ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিপদের ভরসা ‘৯৯৯’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৪৯, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

‘৯৯৯’। পুলিশ বাহিনীর ডিজিটাল সেবা। দিনে দিনে জরুরি নতুন এই সেবার প্রতি সারাদেশের মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রুপসা থেকে পাথুরিয়া সর্বত্রই এই সেবা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

দিনরাত ২৪ ঘন্টা দেশের যে কোনো প্রান্তে বিপদগ্রস্থ মানুষ ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করলেই ছুঁটে আসছেন পুলিশ সদস্যরা। সহায়তা পাচ্ছেন সবাই। সন্ত্রাস, দুর্ঘটনা, বাল্যবিবাহ ঠেকানো, ধর্ষণ, অগ্নিকান্ড যে কোনো বিপদের একটাই ভরসা ‘৯৯৯’। সমাজে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে যুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, গৃহকর্মী নির্যাতন রোধ, পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ ইত্যাদিতে ৯৯৯ প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। ৯৯৯-এ ফোন করে ঝামেলা এড়িয়ে সহজে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন জরুরি সেবা পাচ্ছে মানুষ।

প্রযুক্তির কল্যাণে অবিশ্বাস্য সব গল্পের জন্ম দিচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’। যে পুলিশের প্রতি এক সময় মানুষের আস্থা হারিয়ে গিয়েছিল এ সেবার কারণে তা ফিরে আসছে নতুন করে। জাতীয় জরুরি সেবা হেল্প ডেস্ক ৯৯৯ একের পর এক চমক দেখাচ্ছে। অসহায় ও বিপদগ্রস্ত মানুষের কল পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তারা সাড়া দিচ্ছে।

২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি মানুষ এ সেবা গ্রহণ করেছেন।

এ বিষয়ে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, সাধারণ জনগণ সেবা পেতে গত ২ বছরে ‘৯৯৯’ নাম্বারে এ পর্যন্ত ২ কোটি অভিযোগ করেছেন। পুলিশ অর্ধকোটি অভিযোগ সমাধান করতে পেরেছে। পুলিশ চায় মানুষকে সেবা দিতে, মানুষকে সাহায্য করতে। পুলিশকে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। সেই প্রচেষ্টাই অব্যাহত আছে। পুলিশকে জনবান্ধব করে তুলতে সকল পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-তে কর্মরত এএসপি ফারাহ সিদ্দিকী জানান, অ্যাম্বুলেন্সে দ্রুত রোগী ফেরি পারাপার, প্রাণনাশের আশঙ্কা, ধর্ষণ-সংক্রান্ত ঘটনা, গৃহকর্মী নির্যাতন, কাউকে আটকে রাখা, লিফটে আটকে পড়া, অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকা, দুর্ঘটনা, অগ্নিকান্ডের ঘটনা, পারিবারিক সমস্যা, শব্দদূষণ, ছিনতাইসহ নানা বিপদ থেকে উদ্ধারে মানুষকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। নাগরিকের জরুরি প্রয়োজনে কোনো একটি মুঠোফোন থেকে ৯৯৯-এ বিনা পয়সায় ফোন করতে পারেন। প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এই সেবা। ৯৯৯ সার্ভিসের প্রশিক্ষিত কর্মীরা প্রয়োজন অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বা অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন।

তিনি আরো বলেন, ৯৯৯ নম্বরে কেউ ফোন করলে সমস্যার ধরণ, নাম-পরিচয় ও ঠিকানা জেনে ব্যবস্থা নেয়া হয়। যেমন কেউ পুলিশের সেবার জন্য ফোন করলে তাৎক্ষণিকভাবে ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের সঙ্গে ফোনে ওই ব্যক্তিকে কথা বলিয়ে (টেলি কনফারেন্স) সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়।

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রম পরিচালিত হয় রাজধানীর আবদুল গণি রোডের পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে। দুটি তলায় শতাধিক কর্মী কাজ করেন এখানে। যারা কল রিসিভ করেন, তাদের বলা হয় কলটেকার। কলটেকারদের তত্ত্বাবধান করার জন্য আছেন কয়েকজন কর্মকর্তা। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এখানে চার পালায় কাজ করেন তারা। অ্যাম্বুলেন্স সেবার জন্য রয়েছে আলাদা ডেস্ক।

৩৭১ জন জনবল দিয়েই চলছে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর কার্যক্রম। এর মধ্যে টি অ্যান্ড আইএম থেকে কর্মরত রয়েছেন ২৩২ জন। আর প্রেষণে কর্মরত আছেন মোট ১৩৯ জন। টি অ্যান্ড আইএম কর্মরত ২৩২ জনের মধ্যে একজন অতিরিক্ত ডিআইজি, এএসপি ৪ জন, ইন্সপেক্টর ৬ জন, সাব ইন্সপেক্টর ২ জন, এএসআই ৯ জন, তার মধ্যে নারী এএসআই ১ জন রয়েছেন। বেতার কনস্টেবল ২১০ জন। তার মধ্যে নারী বেতার কনস্টেবল ৮৫ জন রয়েছেন।

অপরদিকে প্রেষণে কর্মরত ১৩৯ জনের মধ্যে ইন্সপেক্টর ১৯ জন, সাব ইন্সপেক্টর ১৭ জন রয়েছেন। তার মধ্যে ১ জন নারী সাব ইন্সপেক্টর রয়েছেন। মোট এএসআই রয়েছেন ২১ জন। তার মধ্যে নারী এএসআই রয়েছেন ২ জন। মোট কনেস্টবল রয়েছেন ৮২ জন। তার মধ্যে ২০ জন নারী কনেস্টবল রয়েছেন।

যদিও প্রয়োজনের তুলনায় জনবল অনেক কম, তবে তাদের আগ্রহ ও আন্তরিকতা ৯৯৯ কে আরও এগিয়ে নেওয়ার দাবি রাখছে। সংশ্লিষ্টরা আশাপ্রকাশ করেছেন, জনবল বাড়ালে সেবার মান আরো বৃদ্ধিপাবে।

জানা গেছে, দুই বছর আগে মাত্র ৩০ সিট ও ১০০ জন জনবল নিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ৩৭১ জন জনবল দিনরাত ২৪ ঘন্টা কাজ করে এ কার্যক্রম গতিশীল করে তুলেছেন।

যেভাবে সহযোগিতা করা হয় :
বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে ঢাকায় প্রশিক্ষিত এজেন্টরা রিসিভ করেন। পরে কলারের সমস্যা জানার পর দ্রুত ওই এলাকাস্থ ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স বা অন্যান্য সেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করে দেন। এখানে একজন কর্মী তার শিফটে ৩০০ থেকে ৪০০টি কল রিসিভ করেন।

সেবাটি প্রথমদিকে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে পরিচালিত একটি পাইলট কর্মসূচি ছিল। ওই সময় পরীক্ষামূলক কাঠামোর অধীনের নাগরিককের জরুরি প্রয়োজনে সম্পূর্ণ টোলফ্রি পুলিশ, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হতো। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্লাস ওয়ানের সেবার সমন্বয়ে ও অশীদারত্বের ভিত্তিতে এ সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ পরিচালনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে বাংলাদেশ পুলিশ উন্নত প্রযুক্তি ও কারিগরি সরঞ্জাম সংযোজন করে ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিএমপি কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের ৫ম এবং ৬ষ্ঠতলায় জাতীয় জরুরী সেবা সেন্টারের কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন স্তরের প্রশিক্ষিত পুলিশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জরুরি এ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

ইতিমধ্যে সেবা দেওয়ার ২১ শতাংশ কলের মধ্যে জরুরি প্রয়োজনে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৮৯টি। এর মধ্যে জরুরি প্রয়োজনে পুলিশি সেবা দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৩৭টি। যা জরুরি প্রয়োজনের কলের ৭২ শতাংশ। ফায়ার সার্ভিসের সেবা দেওয়া হয়েছে ২৬ হাজার ৮২৭টি। যা জরুরি প্রয়োজনের কলের ১৬ শতাংশ। অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার ৩২৫টি। যা জরুরি প্রয়োজনের কলের ১২ শতাংশ। নারীদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে ১ লাখ ৯৫৩টি কলের বিপরীতে।

গত দুই বছরে জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ ঢাকা থেকে সবচেয়ে বেশি কল এসেছে। যা মোট কলের ৬৮ শতাংশ। এছাড়া বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে ১০ শতাংশ, খুলনা থেকে ৫ শতাংশ, রাজশাহী থেকে ৪ শতাংশ, রংপুর থেকে ৪ শতাংশ, বরিশাল ও সিলেট থেকে ২ শতাংশ করে কল করা হয়েছে।
এসএ/

 

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি