ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪

নজরুলের আলোচিত প্রেম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১০, ২৭ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ১১:২০, ২৭ আগস্ট ২০১৯

প্রেমের, বিরহের, বিদ্রোহের কবি ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর রচিত সাহিত্যে যেমন প্রেম রয়েছে তেমনি রয়েছে বিরহ। নজরুলের অসংখ্য গান ও কবিতায় বিরহ, অভিমান ও অতৃপ্তর রূপ ফুটে উঠেছে। প্রেমিক নজরুলের আসল পরিচয় মেলে তাঁর রচিত গান ও কবিতায়।

- ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেব খোঁপায় তারার ফুল’

- ‘আলগা কর গো খোঁপার বাঁধন’

- ‘প্রিয় যাই যাই বলো না’

 এ ধরনের গানে তার অপার্থিব প্রেমের উৎসরণ ঘটে।

এছাড়া -

তোমারে বন্দনা করি

স্বপ্ন-সহচরী

লো আমার অনাগত প্রিয়া,

আমার পাওয়ার বুকে না-পাওয়ার তৃষ্ণা-জাগানিয়া!

কাজী নজরুল ইসলামের ‘অনামিকা’ কবিতার প্রথম চার লাইন।

আমার বেদনা আজি রূপ ধরি’ শত গীত-সুরে

নিখিল বিরহী-কন্ঠে–বিরহিণী–তব তরে ঝুরে!

এ-পারে ও-পারে মোরা, নাই নাই কূল!

তুমি দাও আঁখি-জল, আমি দেই ফুল!

কবির ‘তোমারে পড়িছে মনে’ কবিতার শেষ চার লাইন।

এ রকম অজস্র প্রেমের কবিতা ও গান রচিত করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। তাই তাঁকে প্রেমিক কবি হিসেবে আখ্যায়িত করলেও অত্যুক্তি হবে না।

অনেকের মতে নজরুলের প্রথম প্রেম ছিল সৈয়দা খানমকে নিয়ে। প্রেমিক নজরুল ভালোবেসে তার নাম দিয়েছিলেন নার্গিস। কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার দৌলতপুর গ্রামের মেয়ে ছিলেন নার্গিস। দৌলতপুরে এক বিয়ে বাড়িতে তাদের প্রথম দেখা। তারপর তা ভালোবাসায় রূপ নেয়। কবি এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে আর দেরি করেননি।

১৯২১ সালে নার্গিসকে বিয়ে করেন কবি। কিন্তু বাসর হলো না। এক অজানা অভিমানে বাসর রাতেই নার্গিসকে ফেলে চলে যান নজরুল। কিন্তু সেই অভিমানের কারণ কবি কোনো দিন কাউকে মুখ ফুটে বলেননি। আজ পর্যন্ত তা স্পষ্টভাবে খুঁজেও কেউ বের করতে পারেনি।

এরপর নজরুলের অপেক্ষায় ১৬টি বছর কাটিয়ে দিয়েছিলেন নার্গিস। কবিকে একটি চিঠিও লিখেছিলেন। সেই চিঠির উত্তরে কবি লিখেছিলেন-

‘যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই, কেন মনে রাখো তারে, ভুলে যাও ভুলে যাও তারে একেবারে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর মুসলমান ছাত্রী ফজিলাতুন্নেসাকে ভালোবেসে ছিলেন কবি নজরুল। তার প্রতি কবির গভীর অনুরাগ যা একান্তই গোপন ছিল। এই প্রেম ছিল একতরফা। ফজিলাতুন্নেসার দিক থেকে তেমন কোন সাড়া ছিল না। কিন্তু কবির দিক থেকে এই প্রেম ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। নজরুলের এই প্রেমের কথা জানতেন কাজী মোতাহের হোসেন।

১৯২৭ সালে নজরুল বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমাজের অধিবেশনে যোগদান করতে প্রথমবারের মত ঢাকায় আসেন নজরুল। তখন মোতাহের হোসেনের বাড়িতে উঠেন। মোতাহের হোসেনের পরিচয়সূত্রে ফজিলতুন্নেসার দেখা পান কবি। সেখান থেকেই ফজিলতুন্নেসার প্রেমে পড়ে যান নজরুল। প্রেম নিবেদনও করেছিলেন কিন্তু ফজিলতুন্নেসার তরফ থেকে তেমন কোন সাড়া পাননি।  এরপর নজরুল কলকাতায় ফিরে যান এবং ফজিলতুন্নেসাকে চিঠিও লিখেছিলেন কিন্তু কোন উত্তর পাননি।

কাজী মোতাহের হোসেনকেও ফজিলতুন্নেসার প্রতি তার আকুলতার কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। কোন কিছুতেই ফজিলাতুন্নেসা সম্মতি জানাননি। কবির “সঞ্চিতা” কাব্যসংকলনটিও ফজিলতুন্নেসাকে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ফজিলতুন্নেসা অনুমতি দেননি।

কলকাতা ফিরে গিয়ে নজরুল ফজিলতুন্নেসাকে একটি কাব্যিক চিঠি লেখেন। সেই কাব্যিক চিঠির নাম ছিল রহস্যময়ী’।

এক সময় ঢাকা কলেজের  প্রিন্সিপাল সুরেন্দ্রনাথ মৈত্রের মেয়ে উমাকে গান শিখাতেন নজরুল। এ থেকে উমার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছিলেন বলে অনেকের ধারণা।  উমা মৈত্রের কথা কবি তার ‘শিউলিমালা’ গল্পটিতে বর্ণনা করেছেন।

শেষ পর্যন্ত কবি নজরুলের জীবনসঙ্গিনী হয়েছিলেন প্রমীলা সেনগুপ্তা। পারিবারিক সম্মতিতে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। প্রমীলার ডাকনাম ছিল দুলি। তবে অনেকেই বলেন, কুমিল্লায় থাকাকালীন সময়ে প্রমীলার প্রতি অনুরক্ত হয়েছিলেন নজরুল। প্রমীলার সঙ্গে আলাপ-পরিচয়ের সঙ্গে প্রেমও হয়েছিল কবির। ‘বিজয়িনী’ কবিতায় কবির এই প্রেম প্রকাশিত হয়েছিল।

১৯২৪ সালের এপ্রিল মাসে ১৪ বছর বয়সী প্রমীলার সঙ্গে কবির বিয়ে হয়। তখন কবির বয়স ছিল ২৩ বছর। অবশ্য ১৯২৩ সালের ১৫ অক্টোবরে প্রকাশিত দোলনচাঁপা কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত ‘দোদুল দুল’ নামক কবিতায় প্রমীলার সৌন্দর্য বর্ণনা করেছিলেন নজরুল।

কবি নজরুল গভীরভাবে ভালোবাসতেন প্রমীলাকে। অল্প বয়সে কবির স্ত্রী প্রমীলা যখন পক্ষাঘাতে অচল হয়ে পড়েন তখন তাকে সারিয়ে তোলার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেছিলেন এবং প্রেমময় সঙ্গ দিয়ে গেছিলেন সর্বোতভাবে।

‘অরুণ তুমি, তরুণ তুমি, করুণ তারও চেয়ে/ হাসি দেশের তুমি যেন বিষাদলোকে মেয়ে’ এই গানটি   শয্যাশায়ী প্রমীলাকে নিয়েই লেখা।

এএইচ/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি