ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪

নিপাত যাক সাংবাদিক নীপিড়ক!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:২২, ৪ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ১৫:২৬, ৪ জুলাই ২০২০

চীন-ভারত যুদ্ধ হলে কারা জয়ী হবে- সে বিতর্কে না গিয়ে আসুন ভাবি, কারা আগে করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সফল হবে। চীন এ ব্যাপারে গবেষণা করছে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। আমেরিকা বহু আগে থেকে আওয়াজ দিয়ে কাজ শুরু করেছে, অনেকটা সফলও। তবে চূড়ান্ত ফল পেতে আরো অপেক্ষা প্রয়োজন। আর বাংলাদেশ ভ্যাকসিন আবিষ্কারে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে প্রিয় বাংলাদেশ ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সফল হোক আর না হোক, আসল সফলতা কিন্তু পেয়ে গেছে। কেননা, এলডিসিভুক্ত আর কোনো দেশ এখনো টীকা আবিষ্কারে গবেষণা করছে কিনা তা গণমাধ্যমে আসেনি। বাংলাদেশ চূড়ান্ত সফলতা পেলে সত্যিই সেটা হবে এক অনন্য অবদান। হয়তো সামনের দিনে এর টীকা আবিষ্কারক দেশ কিংবা প্রতিষ্ঠান নোবেল পুরস্কারও পাবে। সেটা পেয়ে যাক প্রিয় বাংলাদেশই।

বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা যাই হোক কেন- হাসপাতালে চুরি হোক, রোগীর জন্য অক্সিজেন কেনার টাকায় উঠুক না দুর্নীতিবাজদের অট্টালিকা! সুইস ব্যাংকে জমা হোক টাকার পাহাড়, সেটা ছাড়িয়ে যাক হিমালয়ের উচ্চতাকে। কিন্তু কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে বলা যায়- অনেক উন্নত দেশের তুলনায় ভালো করছে বাংলাদেশ। ইতালী, জার্মানি, ফ্রান্স, আমেরিকার মতো হাজারে হাজারে লোক মরলে তো ঢাকার রাস্তায় অগণিত লাশ পড়ে থাকার কথা। কিন্তু গত চার মাসে সে দৃশ্য দেখতে হয়নি। না আসুক, সেটা এমনটিই তো চাই। হোক না সেটা মানুষের নিজস্ব প্রচেষ্টা কিংবা আল্লাহর অশেষ কৃপা। তবে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার যে হাল, তাতে আতংকিত না হয়ে বরং অক্কা পাওয়া ভালো। কারণ আতঙ্ক আপনাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে আর মৃত্যু অন্তত সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে। কিন্তু মৃত্যু কোনভাবেই কাম্য নয়। 

এখন তো বহু কাছের মানুষ মারা যাচ্ছেন। পরাস্ত হচ্ছেন করোনার কাছে। মুগদা হাসপাতালে রোগীদের চাপ সামলাতে না পেরে আনসার বাহিনীর সদস্যরা টেস্ট করতে আসা সন্দেহভাজনদের মারধরও করেছে। সেই ছবি তুলতে গেলে আবার আনসার সদস্যরা ফটোসাংবাদিকদের পিটিয়েছে। এটা সত্যিই খুবই ন্যাক্কারজনক। এখানে ফটোসাংবাদিকরাও চাইলে তাদেরকে পাল্টা মারতে পারতেন। এখনো পারেন। সাংবাদিক সংগঠনগুলোর সে সামর্থ অবশ্যই আছে। কিন্তু কাজটা তাদের নয়। ফলে এটা হয়তো কখনোই তারা করবেন না। দুটি ঘটনাই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে ফলাওভাবে প্রকাশ হয়েছে- প্রথমটি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানের করোনা টীকা আবিষ্কারের প্রথম ধাপ সফল। এবং দ্বিতীয়টা তার পরদিনই মুগদা হাসপাতালে করোনা রোগীদের ছবি তোলায় সাংবাদিক নীপিড়ন। 

এখানে আনসার সদস্যরা এতো সাহস কোথায় পেল? সত্যিই তা জানতে ইচ্ছে করছে। তারা কি আইনের ঊর্ধ্বে। ছবি তোলা তো সাংবাদিকের পেশা। তাহলে সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে বাধা দেওয়া কি থামবে না! আগে পুলিশ, আইন প্রণেতা, রাজনীতিক, ইন্টার্নি চিকিৎসকরাও সাংবাদিক নীপিড়ন করেছে। কিন্তু এবারই বোধ হয় প্রথম কোনো আনসার বাহিনী এমন সাহস পেলো। যারা কিনা শতভাগ সরকারি কোন সংস্থাও নয়। যাদের ভাড়া করে আপনি আমিও নিজের নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করি। অনেক বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে তাদেরই নিয়োগ করি। যেখানে আপনি আমি বসবাস করি। তারা এতো সাহস কোথায় পেল! সত্যিই  আমি বুঝতে পারছি না। এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান হওয়া জরুরি। 
আশা করি, মুগদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেটা করবে। আমার কলিগ জয়ীতা রায় এ ঘটনার সরাসরি শিকার। সাথে আরো কয়েকজন। আমি ব্যথিত, দুঃখিত, লজ্জিত, ঘৃণিত, স্তম্ভিত, হতবাক, নিরাশ, নির্বাক, ক্ষুব্ধ- এর কোনোটাই নই। বরং আমি আশাবাদী এই সাংবাদিক নীপিড়করা নিপাত যাবে খুব তাড়াতাড়িই। হোক না সে কোনো মহাশক্তিধর ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা জামাল খাশোগীকে হত্যাকারীর মতো কোনো রাষ্ট্রযন্ত্র। 

আরেকটা ঘটনা না বললেই নয়। সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল। তিনি এখনো কারাগারে। কিন্তু তার অপরাধ আমার কাছে এখনো স্পষ্ট নয়। যেমন- ১০ বছরেও ধোঁয়াশা কাটেনি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার। রহস্য উম্মোচিত হয়নি সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটনার। এর কোনটাই কাম্য ছিল না। 

যে দেশের গণমাধ্যম যতো বেশি শক্তিশালী, সে দেশের গণতন্ত্র ততটাই শক্তিশালী ও কার্যকর। কিন্তু এ কথা বর্তমান বিশ্বে অকার্যকর। শক্তিশালী গণতন্ত্র খুব কম দেশেই আছে। আর শক্তিশালী গণমাধ্যম সে তো অনেকটাই জাদুঘরে। সব দেশের সরকারই চায় গণমাধ্যম থাকুক ভঙ্গুরতা নিয়ে। দলাদলি আর বিতর্ক হোক সাংবাদিকদের ভূষণ। নির্যাতন নীপিড়ন থাকুক চিরসঙ্গী হয়ে। আর এর প্রতিবাদকারীরা পড়ুক রোষানলে। হোক না সেটা আনসার বাহিনীর কিংবা সৌদী রাজপরিবারের। 

তবে এ সবের সমাধান বোধ হয় অত্যাসন্য। কেননা, এখন সারাবিশ্বে করোনা মহামারীতেও থেমে নেই এসব। আবার মহাশক্তিধর স্রষ্টার সাথে প্রতিযোগিতাকারী কথিত মহাশক্তিধরা আজ পুরোপুরিই ধরাশায়ী। উড়ে কিংবা পালিয়ে বাঁচারও সুযোগ বন্ধ করেছে করোনা। ফলে পথভ্রষ্ট দাম্ভিক মানবজাতির একটা সংশোধন দরকার ছিল আবশ্যম্ভাবী হিসেবেই। জয় হোক গণমাধ্যমের। বিশ্বময় প্রতিষ্ঠিত হোক সুস্থ ধারার শক্তিশালী গণমাধ্যম। মানুষ হোক মানবিক। আর নিপাত যাক সাংবাদিক নীপিড়ক।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি