ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

যাকাতের অর্থে মওকুফ হবে আয়কর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৩৮, ১ জুন ২০১৮ | আপডেট: ১০:৩৭, ১২ জুন ২০১৮

ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অন্যতম। ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ যাকাত ব্যবস্থা চালু হয়। রাষ্ট্রের দরিদ্র ব্যক্তিদের জন্য ধনীদের প্রদেয় এ যাকাত বিশ্বের কোন কোন দেশে বাধ্যতামূলক, কোন কোন দেশে প্রচলিত ধারাই, আবার কোন কোন দেশে একেবারেই নেই।

শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে যাকাত নেই,  সেখানে আছে বিভিন্ন ধরণের কর। সৌদি আরবে আবার যাকাত থাকলেও কর নেই। আর বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের করের পাশাপাশি আছে যাকার দেওয়ারও ব্যবস্থাও। তাই সরকারের কোষাগারে কর প্রদানকারি অনেকের জিজ্ঞাসা, যে ব্যক্তি সরকারকে আয়কর দিচ্ছে, সে কেন আবার যাকাত দিবে। তবে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে ১৯৮২ সালে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেট। গেজেটে যাকাত দিলে সমপরিমান অর্থ আয়কর থেকে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ গেজেটের যাকাত ফান্ড অর্ডিনেন্স-১৯৮২ এর ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদের আয়কর মুওকুফ কটেশনে বলা হয়ছে, ‘ইনকাম ট্যাক্স অ্যাক্ট ১৯২২’ অনুযায়ী যে কোন ব্যক্তি যাকাত ফান্ডে যে পরিমনার অর্থ দিবে সে পরিমান অর্থ তাকে আয়কর হিসেবে দেওয়া লাগবে না।

রাজধানীর আগাওগাঁওয়ে ইসলামী ফাউন্ডেশনের হালাল সনদ ও যাকাত ফান্ড বিভাগের পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, আমাদের দেশে অনেকেই জানে না যে যাকাত দিলে আয়কর দেওয়া লাগে না। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির আয়কর যদি হয় ১ লাখ টাকা হয়। সে যদি ৪০ হাজার টাকা যাকাত হিসেবে সরকারের যাকাত ফান্ডে জমা দেয়, তবে তার আয়কর দেওয়ার সময় মাত্র ৬০ হাজার টাকা দিলেই হবে। বাকী ৪০ হাজারের জন্য যাকাত ফান্ডের রশিদ প্রদর্শন করলেই হবে। টাকা দেওয়া লাগবে না।

প্রতি বছর ব্যয় নির্বাহের পর কোন মুসলিমের কাছে যদি উদ্বৃত্ত সম্পদ থাকে তাহলে সেখান থেকে আড়াই শতাংশ হারে যাকাত দিতে হয়। অন্যদিকে আয়কর হচ্ছে ব্যক্তি বা সত্ত্বার আয় বা লভ্যাংশরে উপর প্রদেয় কর। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর আওতায় কর বলতে অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রদেয় আয়কর, অতিরিক্ত কর, বাড়তি লাভের কর, এতদসংক্রান্ত জরিমানা, সুদ বা আদায় যোগ্য অর্থকে বুঝায়। অন্য ভাবে বলা যায় যে, কর হচ্ছে রাষ্ট্রের সব জনসাধারনের স্বার্থে রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে প্রদত্ত বাধ্যতামূলক অর্থ।

ইসলামী ফাউন্ডেশনের যাকাত বোর্ড হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই মোল্যা বলেন, সরকারি যাকাত ফান্ডে যাকাত দেওয়ার ব্যাপারে অনেকের অনীহা ও ভুল ধারণা আছে। যার কারণে আমাদের যেভাবে যাকাত আদায় হওয়ার কথা সেভাবে হয় না। যেমন যাকাতের অর্থ যে আয়কর থেকে মওকুফ পাওয়া যায় এটা অনেকে জানে না। অনেকে মনে করেন যাকাত ফান্ডের অর্থ সঠিক খাতে বণ্টন হয় না। আমি বলি এখানে যাকাত দিলে পুরোটাই বণ্টন করা হয় যাচাই-বাছাই করেই।

তিনি বলেন, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে আর্তমানবতার সেবাই আমরা ৩ কোটি ১৭ লাখ ৭ হাজার ৩৬০ টাকা আদায় করি। যার পুরোটাই আবার আমরা ১২টি খাতে ব্যয় করেছি। ব্যয়ের খাতগুলির মধ্যে দেশের ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে যাকাত প্রদান ১ কোটি ৩২ লাখ ৩ হাজার ৬৮০ টাকা, যাকাত বোর্ড শিশু হাসপাতালে গরিব রোগীদের মধ্যে ওষুধ বিতরণ ১০ লাখ টাকা, সেলাই প্রশিক্ষণার্থী দুঃস্থ নারীদের যাকাত ভাতা প্রদান ৫২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, সেলাই প্রশিক্ষণ সমাপ্তকারী মুসলিম দুঃস্থ নারীদের সেলাই মেশিন প্রদান ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, দুঃস্থ প্রতিবন্ধী পুনর্বাসনে পাঁচ লাখ টাকা, দুঃস্থ পুরুষদের কর্মসংস্থানে ১৬ লাক টাকা, দুঃস্থ যাকাত ভাতা ১০ লাখ টাকা, দুস্থ নওমুসলিম স্বালম্বিকরণে চার লাখ টাকা, দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তিতে ১৫ লাখ টাকা, দুঃস্থ রোগীদের চিকিৎসা সহায়তায় ২৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬৮০ টাকা, তিনটি পার্বত্য জেলায় দুঃস্থদের জন্য আর্থিক সহায়তায় দুই লাখ ১০ হাজার, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুঃস্থদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন ২৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।

যাকাত ফান্ড বিভাগের পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, গতবার আমাদের তিন কোটি টাকা যাকাত আদায় হলেও এবার আরও বেড়ে যাবে। কারণ এবারই প্রথম আমরা যাকাত আদায়কারী যে কোনো ব্যক্তির জন্য ১০ শতাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। তাতে এলাকার বিভিন্ন মক্তবে মাসিক সামান্য সম্মানি প্রাপ্যরাও যাকাত সংগ্রহে এগিয়ে আসবেন। তারা ১০ শতাংশ পাওয়ার প্রত্যাশায় এগিয়ে আসলে আমাদের নতুন করে প্রায় ৮০ হাজার লোক যাকাত সংগ্রহে কাজ করবে। তাছাড়া সরকারি যাকাত ফান্ডে যাকাত দিতে আমরা উপজেলা পর্যায়ে মাইকিং, বেনার, ফেস্টুন, সেমিনার ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করছি। তাতে এবার যাকাত আদায়ে বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করছি।

এসএইচ/

 

 

 

 

 

 

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি