ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪

মাথায় টাক পড়ার কারণ জানেন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২৯, ২৬ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১৮:৫৮, ২৮ জুলাই ২০১৮

নিজের চুলের ঘনত্ব নিয়ে সন্তুষ্ট এমন মানুষ খুব কমই আছেন। প্রতি দিন স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট জীবনচক্র শেষ করে কিছু পুরনো চুল পড়ে যায় আর নতুন চুল গজায়। তবু প্রায় সব মানুষকেই বলতে শোনা যায়, মাথা একেবারে ফাঁকা হয়ে গেল! কিন্তু সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে মাথা একেবারে ফাঁকা কখনওই হয় না। মাথার ত্বকের লোমকূপের কোনও সমস্যা,  চুলের কোনও রোগ বা শরীরের অভ্যন্তরীণ কোনও সমস্যা থেকেই মাথা একেবারে ফাঁকা হয়। যাকে চলতি ভাষায় টাক পড়া বলে। তবে টাক কারও ব্যক্তিত্বের বিকাশে বাধা হতে পারে না। শেক্সপিয়র, গান্ধীজী, সুভাষচন্দ্র বসুসহ বহু বিখ্যাত ব্যক্তির টাক ছিল।

টাকের ব্যাপারে বুঝতে গেলে চুলের গোড়ার কথা একটু জানতে হবে। জন্মের সময় মানুষের মাথার ত্বকে প্রায় এক লাখ চুলের গোড়া বা হেয়ার ফলিকল থাকে। একটি চুলের জীবনচক্রের তিনটি দশা। প্রথম তিন বছর হল অ্যানাজেন দশা। নতুন চুল বেড়ে ওঠার সময়। এর পরে ২-৪ সপ্তাহের একটা স্বল্পস্থায়ী পর্যায় হল ক্যাটাজেন। এর পরে ৩-৪ মাসের টেলোজেন দশা শেষ করে চুল পড়ে যায়। আবার নতুন চক্রের চুল এসে শূন্যস্থান পূরণ করে।

কোনও শারীরিক ব্যাধি যদি নাও থাকে তবু চুলের ঘনত্ব এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম। তবে যে কোনও বয়সেই ৯০ শতাংশ অ্যানাজেন ও ১০ শতাংশ টেলোজেন চুল থাকার কথা। ঋতু বিশেষে আবার এই ভাগও বদলে যায়।

অস্বাভাবিক চুল পড়াকে ডাক্তারি পরিভাষায় অ্যালোপেসিয়া বলে। অ্যালোপেসিয়া তিন ধরনের হয়ে থাকে। তবে অধিকাংশ সময়ে যে টাক পড়া নিয়ে চর্চা শোনা যায় তা আসলে অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া বা পুরুষসুলভ টাক পড়া। একটা বিশেষ আকৃতিতে মাথা ফাঁকা হতে শুরু করে। প্রথমে চুল উঠে কপালের দু’ধার প্রশস্ত হয়ে যায়। তার পরে মাথার উপরের দিকের চুল উঠতে থাকে। অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের দ্বারা চুল ওঠা প্রভাবিত হয়ে থাকে। জন্ম থেকেই কোন কোন চুল এই হরমোন দ্বারা প্রভাবিত হবে আর কোন চুল হবে না তা নির্দিষ্ট থাকে। এটা কিছুটা বংশগত। কাজেই কোনও বিশেষ তেল চুলে মাখার পরে সব চুল উঠে গেল বলে অনেক সময় যা শোনা যায় তার ভিত্তি নেই।

মাথার উপরিভাগে কপালের দু’পাশে, মাথার পিছনের দিকের চুলের গোড়ায় অ্যান্ড্রোজেন সংবেদক (রিসেপটর) থাকে। বয়ঃসন্ধির পরে যখন অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা বাড়তে থাকে তখন কোনও কোনও পুরুষের ওই সব অঞ্চলের চুলের গোড়া ক্রমশ ছোট ও সংকুচিত হতে হতে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে সেই লোমকূপগুলোর আর কেশদণ্ড তৈরির ক্ষমতা থাকে না।

অ্যান্ড্রোজেনের জন্য চুল ওঠার চিকিৎসা শুরু হয় আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে। দেখা যায়, রক্তচাপ কমানোর ওষুধ মিনোক্সিডিল খেলে গায়ের লোম ও চুল বেড়ে যাচ্ছে। মিনোক্সিডিলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণায় দেখা গেল, এই ওষুধ মাথায় টাক হয়ে যাওয়া জায়গায় লাগালে চুল গজাতেও সাহায্য করে, শরীরেও বিশেষ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। তার পর থেকেই অ্যান্ড্রোজেন প্রভাবিত অ্যালোপেসিয়ায় ২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ মিনোক্সিডিল দিনে দু’বার লাগানোর পদ্ধতি চালু হয়। ৪ থেকে ৬ মাস লাগানোর পরে মোটামুটি এবং টানা এক বছর লাগানোর পর এর পুরো ফল পাওয়া যায়।

মিনোক্সিডিল দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে পুরুষদের মুখে লোমের আধিক্য দেখা যায়। অনেক সময় স্থানীয় ত্বকে চুলকানিও হয়। মিনোক্সিডিলের সঙ্গে ফেনেস্টেরাইল নামের ওষুধ খেলে পুরুষদের ক্ষেত্রে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়। তবে খুব সামান্য কয়েকটি ক্ষেত্রে ওষুধটি খাওয়ার সময়ে কিছু যৌন সমস্যা দেখা যায়।

মহিলাদের অ্যান্ড্রোজেন প্রভাবিত অ্যালোপেসিয়ার ক্ষেত্রে মিনোক্সিডিল দু’শতাংশ লাগানো হয়। অনেক সময়ে অ্যান্ড্রোজেন ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। চুল ওঠার মাত্রা বিবেচনা করে চিকিৎসক নির্দেশ দিলে তবেই ওষুধ খাওয়া উচিত। অ্যান্ড্রোজেন প্রভাবিত অ্যালোপেসিয়ায় এই ধরনের চিকিৎসায় যে ফল মেলে তা সাময়িক। যত দিন ওষুধ চলে তত দিনই কেবল ওষুধের প্রভাবে গজানো চুল মাথায় থাকে। ওষুধ বন্ধ হলে চুল ঝরে যায়।

এ ছাড়াও বহু কারণেই চুল ঝরতে পারে। কিছু কিছু স্থানীয় অসুখ অর্থাৎ একান্তই চুলের সমস্যা, যেমন অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা বা অ্যালোপেসিয়া টোটালিস। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে টাক পড়া বড়সড় রোগের লক্ষণ মাত্র। যেমন, থাইরয়েড রোগে চুল উঠতে উঠতে মাথা ফাঁকা হয়ে যায়। যে কোনও বড় রোগে যেমন জন্ডিস, ডেঙ্গি, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগে আক্রান্তরা পুষ্টির সমস্যায় ভোগেন। ফলে চুল পর্যন্ত পুষ্টি না পৌঁছনোয় চুল পড়ে যায়। তা ছাড়া টাক পড়ে সিস্টেমেটিক লুপাস এরিথেমেটোসাস নামে এক মারাত্মক রোগেও। আবার কিছু ক্ষেত্রে স্থানিক টাক পড়া হল মানসিক রোগের প্রকাশ। যেমন, চুল ছেঁড়ার বাতিক বা ট্রাইকোটিলোম্যানিয়া। পেটের রোগেও অনেক সময়ে টাক পড়ে থাকে। আবার অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের বা স্তন্যদায়িনী মায়েদেরও চুল উঠতে থাকে। কারণ তখন পুষ্টির ঘাটতি থাকে শরীরে।

অতিরিক্ত পরিমাণে চুল উঠলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ভাল। তাহলে চুল ওঠার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। উপযুক্ত চিকিৎসাও হয়। ভবিষ্যতে মাথা ফাঁকা হয়ে যাওয়া থেকে নিষ্কৃতি মেলে।

সূত্র: আনন্দবাজার

একে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি