ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

মুজিববর্ষে স্বাধীনতা দিবস

বদলে যাবে বাংলাদেশ

মঈন বকুল

প্রকাশিত : ১৪:৪১, ২৬ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৫:২৬, ২৬ মার্চ ২০২০

‘....তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ কিছু বলবে না। গুলি চালালে আর ভাল হবে না। সাত কোটি মানুষকে আর দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাঙালি মরতে শিখেছে, তাদের কেউ দাবাতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর এই তেজদৃপ্ত ঘোষণা আজও আমাদের প্রেরণা দেয়। সেই ভাষণই ছিল প্রকৃতপক্ষে আমাদের স্বাধীনতার মূল ভিত্তি। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ৭ মার্চ ভাষণ জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো স্বীকৃতি পেয়েছে। আজও আমরা সেই বক্তব্যই উজ্জীবিত হই। আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনতার ৪৯তম বার্ষিকী। বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবের দিন, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন। আজকে স্বাধীনতা দিবসের শপথ হোক-আল্লাহ সহায় থাকলে ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবেনা।’

বিভিন্ন দুর্যোগ-দুর্ভোগে এই বাঙালি জাতিকে দমায়ে রাখতে পারেনি কেউ। যুগে যগে বিভিন্ন দুঃসময়ে জয়ী হয়েছি আমরাই। একেক সময় একেক ধরনের দুর্যোগে কোনো রক্তচক্ষুকে ভয় না করেই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সেই দুর্যোগে আজ আমরা। করোনা ভাইরাসের মহামারি। বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল। জানিনা আরও কত মানুষকে দিতে হবে প্রাণ। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে অসীম সাহসিকতায় তার বলিষ্ঠ কণ্ঠে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বিভিন্ন ভাষণ থেকেই যেমন মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ঠিক তেমনি আমাদের আজ শিক্ষা নিতে হবে আমরা যেন সকল বাধা বিপত্তিকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।

সুদীর্ঘ প্রায় দুইশ’ বছর ব্রিটিশদের অপশাসন ও কুশাসনের অবসান ঘটার পর ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতীয় উপমহাদেশে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে ভারত গঠিত হলেও শুধু ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। শেষ পর্যন্ত বাংলা থেকে বিতাড়িত হয় ইংরেজরা। এটিও বাঙালি জাতির একটি বড় সফলতা। 

ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা আন্দোলন-পরবর্র্তী সময়ে বাঙালিয়ানার যে জোয়ার আসে সেটাই আমাদের জাতীয়তাবোধের জন্ম দেয়। আর এই জাতীয়তাবোধের উৎসারিত চেতনা থেকেই আমরা এখনও সব আন্দোলন-সংগ্রামে প্রেরণা পাই। শোষণের বিরুদ্ধে, নির্যাতনের বিরুদ্ধে, দাবি আদায়ের সংগ্রামে আমাদেরকে উজ্জীবিত করে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি।

এসব প্রেরণাকে সঙ্গী করেই আমরা এগিয়ে যাই সামনের দিকে। আর আজ যতটা পথ বাংলাদেশ এগিয়েছে তার পেছনে অনুপ্রেরণা আমাদের চিরঅম্লান ভাষা আন্দোলন। আমাদের একুশের চেতনার জন্ম হয়েছিল একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে। তৎকালীন পাকিস্তানে শতকরা ৫৬ জনের মুখের ভাষা বাংলা হলেও শতকরা ৭ জনের মুখের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী।

আর ১৯৪৮ সালে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেয়া হয়। এর প্রতিবাদে গর্জে ওঠে বাঙালি। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তারা আন্দোলন শুরু করে। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫১-র মধ্যে ক্রমে জোরালো হয়ে ওঠে বাংলা ভাষার মর্যাদা আদায়ের দাবি।

১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ ও সাধারণ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত হয়। পাকিস্তান সরকার আন্দোলন দমন করার জন্য ১৪৪ ধারা জারির মাধ্যমে জনসমাগম, জনসভা ও মিছিল নিষিদ্ধ করে দেয়। ছাত্ররা সংগঠিতভাবে ১৪৪ ধারা ভাঙলে পুলিশ গুলি চালায়। শহীদ হন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতসহ আরও অনেকে।

পরদিন সারা রাত জেগে শহীদদের স্মরণে গড়া হয় শহীদ মিনার। পুলিশ তা ভেঙে ফেললে আবারও গড়ে ওঠে শহীদ মিনার। ভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তায় জন্ম নিয়েছিল একুশের চেতনা। এই চেতনা আমাদের জাতীয় জীবনে আত্মত্যাগের বীজমন্ত্র।

দেশের অভ্যন্তরে বার বার আঘাত হেনেছে বিভিন্ন ঝড়। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় গোর্কির আঘাতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল। ফসলহানী ও ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছিল দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। এই ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপগুলো এবং উপকূলীয় এলাকা নিমজ্জিত হয়। সেই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়টিকে বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় বলে ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লিউএমও)। সেই ঘূর্ণিঝড়কেও জয় করেছিল বাঙালিরা। তাই আশা করা যায় যে কোনো মহামারিতেও আমরা জয়ী হবে। 

১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ওইদিন স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে সেনাবাহিনীর একদল সদস্য। হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হয়েছে সে আজ দীর্ঘদিন। অপরাধীদের সাজা কার্যকর হয়েছে সেও বেশ অনেক বছর। কিন্তু থেমে থাকেনি বাংলাদেশ। তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ।

এছাড়া ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু এ পর্যন্ত সব ধরনের জাতীয় আন্দোলন, মহমারি বা জাতীয় সংকটে একযোগে মাঠে নেমেছে দেশের জনগণ। শেষ পর্যন্ত সফলতার সঙ্গে একটি উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। 

দেশের বিভিন্ন সংকট বা মহামারিতে আমাদের শেষ ভরসাস্থল মহান আল্লাহ তায়ালা। তিনি আল কোরআনের ৯৪ তম সুরা ইনশিরাহ এ বলেছেন, ‘আমি কি আপনার বক্ষ উম্মুক্ত করে দেইনি?, আমি লাঘব করেছি আপনার বোঝা, যা ছিল আপনার জন্যে অতিশয় দুঃসহ। আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি। নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। অতএব, যখন অবসর পান পরিশ্রম করুন। এবং আপনার পালনকর্তার প্রতি মনোনিবেশ করুন।’

সূরা ইনশিরাহ এর ৫-৬ আয়াতের মর্মার্থ হচ্ছে, মনে রেখো, প্রতিটি কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি। নিঃসন্দেহে প্রতিটি কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি। অর্থাৎ, প্রতিটি সমস্যার ভেতরেই রয়েছে তার সমাধান, প্রতিটি সমস্যার ভেতরেই রয়েছে নতুন সম্ভাবনা।

সুতরাং আমরা মহামারি বা সংকটে ভয়ে ভীত না হয়ে মহান আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখতে হবে। তিনি বিপদ-আপদ দিয়েছেন, আবার তিনিই উদ্ধার করবেন। হয়ত এই মহামারি তারই নতুন কোনো পরীক্ষা। অতীতের মতো সব পরীক্ষায় আমরা যেভাবে উত্তীর্ণ হয়েছি, ঠিক সেভাবেই আমরা যেন উত্তীর্ণ হই, মহান রবের কাছে এই প্রার্থনা। আল্লাহ সবাইকে সুস্থ ও সুন্দর রাখুন।


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি