্যবসায় যাত্রা শুরু করেছিলেন। অনিশ্চিত ছিল ব্যবসার ভবিষ্যৎ। নিজেই সেবা দিতেন গ্রাহকদের। দিন-রাত পরিশ্রমই ছিল তার ব্যবসায়ে সফলতার চাবিকাঠি।

তখন কে জানতো তিনিই হবে এখনকার সেরা করদাতা ব্যবসায়ী?

ব্যবসা চালু করতে মাত্র তিন লাখ টাকা দিয়েছিলেন মা তমিছুন নেছা। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে তার ব্যবসা। মোবাইল নেটওয়ার্ক যত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ততই বাড়তে থাকে ব্যবসার পরিধি। ছেলের কঠোর পরিশ্রম আর ব্যবসার সফলতা দেখে এক বছর পর আরো ১০ লাখ টাকা পুঁজি দেন বাবা আলহাজ্ব ছফিল উদ্দিন ভূইয়া।

এই পুঁজি দিয়ে ২০০৮ সালে  জামগড়া এলাকাতেই গ্রমীনফোনের আর একটি নতুন আউটলেট চালু করেন রোমান ভূইয়া। এরপর দিন যতই গড়িয়েছে, ব্যবসা বেড়েছে ততই।

প্রথম বছরেই গ্রামীনফোনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেবা প্রদানকারী আউটলেট হয়ে ওঠে রোমানের আউলেট। এরপর এই অঞ্চলের গ্রামীনফোনের ডিষ্ট্রিবিউটরশীপ পেয়ে যান রোমান ভূইয়া।  

ব্যবসায় মুনাফা বাড়তে থাকলে অন্যন্য খাতেও বিনিয়োগ শুরু করেন তরুণ এই স্বপ্নবাজ ব্যবসায়ী। বর্তমানে তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে-বন্ধন ডিষ্ট্রিবিউশন এন্ড সাপ্লাইয়ার্স (ডিষ্টিবিউটর অব গ্রামীনফোন), প্রভাত হাউজিং লিমিটেড, গ্লোরী ডিষ্ট্রিবিউশন কর্পোরেশন (ডিষ্ট্রিবিউটর অব বিকাশ), নায়ফা ট্রেড বিডি লিঃ, শার্প স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক এবং নান ব্রিকসে কাজ করছে প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মী।    

ব্যবসাকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসার পথে নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে রোমান ভূইয়া বলেন, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বাপ-দাদার অনেক সম্পদ ছিল। তবুও এতটা সহজ ছিল না আমার নিজের পথচলা। হাল ছাড়িনি। প্রথম দিকে বেতনভুক্ত কর্মী ছাড়াই ব্যবসা সামাল দিয়েছি।

সকাল ৮ থেকে রাত ১২টা অবধি কাজ করেছি। দুপুরের দিকে আউটলেট বন্ধ করে কখনও ঘুমাইনি। এই সময়ের মধ্যে গ্রামীনফোনের কিংবা বাংলালিংয়ের প্রধান কার্যালয়ে ছুটে গেছি। ঢাকার যানজটে ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়েছি। তারপরও পরের দিন আবার আউটলেট খুলে সেবা দিয়েছি।

রোমান ভূইয়া বলেন, ব্যবসা বড় হতে থাকলে নিজেকে সামাজিক বিভিন্ন কাজ কর্মে নিয়োজিত করতেও কৃপনতা দেখাইনি। নিজের এলাকাতে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছি। কখনো সরকারের কর ফাকি দেয়ার চিন্তা করিনি।

ব্যবসা শুরুর পরের বছর থেকে আমি আয়কর দাতা হিসেবে রেজিষ্ট্রেশন করি। ব্যবসা যত এগিয়েছে, কর দেয়া ততই বাড়িয়েছি। ২০১৬ সালে ঢাকা জেলায় প্রথম সেরা করদাতা হিসেবে সম্মননা পাই।

এরপর ২০১৭, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালেও সেরা করদাতা নির্বাচিত হলাম। আমি মনে করি রাষ্ট্রের সঙ্গে কখনই বেঈমানী করা উচিত নয়। কখনই সম্পদের হিসেব গোপন রাখা উচিত নয়।
এআই/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি