ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

মহামারির কবলে ব্রিটিশ রাজপরিবার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩১, ৩ এপ্রিল ২০২০

বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। ভাইরাসটি থাবা বসিয়েছে ব্রিটিশ রাজপরিবারেও। আক্রান্ত হন প্রিন্স চার্লস। অবশ্য মহামারির কবলে পড়া রাজপরিবারের প্রথম ব্যক্তি নন তিনি। চৌদ্দ শতকের ব্ল্যাক ডেথ থেকে বিশ শতকের স্প্যানিশ ফ্লুর প্রকোপও ছুঁয়ে গিয়েছিল রাজপরিবারের চৌকাঠ। যেখানে মহামারির কাছে আত্মসমর্পণের ইতিহাস যেমন আছে, তেমনি আছে লড়াই করে বেঁচে যাওয়ার দৃষ্টান্তও।

প্লেগ: ৫৪২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শুরু হওয়া এ মহামারী চরম রূপ নিয়ে আসে ১৩৩৪ সালে। ইতিহাসে যা ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামে বেশি পরিচিত। এ রোগে এশিয়া ও ইউরোপের ২৫ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এ জ্বর এতটাই ভয়ংকর হয়ে উঠে যে এর কাছ থেকে রাজপরিবারও ছাড় পায়নি। রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড ছিলেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রথম ব্যক্তি, যিনি ব্ল্যাক ডেথে প্রথম আপনজন হারিয়েছিলেন। ১৩৪৮ সালে তার ১৪ বছর বয়সী কন্যা জোয়ান প্লেগে আক্রান্ত হন পেড্রো অব ক্যাসিলেকে বিয়ে করতে স্পেন যাওয়ার সময়। যার বাবা রাজা দ্বাদশ আলফনসোও দুই বছর পর মারা যান প্লেগে আক্রান্ত হয়ে। বাউবনিক প্লেগে ৫০ বছর পর তৃতীয় এডওয়ার্ডের দৌহিত্র তার প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলেন। ১৩৯৪ সালে রাজা দ্বিতীয় রিচার্ড তার স্ত্রী রানী অ্যানিকে বাঁচাতে পারেননি প্লেগের গ্রাস থেকে। এর প্রায় ১০০ বছর পর প্লেগ ফের আক্রমণ হানে রাজপরিবারে। ১৪৯২ সালে এলিজাবেথ উডভিলে মারা যান অজানা রোগে। কোনো ধরনের আয়োজন ছাড়াই তাকে সমাহিত করা হয়। ২০১৯ সালে তার মৃত্যুর প্রায় ৫০০ বছর পর ইংল্যান্ড ন্যাশনাল আর্কাইভস তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্লেগের কথা উল্লেখ করে। পাশাপাশি তার নাতির রোগভীতিই আয়োজনবিহীন শেষকৃত্যের সম্ভাব্য কারণ বলে জানানো হয়।

বসন্ত: প্রায় কয়েকশ বছর ধরে ইউরোপে তাণ্ডব চালায় বসন্ত। ধারণা করা হয়, রাজা আলফ্রেডের মেয়ে ৯০৭ খ্রিস্টাব্দে এ রোগের কবল থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন। তবে বসন্ত তার চূড়ান্ত রূপ নিয়ে হাজির হয় ষোলো শতকে। রাজা তৃতীয় হেনরির একমাত্র উত্তরাধিকারী রাজা ষষ্ঠ এডওয়ার্ড ১৫৫২ সালে বসন্তে আক্রান্ত হন। তখন তার বয়স মাত্র ১৪ বছর। যদিও দ্রুত তিনি এ রোগ থেকে সেরে উঠেছিলেন। এক বছর পর অবশ্য তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর রানী প্রথম এলিজাবেথও পড়েছিলেন বসন্তের কবলে। বসন্ত কেবল একটি মরণঘাতী রোগই ছিল না, এটি বেঁচে যাওয়াদের শরীরে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসত। পাশাপাশি রেখে যেত তার স্থায়ী চিহ্নও। 

ইনফ্লুয়েঞ্জা: এটি মূলত হাঁচি, কাশি, কফের মধ্য দিয়ে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ত। আঠারো শতক থেকে অনেকবার মহামারি আকারে হাজির হয় এটি এবং কেড়ে নেয় লাখ লাখ মানুষের প্রাণ। ১৮৮৯ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে ছড়িয়ে পড়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা। ইউরোপে এটি পরিচিতি লাভ করে ‘রাশিয়ান ফ্লু’ হিসেবে। এটি তিনবার লন্ডনে আঘাত হানে। যেখানে প্রতিবারই এর তীব্রতা ছিল ভয়ানক। ১৮৯২ সালে এটি বিপর্যয় নিয়ে আসে রাজপরিবারের জন্য। রানী ভিক্টোরিয়ার নাতি প্রিন্স আলবার্ট ভিক্টর এ ফ্লুতে প্রথম আক্রান্ত হন তার ২৮তম জন্মদিনের আগের দিন; যা এক সপ্তাহের মধ্যে তার প্রাণ কেড়ে নেয়। স্বামীর মৃত্যুর পর নাতিকে এভাবে মারা যেতে দেখে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন রানী ভিক্টোরিয়া। যে কারণে বাকি জীবন মৌনব্রত পালন করেন তিনি। এরপর ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লুতে ফের আক্রান্ত হয় রাজপরিবার। যে ফ্লুতে সব মিলিয়ে ৫০ মিলিয়ন লোক মারা গিয়েছিল। রাজা পঞ্চম জর্জ ১৯১৮ সালের মে মাসে এ রোগে আক্রান্ত হন। তবে আক্রান্ত হয়েও প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

পৃথিবীর ইতিহাস বলছে, মহামারি সভ্যতার গতিপথ বদলে দেয়। তবে রাজপরিবারের আঘাতের মধ্য দিয়ে সেটি পথটাকে আরো বেশি নির্দিষ্ট করে দেয়। এটা এক ধরনের সতর্কবার্তাও বটে। তবে এদিক থেকে করোনায় আশার বাণীই পেয়েছে ব্রিটিশ রাজপরিবার। সেরে উঠেছেন ভাইরাস আক্রান্ত চার্লস। সাতদিন আইসোলেশনে থাকার পর এখন সুস্থ তিনি।


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি