ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিষাক্ত আম হতে সাবধান!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৩২, ২৩ মে ২০২০

বিষাক্ত কেমিক্যালে পাকানো টসটসে আমে সয়লাব বাজার। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার বাজার থেকে শুরু করে অলিগলি সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে এই আম। বিষাক্ত এই আম ধ্বংস করতেও মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিএসটিআই ও সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। তারা বিভিন্ন অভিযানে একের পর এক ধ্বংস করছে বিষাক্ত আমসহ বিভিন্ন ফল। কিন্তু তাতে কী। এক দিকে যেমন ধ্বংস করা হচ্ছে বিষাক্ত আম। অন্য দিকে ব্যবসায়ীরা বিষ মেশানো আমে সয়লাব করে দিয়েছে বাজার।

বর্তমানে বাজারে যেসব আম পাওয়া যাচ্ছে তার বেশির ভাগ আমই অপরিপক্ব। কিন্তু এসব আম ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও ইথানল দিয়ে পাকানো। কেমিক্যাল দেয়ায় আমের ওপরের অংশ পাকা দেখা যায়। অথচ ভেতরে কাঁচা। অনেক আমের আঁটি পর্যন্ত শক্ত হয়নি। অথচ কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণে তা দেখতে চকচক করছে; যা দেখে ক্রেতা মনে করছেন এটি পাকা আম। আসলে তা ঠিক নয়। 

আমের মৌসুম পুরোপুরি শুরু হওয়ার আগেই রাজধানীসহ সারাদেশের বাজারে উঠতে শুরু করে বিভিন্ন জাতের আম। আমগুলো দেখতেও বেশ ঝকঝকে এবং সুন্দর। এখন ইফতারেও এ আম যুক্ত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব আম কি সত্যিকার অর্থেই পাকা? এগুলো কি খাওয়ার উপযোগী? কারণ এসব আম কিনে বাড়িতে নিয়ে কেটে দেখা যায় ভেতরের আঁটিই শক্ত হয়নি, আঙ্গুলে চাপ দিলেই ভেঙ্গে যায়। আম কেটে কিছু সময় রাখার পর আপনা আপনি কালো হয়ে যায়। খেতেও আমের মতো লাগে না, মিষ্টি লাগা দূরের কথা বিশ্রী স্বাদে মুখ বিস্বাদ হয়ে যায়। এ আম খাওয়ার পর অনেকের পেটেও সমস্যা দেখা দেয়।

ভালো আম মানেই বৃহত্তর রাজশাহীর আম। তাই আমের ভেজাল ঠেকাতে অন্যান্য বছরের মতো এবার আমের বাজারজাতকরণে সরকারের পক্ষ থেকে সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও রাজধানীর প্রায় বাজারে ভয়ে গেছে বাহারী রংয়ের কার্বাইড দিয়ে পাকানো ভেজাল আম। যা স্বাস্থ্যের জন্যই খুবই ক্ষতিকর।

সাধারণত মে, জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাসে আমের বাজার হয়ে থাকে। তবে এবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাই আম নিয়ে শঙ্কায় সংশ্লিষ্টরা। ফলে সময় বেধে দিলেও চাষিরা আম গাছ থেকে নামাচ্ছেন না। অথচ ঢাকার বাজারে রঙ মাখানো আমে ভয়ে গেছে। 

রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হামিদুল হক আম পাড়ার সময়সীমা নির্ধারণ করে জানান, ২৫ মে রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ বা লখনা, ২৮ মে হিমসাগর বা খিরসাপাত, ৬ জুন ল্যাংড়া, ১৫ জুন আম্রপালি এবং ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে।

অপরিপক্ব আম বাজারজাত ঠেকাতে এই উদ্যোগ বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে, আম চাষি এবং ব্যবসায়ীরা বলছেন, আম পরিপক্ব না হওয়ায় গাছ থেকে আম পাড়া হচ্ছে না। আমের আঁটি শক্ত হতে আরও সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করতে হবে। বর্তমানে ঢাকাতে বাজারে রাজশাহীর আম বলে যে আম বিক্রি করা হচ্ছে, তা রাজশাহীর আম না। বিভিন্ন জায়গার অপরিপক্ব আম মেডিসিন দিয়ে পাকিয়ে রাজশাহীর আম বলে চালিয়ে তারা রাজশাহীর আমের সুনাম নষ্ট করছে। তা কঠোরভাবে দেখা দরকার। কারণ এখানকার আম পরিপক্ব না হওয়ায় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে আম পাড়ার দিন তারিখ নির্ধারণ করা হলেও কেউ পাড়েনি আম।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বলেন, গেল বছরও আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। এবার একটু আগেই সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আবহাওয়া ঠান্ডা। সেজন্য আম নাও পাকতে পারে। একটু দেরি হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হকও বলেন, এবার আবহাওয়ার কারণে আম পরিপক্ব হতে সময় নিচ্ছে। শীতকাল দীর্ঘ হওয়ায় গাছে মুকুল এসেছে দেরি করে।

এছাড়া বৈশাখজুড়েই ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। ফলে আম পরিপক্ব হতে সময় লাগছে। তাই দেরিতে আম পরিপক্ব হলে চাষিরা দেরিতেই গাছ থেকে আম পাড়বেন।

আমাদের শরীরের সুষম পুষ্টির যোগানের জন্য আমসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল খাওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু কতিপয় মানুষের লোভের কারণেই সেই ফল বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। একেকটি আম বিষের গোল্লায় পরিণত হচ্ছে। তাছাড়া মাঠপর্যায়ে চাষি বা কৃষকদের অসচেতনতার কারণেও ফলে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত বিষ। এই বিষযুক্ত ফল খেয়ে একদিকে আমরা নিজেরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি, অন্যদিকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা শিশুরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম অসুস্থতা চলতেই থাকবে। বলা বাহুল্য, অসুস্থ প্রজন্ম নিয়ে দেশ ও জাতি কখনো এগুতে পারে না। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ট এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন-বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। জনগণকেও এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে।

এসএ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি