ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

দুর্গা দুর্গতিনাশিনী

অনুপাল বিশ্বাস

প্রকাশিত : ১১:৩৮, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

মহালয়ার এক মাস পরে পুজো! এমনও হয়? এখন শুনছি, হয়! লোকে বলছে, এ বছর মহালয়ার পরে নাকি ‘মলমাস’ পড়েছে। পুজোও তাই দেরিতে। 

মাসের কী দোষ, বছরটাকে দেখুন। কোনও দিন ভেবেছিলাম, দিন কাটবে ঘরবন্দি হয়ে! নিতান্তই বাইরে বেরোতে হলে নাকমুখ ঢেকে, আরও সতর্ক হলে হাতে দস্তানা, মাথায় টুপি পরে। বাড়ি ফিরে নিজেকে, নিজের চশমা-ঘড়ি-জামাকাপড়-মোবাইলকে জীবাণুমুক্ত করার দীর্ঘ প্রক্রিয়া ... ভেবেছিলাম এমন?

তবু বন্ধু, রেডিয়ো জানে, আজ মহালয়া।

কালো যন্ত্রটা কোলে নিয়ে অনেক বাঙালিই এককালে বছরের ঠিক এই সময়টা নাগাদ দোকানে ছুটত। হাতে সময় নেই, অথচ রেডিয়োয় সিগন্যাল ধরছে না ঠিকঠাক, আওয়াজ অস্পষ্ট হয়েছে অব্যবহারে।  মহালয়ার ভোর চারটের আগে সেটি ঠিকঠাক বেজে না-উঠলে সর্বনাশ।  আবার এক বছরের অপেক্ষা। 

এখন অবশ্য যুগ বদলেছে। মোবাইলে ইউটিউব খুললেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ। যে দিন খুশি, যত বার খুশি। মজা হল এই যে, বেলা ৯টায় ধীরেসুস্থে জেগে ওঠা পাড়ার কলরবের মধ্যে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ আপনি শুনতেই পারেন। কিন্তু একটা শূন্যতা থেকে যাবেই। ঝাঁঝাঁ রোদ্দুরে চির-চেনা কণ্ঠে ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে...’ শুনেও মনে হবে না, পুজো আসছে! 

তাই বিশ্বাস করুন, মহালয়ায় আপনাকে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শুনতে হবে ভোর চারটের ঊষালগ্নেই। আর কেউ না-জানুক, রেডিয়ো জানে।

বাবা অ্যালার্ম দিয়ে উঠে পাতলা চাদরটা গায়ে জড়িয়ে বাইরের ঘরে এসে বসবে, যেখানে স্পিকারে-লাগানো মোবাইলটা রাখা, কিংবা ডায়নোসরের মতো একটা রেডিয়োই সই! মা তত ক্ষণে চায়ের জল চাপাবে। নাইট ডিউটি সেরে ঘরে ফেরা ছেলে ঠিক করবে, আপাতত ঘুমোবে না। মহালয়া শোনার পরে দেখা যাবে! ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’ শুরু হতেই ঘরে পিন-পতনের নৈঃশব্দ্য। বৌমাটি অবশ্য একটু পর থেকেই রেডিয়োর সঙ্গে গলা মিলিয়ে গুনগুন করবে। 

ভোর গড়াবে সকালের দিকে। গঙ্গার ঘাটে শুরু হবে তর্পণ। টিভির খবরে সেই ছবিও দেখা যাবে। বাণীকুমার-বীরেন্দ্রকৃষ্ণের বেতার চিরকালীন, তবু মহালয়ার বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজনে পাল্লা দিয়ে যায় টিভিও। 

কিন্তু কী হবে এই বছরে? দুনিয়া কাঁপাচ্ছে কোভিড অতিমারি। ভয় দেখাচ্ছে রোগ-মৃত্যু। কোথাও যাওয়ার নেই, কিচ্ছু করার নেই। প্রিয়জনের মুখ দেখা নেই। কী ভাবে হবে শারদোৎসব? প্যান্ডেলে অঞ্জলি দেওয়া, রাত জেগে ঠাকুর দেখার কী হবে, উৎসবের অঙ্গনে কতটা কাটছাঁট অপেক্ষা করছে, এখনও কেউ জানি না। 

তবে এটুকু সবাই জানি, এ বছর স্বাস্থ্যবিধির ভীষণ কড়াকড়ি জারি থাকলেও, পুরনো কিছু প্রিয় অভ্যাস বাদ দিতে হলেও বোধন, অঞ্জলি, সন্ধিপুজো থাকবে। মহালয়ার স্বপ্নের ভোর থেকেই যার সূচনা। এ বারের মহালয়ায় রেডিয়ো বা মোবাইল ঘিরে একটু দূরে-দূরেই না-হয় বসা যাবে। তবু প্রতি বছরের মতোই দেবীর আত্মপরিচয় দানের মন্ত্রে গায়ে কাঁটা দেবে সবার-

‘অহং রুদ্রেভির্বসুভিশ্চরাম্যহম্‌
        আদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ ।
অহং মিত্রাবরুণোভা বিভর্ম্যহম্‌
 ইন্দ্রাগ্নী অহমশ্বিনোভা।।’

সময়ের দাবি মেনে, নিজের ও অন্যের মঙ্গলের কথা ভেবে উৎসব উদযাপনে এই বদলটুকুতে ক্ষতি তো নেই। 

কোভিড-পর্বের শুরু থেকেই সম্পূর্ণ ডিজিটাল মাধ্যমে, পারস্পরিক দূরত্ববিধি মেনে একের পর এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চলেছে ‘বাগুইআটি নৃত্যাঙ্গন’। বাংলা নববর্ষ, রবীন্দ্রজয়ন্তী, বাইশে শ্রাবণ, বর্ষা-বরণ...  সংস্থার সদস্যদের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের প্রথিতযশা শিল্পীরাও যোগ দিয়েছেন এই সব অনুষ্ঠানে। বিপুল সমাদর মিলেছে দর্শকমহলে। ফেসবুক ও ইউটিউবে সেই অনুষ্ঠানের ফুটেজ রাখা আছে সযত্নে। 

এ বারের নিবেদন : ‘দুর্গা দুর্গতিনাশিনী’। 

দুর্গাপুজো উপলক্ষে বাগুইআটি নৃত্যাঙ্গনের দীর্ঘ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। তার আগে একটি বিশেষ পর্ব শুধু মহালয়ার জন্য। ‘দুর্গা দুর্গতিনাশিনী’। 

১৭ সেপ্টেম্বর, মহালয়ার দিনেই অনুষ্ঠান। সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তির মেলবন্ধনে এই নিবেদনও প্রস্তুত হবে সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিন মাধ্যমে। শিল্পীরাও থাকবেন যে যাঁর বাড়িতে। কিন্তু রয়ে যাবে দূরে থেকেও পাশাপাশি বেঁধে-বেঁধে থাকার মূল সুরটি। 

আর রয়ে যাবে প্রার্থনা। আনন্দময়ী, অসুরবিনাশিনী মহামায়ার পদধ্বনি যেন মুছে দেয় এই দুঃসময়। ‘জাগো, জাগো মা!’

(ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি