ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ক্যাম্পাসের মুখ

বিষয়: স্যানিটারি ন্যাপকিন

অর্নিতা দাস

প্রকাশিত : ১৫:১২, ১৯ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ১৫:১৭, ১৯ জুলাই ২০২০

পিরিয়ড নিয়ে আপত্তিকর ঘটনার সম্মুখীন হয়ে অনেকেই বিষণ্ণতায় ভোগেন। প্রতীকী ছবি।

পিরিয়ড নিয়ে আপত্তিকর ঘটনার সম্মুখীন হয়ে অনেকেই বিষণ্ণতায় ভোগেন। প্রতীকী ছবি।

চলছে পরিসংখ্যান ক্লাস। ইমন নোট খাতা বের করার সময় হঠাৎ-ই তার ব্যাগ থেকে একটা স্যানিটারি ন্যাপকিন (প্যাড) নিচে পড়লো। ক্লাসে তার পাশে বসা সবাই হেসে উঠলো এবং এ নিয়ে বন্ধুদের কাছে অনেক কটুকথা এবং উপহাসের শিকার হতে হলো তাকে। এভাবে আর চলছিলো না, তাই একদিন মুখ ফুটে ক্লাসে সবার সামনে বললো কেনো সে ব্যাগে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখে।

তার বোন অদিতি দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। কলেজে ক্লাস চলাকালীন তার পিরিয়ড হয় এবং আপত্তিকর ঘটনার সম্মুখীন  হয়। অদিতি বাড়িতে এসে কান্নাকাটি করে তার মায়ের কাছে বলে এই ঘটনা। এরপর থেকে ইমন নিজের ব্যাগে স্যানিটারি ন্যাপকিন (প্যাড) রাখে, যেনো তার বোনের মতো আর কাউকে পিরিয়ড নিয়ে আপত্তিকর কোনো ঘটনার সম্মুখীন হতে না হয়। 

‘পিরিয়ড’ শব্দটা শোনা মাত্রই আমরা মুখ লুকাই। নিজেরাই মনে করি এটা গোপনীয় এবং লজ্জাজনক কোনো ঘটনা। কিন্তু আসলেই কি তাই? আমরা যারা শীক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে পড়ি, তাদের এ জাতীয় সঙ্কটে পড়তে হয় বেশি। অনেক সময় এটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরী করে। ছোটবেলা থেকে পরিবার যদি এ বিষয়ে সচেতন করতো বা প্রয়োজনীয় শিক্ষার কথা বলতো, তাহলে এ অবস্থায় পড়তে হতো না। 

পিরিয়ড নারীদেহের একটি  স্বাভাবিক চক্র। বয়ঃসন্ধিকালের উপস্থিতিতে ৯-১৩ বছর বয়সে যে শারীরিক পরিবর্তন হয় হয় তাকেই ‘মাসিক বা পিরিয়ড’ বলা হয়। শরীরে যেমন- বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বৃদ্ধি ঘটে, ঠিক তেমনি অভ্যন্তরীণ কিছু পরিবর্তন আসে। স্বাভাবিক পিরিয়ড নারীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে, পাশাপাশি নারীদের জন্মধারণ ক্ষমতাও তৈরি করে।

আমরা জানি, হরমোনের কারণে আমাদের শারীরিক পরিবর্তন হয় এবং পিরিয়ড হয়। আমাদের মস্তিস্কে একটি পিটুইটারি গ্রন্থি থাকে যা আমাদের শরীরে কিছু রাসায়নিক সংকেত হিসেবে হরমোন নির্গত করে এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবর্তন ঘটায়।

অর্নিতা দাস

তবে এই পিরিয়ড নিয়ে আমাদের বহু ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে, যার ফলে আমাদের দেশের নারীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভুগে থাকে এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। যেমন- পিরিয়ড হলে মাছ খাওয়া যাবে না, টক খাওয়া যাবে না, রান্না ঘরে ঢোকা যাবে না, হাঁটাহাঁটি করা যাবেনা, মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না, পিরিয়ড নিয়ে কথা বলা যাবেনা, আরো কতো কি। এর ফলে পিরিয়ডকালীন নারীরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

তাই আমাদের এই সময়ে প্রয়োজন পিরিয়ড নিয়ে পরিবার এবং নিকটজনের সাথে আলাপ করা, হালকা কুসুম পানিতে গোসল করা, ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ এবং হালকা ব্যায়াম করা, যা শরীরের রক্ত চলাচল সচল করে শরীরকে সতেজ করে তুলবে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমরা পিরিয়ডকালীন স্বাস্থবিধি মেনে চলি না। ফলে গর্ভধারণের সময় এবং এর পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা যায়। তাই আমাদের পিরিয়ডকালীন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এবং প্যাড বা কাপড়ের ব্যবহারে সচেতন হওয়া উচিত।

যেহেতু আমরা পিরিয়ড বিষয়টিকে গোপনীয় স্তরে রেখেছি, সেহেতু আমাদের এই সম্পর্কে সচেতনতা খুবই সীমিত। আমরা খোলামেলা আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না, এমনকি প্যাড ক্রয়ের ক্ষেত্রেও সংকোচ কাজ করে। ৬ ঘণ্টার বেশি প্যাড ব্যবহার উচিত নয়, বেশিক্ষণ ব্যবহার করলে সংক্রামিত হয়ে জরায়ুতে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। 

আমরা অনেকেই কাপড় ব্যবহার করি, কিন্তু কাপড়ের যথাযথ ব্যবহার জানি না। কাপড় অবশ্যই ব্যবহার করা যায়, তবে সেটা ডেটল পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে বা স্ত্রী করে ব্যবহার উপযোগী করে রাখতে হবে। খুব সতর্কভাবে মনে রাখতে হবে যে, অপরিস্কার কাপড় ব্যবহার মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরী করে।
  
চলছে করোনা দূর্যোগ। এই সময়ে ঘরে থাকা মেয়েরা পিরিয়ড নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। কারণ দেশ উন্নত হলেও দেশের মানুষের মানসিকতা পড়ে আছে সেই সেকালে। পিরিয়ড নিয়ে আমরা এখনো খোলামেলা আলোচনা করতে পারি না, কারণ অধিকাংশ পরিবার-ই ছোটবেলা থেকে পিরিয়ড যে একটা স্বাভাবিক ব্যাপার- এই শিক্ষা দিচ্ছে না। তাছাড়া এখনো পাঠ্যবইয়ের চতুর্থ অধ্যায়টা সবাই লুকিয়ে লুকিয়েই পড়ে, যেখানে ঋতুস্রাব নিয়ে লেখা।

এই সমস্যাগুলো তখনই সমাধান সম্ভব যখন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাবে এবং সমাজে পরিবর্তন আসবে। শারীরিক স্বাস্থ্য শিক্ষা সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানের ব্যবস্থা করা, পাঠ্যক্রমের বিষয়ের উপর জোর দেয়া, আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- পারিবারিক শিক্ষা। পরিবার থেকে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরী করতে হবে ছোটবেলা থেকেই। ছেলে এবং মেয়ে উভয়কেই শরীর বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা দেয়া। তাহলে আর কোনো মেয়ে বাইরে পিরিয়ড হওয়ার জন্য আপত্তিকর পরিস্থিতির শিকার হবে না। না হয় আপনার আদরের কন্যাকে পদে পদে বিব্রত হতে হবে।

লেখক- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি