ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

চার সেকেণ্ডের বিস্ফোরণ

বৈরুতের মতো ঝুঁকিতে ঢাকা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৪০, ১২ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ০১:৩৯, ১৩ আগস্ট ২০২০

এভাবেই পুরান ঢাকার বিভিন্ন গোডাউনে রাসায়নিক মজুদ করে রাখা হচ্ছে

এভাবেই পুরান ঢাকার বিভিন্ন গোডাউনে রাসায়নিক মজুদ করে রাখা হচ্ছে

গত ৪ আগস্ট লেবাননের রাজধানী বৈরুতে একটি বিস্ফোরণে ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। রাসায়নিক গুদামের বিস্ফোরণটিতে চার হাজারের বেশি মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন ৩ লাখের মতো মানুষ। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেড় হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। বিস্ফোরণের ভিডিও দেখে অনেকেই বলেছেন তারা জীবনে কখনও এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ দেখেননি। বিস্ফোরণটি ঘটেছিল একটি গুদাম বা ওয়্যারহাউসে যাতে বিপুল পরিমাণে বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ মজুত করে রাখা ছিল, যারা নাম এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। বিস্ফোরণটি ঘটেছে মাত্র চার সেকেন্ডে। বিস্ফোরণটিও এত শক্তিশালী ছিল যে প্রায় দেড়শত মাইল দূরের সাইপ্রাস দ্বীপের বাড়িঘরের দরজা-জানালা তাতে কেঁপে উঠেছিল বলে সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

এ বিস্ফোরণের পর যেন সর্তক হয়েছে পুরো বিশ্ব। এমন বিপজ্জনক পদার্থ বা রাসায়নিক কারখানা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে পদক্ষেপ নিচ্ছে অনেক দেশ। তবে বাংলাদেশের পুরান ঢাকায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটসহ বিপজ্জনক সব রাসায়নিক পদার্থের অনেক মজুদ থাকলেও তা সরানোর দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। এতে রাজধানীবাসী চরম বিস্ফোরণ ঝুঁকির মধ্যে আছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। 

বিশ্লেষকরা জানান, বৈরুতে বিস্ফোরণের জন্য দায়ী ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। এগুলো বন্দরের দীর্ঘ ৫ বছর একটি গুদাম ঘরে অবৈধ ও অনিরাপদভাবে মজুদ ছিল। বন্দরের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আদালত এ বিপজ্জনক পদার্থ রফতানি কিংবা বিক্রি করতে নির্দেশ দিলেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে লেবাননকে। বন্দরের এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট গত ছয় বছর ধরে অনিরাপদ অবস্থায় সেখানে পড়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে ২০১৩ সালে একটি জাহাজে করে এই এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বৈরুত বন্দরে এসেছিল। কিন্তু কিভাবে তাতে আগুন লাগলো তা এখনও স্পষ্ট নয়।

বৈরুতে বিস্ফোরণের পরের অবস্থা- স্কাই নিউজ

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস সিটিতে ১৯৪৭ সালের ১৬ এপ্রিল এক এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণ ঘটেছিল যাতে ৫০০ জন নিহত হয়, আহত হয় ৪ হাজার লোক। টেক্সাস সিটি বন্দরে একটি জাহাজ থেকে ২,৩০০ টন এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট খালাস করার সময় ওই বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে পুরো ডক এলাকা ধ্বংস হয়, আশপাশে থাকা অন্য কয়েকটি জাহাজে কয়েকদিন ধরে আগুন জ্বলতে থাকে, এমনকি আকাশে উড়ন্ত দুটি ছোট বিমানও ধ্বংস হয়। ঐ বিস্ফোরণের ঝাপটায় সাগরে ১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছাস হয়। তাতে অনেক বাড়ি ধ্বংস হয়ে ২ হাজার লোক গৃহহীন হয়ে পড়ে।

চীনের তিয়ানজিন শহরে এক ওয়্যারহাউজে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে ১৭০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়। সেখানে একাধিক ওয়্যারহাউজে এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ছাড়াও পটাসিয়াম নাইট্রেট এবং সোডিয়াম সায়ানাইডের মতো বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ জমা রাখা ছিল। চীনা কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ার কারণে প্রথমে নাইট্রোসেলুলোজ নামে একটি দাহ্য রাসায়নিক পদার্থে আপনা থেকেই আগুন ধরে যায়। তা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের গুদামে, এবং প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ঘটে। অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা ভুলবশত: পানি দিয়ে সেই রাসায়নিক পদার্থের আগুন নেভানোর চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার নেয়। ওই ঘটনায় যারা মারা গিয়েছিল তাদের অধিকাংশই ছিল অগ্নিনির্বাপন কর্মী।

জানা যায়, বৈরুতের ঘটনার পর বিভিন্ন দেশের মতো অস্ট্রেলিয়ার সরকার সিডনি থেকে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মজুদ সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। চেন্নাইয়ের ৭০০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে ভারত। 

এদিকে বাংলাদেশে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো বিপজ্জনক রাসায়নিক নিরাপদভাবে আমদানি ও গুদামজাত করা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য কর্মকর্তা রয়েছেন মাত্র ৫ জন। আর আমদানি করা এই রাসায়নিক গুদামজাত করার জন্য দেশের বন্দরগুলোতে কোন নিরাপদ ব্যবস্থা নেই বলে কর্মকর্তারা বলছেন। বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিস্ফোরক পরিদপ্তরের দায়িত্বই হচ্ছে এ ধরণের দাহ্য পদার্থের আমদানির অনুমতি দেয়া এবং নিরাপদভাবে এগুলো সংরক্ষিত হচ্ছে কিনা তা দেখাশোনা করা। কিন্তু অপ্রতুল জনবলের কারণে এরা দায়িত্বপালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বলে স্বীকার করেছে মন্ত্রণালয়ে সূত্র। ছাড়পত্র পাওয়া আমদানির বাইরে স্থানীয়ভাবে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উৎপাদন করা হচ্ছে কিনা, কিংবা সেগুলো নিরাপদভাবে বিক্রি, পরিবহণ কিংবা গুদামজাত করা হচ্ছে কিনা, সে সম্পর্কে কর্মকর্তারা কোন তথ্য দিতে পারেনি।

পুরান ঢাকার একটি রাসায়নিক গুদাম- সংগৃহীত

বিস্ফোরক পরিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, ঢাকায় দুজন এবং চট্টগ্রাম, খুলনা এবং রাজশাহীতে একজন করে বিস্ফোরক পরিদর্শক কাজ করছেন। এসব জায়গায় দু-একজন করে সহকারী পরিদর্শকও রয়েছেন। 

বৈরুতের বিস্ফোরণের পরপরই বাংলাদেশে এর ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর। এর প্রধান মো. মঞ্জুরুল হাফিজ একটি বিদেশী গণমাধ্যমকে জানান, বৈরুতের ঘটনার পর সারাদেশে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো নিয়ন্ত্রিত পদার্থ আমদানি হলে তা যেন অতিদ্রুত বন্দর এলাকা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। তিনি বলেন, “বিস্ফোরকদ্রব্য গুদামজাত করার জন্য বন্দরগুলোতে যেমন বিশেষ ধরনের ‘ম্যাগাজিন’ বা অস্ত্র-গুদাম থাকে, সেটা বন্দরগুলোতে নেই বলেই ঝুঁকি কমানোর জন্য আমরা এই পরামর্শ দিয়েছি। আমদানি করা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সাধারণত বন্দরের নিরাপত্তা প্রহরীদের পাহারায় থাকে, এবং পরে বন্দর থেকে বের করে পুলিশের পাহারায় এগুলো গুদামে তোলা হয়।”

হাফিজ জানান, এ ধরণের রাসায়নিক আমদানির জন্য এই মুহূর্তে তিনটি বেসরকারি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এরা মূলতঃ মেডিকেল চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন উপাদান তৈরি করে, যার মধ্যে রয়েছে নাইট্রাস অক্সাইড বা ‘লাফিং গ্যাস’ যেটি দাঁতের ডাক্তাররা ব্যবহার করেন। সরকারি পর্যায়ে শুধুমাত্র মধ্যপাড়া গ্র্যানাইট মাইনিং কোম্পানির অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আমদানির অনুমতি রয়েছে বলে তিনি বলেন। এই কোম্পানি খনি-গর্ভে বিস্ফোরণের বারুদ হিসেবে এগুলো ব্যবহার করে থাকে। সার এবং খনিতে বিস্ফোরক হিসেবে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের ব্যবহার বহুদিন ধরেই চলছে।

অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট গুদামের স্থানও অনেক সময় গোপন রাখা হয়, কারণ ১৯৭০-এর দশক থেকে ঘরে তৈরি বোমা বা হাতবোমা তৈরির উপাদান হিসেবে এটা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট তাই বেশ জনপ্রিয়।

পুরান ঢাকার রাসায়নিক মজুদের কথা উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর আশপাশের এলাকায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটসহ যেসব বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থের মজুদ রয়েছে, তা বৈরুত বন্দরে মজুদ রাসায়নিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। কোনো ধরণের মনিটরিং ছাড়াই যত্রতত্রভাবে রাখা হচ্ছে এসব কেমিক্যাল। ফলে যেকোনো সময় বৈরুতের মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ধরণের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে রাসায়নিক পদার্থের মজুদ নিরাপদ স্থানে সরানো এবং কঠোর মনিটরিং নিশ্চিতের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

পুরান ঢাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ জানিয়ে বলছেন, আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউন ও দোকান থাকলে যে কোনো সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। আবারও নিমতলী বা চকবাজারের চুড়িহাট্টার মতো ভয়াবহতা দেখতে পারেন মানুষ এমন আশঙ্কা করছেন। পুরান ঢাকার স্থানীয় আমিরুল ইসলাম আশঙ্কার কথা জানান, আবারও যে কোন সময় জ্বলে উঠতে পারে পুরান ঢাকা। এত এত রাসায়নিক গুদাম। এসবের চিন্তায় স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যহত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

গেল বছরে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় পারফিউমের কারখানা ও গোডাউনে অগ্নিকান্ডের পর ধ্বংসস্তুপ- সংগৃহীত

জানা যায়, রাজধানীর পুরান ঢাকায় ২৫ হাজারের উপর রাসায়নিক গুদাম রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার বসতবাড়িতে। মাত্র ৭০০ গুদামকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে সিটি করপোরেশন। ঠিক দশ বছর আগে (২০১০ সালের ৩ জুন) ঢাকার নিমতলীতে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট আগুন কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থের গুদাম ও দোকানে ছড়িয়ে পড়লে ১২৪ জনের প্রাণহানি হয়। গেল বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় পারফিউমের কারখানা ও গোডাউনে আগুনে প্রাণ হারান ৭১ জন। এরপর রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে নেওয়ার দাবি উঠলেও তা কার্যকর হয়নি। রাসায়নিক গুদাম সরাতে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। একই সঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ও কেমিক্যাল পল্লী স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। সাময়িকভাবে পুরান ঢাকার এ গোডাউন সরাতে দুটি প্রকল্প নেয়া হয়। তবে নিরাপদ কেমিক্যাল পল্লী এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর প্রচেষ্টা প্রায় ১০ বছর ধরে চললেও এখনো সরানো সম্ভব হয়নি। সিটি করপোরেশন ও টাস্কফোর্সের অভিযানের পর বাড্ডা, ধানমণ্ডি যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, মুগদা, বাসাবো ও মিরপুরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অনেক ব্যবসায়ী কেমিক্যালের মজুদ সরিয়ে নিয়েছেন।  কেউ কেউ সরিয়ে নিয়েছেন গাজীপুর, টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জে।

২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমলীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড- ফাইল ছবি

বিস্ফোরক পরিদপ্তরের পরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই ঐ এলাকার ঠিকানায় একটিও লাইসেন্স দেয়া হয়নি। অবৈধ কেমিক্যাল কারখানাগুলো স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার পরিচালনা করেন। বিস্ফোরক পরিদপ্তর শুধু ছাড়পত্র দিয়ে থাকেন। যে কারণে লাইসেন্স না দিলেও পুরান ঢাকায় অবৈধ কারখানা ও গুদামের অভাব নেই। প্রশাসনে কিছুটা তোড়জোড়ের পর অনেকে বাসাবাড়ি ও গলির মধ্যে কেমিক্যাল সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।’ পুরান ঢাকা ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

বাংলাদেশ অ্যাসিড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ পলাশ বলেন, কোনো নিয়মনীতি না থাকার কারণে দেশে অবৈধভাবে বিপজ্জনক কেমিক্যাল মজুদ করা হয়। যে কারণে নগরবাসী ঝুঁকিতে রয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আলী আজম বলেন, গত ক্রয় কমিটির সভায় কেমিক্যাল পল্লীর মাটি ভরাটের বিষয়টি আমরা উপস্থাপন করেছিলাম। কমিটির কিছু পর্যবেক্ষণ আছে, এ পর্যবেক্ষণ অনুসরণের নির্দেশনা আমরা এরই মধ্যে দিয়েছি। 

উল্লেখ্য, এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট হলো একটি রাসায়নিক পদার্থ যা প্রধানত: সার উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয় তবে আরো বহু শিল্প কারখানায় এটা কাজে লাগে। খনিতে যে বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয় তারও অন্যতম একটি উপাদান এটি। কিন্তু এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিজে কোন বিস্ফোরক পদার্থ নয়, তবে বিশেষ কিছু অবস্থায় তা বিস্ফেরকে পরিণত হতে পারে - বলছেন সাবেক ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফিলিপ ইনগ্রাম। একে বরং বলা যায় ‍‘অক্সিডাইজার’ অর্থাৎ যা আগুনে আরো অক্সিজেন টেনে আনে এবং আগুন আরো বেশি জ্বলে ওঠে।

মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংএর শিক্ষক গ্যাবিয়েল ডা সিলভা ব্রিটিশ দৈনিক দি গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘এ্যামোনিয়াম নাইট্রেটে আগুন ধরানো বা একটা বিস্ফোরণ ঘটার মতো অবস্থায় নিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন।’ তার ধারণা কোনভাবে এই এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট দূষিত হয়ে গেছে - হয়তো তেল বা অন্য কিছুর সংস্পর্শে এসে, এবং সেটাই এই বিস্ফোরণের কারণ।

ফ্রান্সের একটি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কারখানা- সংগৃহীত

আগুনের সংস্পর্শে এলে এটি অত্যন্ত সক্রিয় বিস্ফোরক হিসেবে কাজ করে। আর বিস্ফোরিত হলে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং অ্যামোনিয়ার মত বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়। এ কারণে এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ করে রাখার জন্য কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয় - বিশেষ করে মজুদ করার জায়গাকে এমনভাবে নিরাপদ করতে হয় যেন আগুন না লাগে। এছাড়া লক্ষ্য রাখতে হয় যেন কোনো নালা বা ড্রেইনে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জমা হয়ে বিস্ফোরণের ঝুঁকি তৈরি না করতে পারে।

এমএস/এসি
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি