ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪

মা দুর্গা আসছে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৪৮, ২০ অক্টোবর ২০২০

মা আসছে তাই সর্বত্র শুরু হয়ে গিয়েছে তারই প্রস্তুতি। এই মা দুর্গাকে নিয়ে আছে নানান কাহিনী। এই মা দুর্গা আসলে কে? তার জগৎজননী হয়ে ওঠার পেছনের কাহিনী কী? মা দুর্গার সেই কাহিনী বলতে গেলে উঠে আসে নানা তথ্য। সেই তথ্য জানতে হলে ঘাটতে হবে পুরাণও। তৈত্তেরীয় আরণ্যকে প্রথম দুর্গা শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে শব্দটা যে একটি প্রাচীন শব্দ তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। দুর্গা শব্দের অর্থ যিনি সর্ববিধ দুঃখ, দুর্গতি ও ভয় হরণ করেন তিনিই দুর্গা। 

স্কন্দপুরাণে বলা হয়েছে যে রুরুদৈত্যের পুত্র দুর্গাসুরকে বধ করায় ‘তত্রৈব চ বধিষ্যামি দুর্গমখ্য মহাসুরম্’। শুধু রুরুকেই নয় তিনি বিভিন্ন সময় বহু অত্যাচারী দৈত্যাদি যেমন মধুকৈটভ, শুম্ভনিশুম্ভ, মহিষাসুর, দুর্গামাসুর ইত্যাদি অত্যাচারী দৈত্যাদিকে বিনাশ করে জগৎবাসীর দুর্গতি নাশ করেছিলেন বলেই তিনি দুর্গা নামে পরিচিত। প্রচলিত ধারণা অনুসারে যিনি বিভিন্ন প্রকার বাধা বিঘ্ন, রোগ-শোক, পাপভয়, শত্রু ও বিপদ থেকে মুক্ত করেন তিনিই দুর্গা।

এই দুর্গা আবার জগতের কল্যাণকারী তাই তিনি জগৎজননী। তিনি ভক্তদের ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ দান করেন বলেই তিনি সর্ব কামার্থদায়িনী। তিনি জগতের অন্নদাতা, তাই তিনি অন্নদা। রুদ্রের ঘরনি তাই তিনি রুদ্রাণী। শত অক্ষির দ্বারা তিনি সকল কিছুই লক্ষ করে থাকেন বলেই তিনি শতাক্ষী। তিনি পরম বৈষ্ণব তাই তিনি বৈষ্ণবী, তার অঙ্গকান্তি গৌরবর্ণা তাই তিনি গৌরী এবং পর্বত দুহিতা তাই পার্বতী। তিনি বহু নামের অধিকারনী। স্বরূপ তিনি এক ও অভিন্ন এবং অনন্য শক্তির রূপে রূপান্তরে প্রকাশ হওয়ায় তিনি মহাশক্তি মহামায়া। 
বিভিন্ন দেবতার তেজপুঞ্জে সৃষ্টি হয়েও তিনি সমস্ত তেজের উৎস রূপেই প্রতিভাত তেজময়ী। এই দেবীই মহিষাসুরকে দমন করার পর শাস্ত্রমতে শিবের পায়ে প্রবেশ করে। তাই বলা হয়ে থাকে এই দুর্গা আসলে রুদ্রপন্তী উমা, অম্বিকা, হৈমবতী, দুর্গা, গৌরী, ভবানীর মিলিত দৈব সত্তা। ভাবপ্রবণ বাঙালির কাছে তিনি পরিপূর্ণ ভাবেই শিবপত্নী শিবানী বা দুর্গা। তাই দুর্গা প্রতিমার চালচিত্রে দুর্গার মাথার উপরে শিবের অবস্থান। সেই সঙ্গে তার দুর্গার দুপাশে তাঁর সন্তান সন্ততির অবস্থান। যে রূপে শারদীয়া দুর্গা পূজাতে দুর্গা পুজিত হন। 

শুরু হতে যাচ্ছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গা পূজা। অনেকেই ঘুরে ঘুরে আশপাশের পূজা মন্ডপগুলোতে যাবেন। দূর্গাপূজাটি যাকে ঘিরে আবর্তিত হয় তার নামই দেবী দূর্গা। দূর্গার রয়েছে দশটি হাত। সনাতন ধর্মালম্বীদের মতে, দূর্গার সৃষ্টি হয়েছে দেবগণকে বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য। দেবগণের সমবেত শক্তির প্রতীক হলেন দেবী দূর্গা। দূর্গার অনেক নামের মধ্যে একটি হচ্ছে শ্রী শ্রী চন্ডী। এই শ্রী শ্রী চন্ডীর মার্কন্ডেয় পুরানের অর্ন্তগত। এতে তিনটি চরিত্র আছে।

প্রথমটিতে শ্রী ম্রী চন্ডী মধু-কৈটভ নামের দুই অসুর বধ করেন। দ্বিতীয়টিতে মহিষাসুর বধ করেন। তৃতীয়টিতে শুম্ব ও নিশুম্ভ নামের দুই অসুরকে বধ করেন। ব্রহ্মার বরে শক্তিশালী মহিষাসুর স্বর্গ, মর্ত ও পাতাল জয় করে তিন লোকে অসুরের রাজত্ব স্থাপন করলে দেবগণ ও পৃথিবীর মানুষেরা দুর্দশায় পতিত হন। অসুরেরা এসময় মানুষের সব পূজা অর্চনা বন্ধ করে দেয়। আর স্বর্গের দেবতারা অসুরদের কাছে পরাজিত হয়ে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হন। এসময় দেবতারা বিষনু-মহাদেব ও ব্রহ্মার শরনাপন্ন হন। ত্রিদেব ও অন্যসকল দেবতাদের তেজ থেকে যে দেবীর সৃষ্টি হয় তিনিই হলেন দেবী দূর্গা। দু-হাতে সকল অস্ত্র ধরা সম্ভব নয় বলে দেবীকে দশ হাত ধারন করতে হয়েছে।

সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচ দিন যথাক্রমে দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়াদশমী নামে পরিচিত। আশ্চিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের সূচনা লগ্নের অমাবস্যার নাম মহালয়া।

আবার দুর্গার দশ হাত দশ দিক রক্ষা করারও প্রতীক। দশ দিক হল পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, ঈশাণ, বায়ু, অগ্নি, ণৈরত, ঊধ্ব এবং অধঃ। এই দশ প্রহরণ নিয়ে প্রতি আক্রমন করছে মহিষাসুরকে। অনেকে বলেন মানবজাতির সকল অশুভ বিনাশ করার জন্যই তিনি দশ প্রহর ধারিনী।

দুর্গার সঙ্গে যারা
০ দুর্গার বাহন সিংহ। শ্রীশ্রীচণ্ডী-তে সিংহকে মহাসিংহ, বাহনকেশরী, ধূতসট ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করা হয়েছে।
০ মহিষাসুর অসুর, দেবদ্রোহী। তাই দেবী দূর্গার পদতলে দলিত এই অসুর ‘সু’ এবং ‘কু’-এর মধ্যকার দ্বন্দের অশুভ শক্তির উপর শুভশক্তির বিজয়ের প্রতীক।
০ গণেশ কার্যসিদ্ধির দেবতা। হিন্দু পুরাণের নিয়ম অনুসারে, অন্যান্য দেবতার আগে গণেশের পূজা করতে হয়। গণেশের পূজা আগে না করে অন্য কোনো দেবতার পূজা করা শাস্ত্রে নিষিদ্ধ।
০ গণেশের বাহন মূষিক বা ইঁদুর।
০ লক্ষ্মী শ্রী, সমৃদ্ধি, বিকাশ ও অভ্যূদয়ের প্রতীক। শুধু ধন নয়, লক্ষ্মী চরিত্রধনেরও প্রতীক।
০ লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা।
০ সরস্বতী বাণী রুপিণী বাগদেবী; তিনি জ্ঞানশক্তির প্রতীক।
০ সরস্বতীর বাহন হংস।
০ দেবসেনাপতি কার্তিক সৌন্দর্য ও শৌর্যবীর্যের প্রতীক।
০ কার্তিকের বাহন ময়ূর।
০ দেবী দুর্গা ত্রি-নয়না বলে তাঁকে ‘ত্রৈম্বক্যে’ বলা হয়। তাঁর বাম চোখ হলো বাসনা (চন্দ্র), ডান চোখ কর্ম (সূর্য) ও মাঝখানের চোখ হলো জ্ঞান (অগ্নি)।

শাস্ত্র তথা পঞ্জিকা মতে, ২০২০ সালে মা দুর্গার মর্ত্যে আগমন দোলায়। এবারের দুর্গা পূজায় মা আসছেন দোলায় চড়ে। শাস্ত্র মতে এবার দুর্গাপূজায় গমন গজে। অর্থাৎ ধীর, শান্ত হাতিতে চড়ে মা দুর্গা এবার পাড়ি দেবেন স্বর্গে। যারও একটি বিশেষ ফল রয়েছে।

শাস্ত্র মতে বলা হচ্ছে, গজে চড়ে মায়ের গমন শুভ। অর্থাৎ এর ফলে বিশ্বে শুভ কোনও বার্তা নেমে আসবে। গজের গমনে সাধারণত শস্য শ্যামলা বসুন্ধরা হয়। আর এবার তারই প্রভাব পড়তে চলেছে বিশ্বে।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি