ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

সময় নিয়ে কুরআনের নির্দেশ

প্রকাশিত : ১৮:১৩, ১৮ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৯:৫৪, ১৮ মে ২০১৯

কর্মের স্বাধীনতা দেওয়া হলেও মানুষ জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। তার কর্মের যথাযথ ফল সে পাবে। ছোট থেকে বড় হওয়ার সময় দিয়েছেন, সময়কে কিভাবে অতিবাহিত করেছি তার হিসাব আল্লাহকে দিতে হবে।

সময় নিয়ে কুরআনে আল্লাহপাক যা বলেছেন : ‘সত্য অস্বীকারকারীদের এটা মনে করার কারণ নেই যে, আমি তাদের মঙ্গলের জন্যে অবকাশ দিয়ে রেখেছি। আসলে সময় দিয়েছি তাদের পাপের ঘট পূর্ণ হওয়ার জন্যে। তাদের জন্যেও রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সূরা আল ইমরান ১৭৮)

‘এভাবে আমি প্রত্যেক জনপদে ক্ষমতাবানদেরই সবচেয়ে বড় দুর্বৃত্তে পরিণত হতে দেই। ওরা চক্রান্তের জাল বোনে আর শেষ পর্যন্ত সে জালে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু (আফসোস!) জাল বোনার সময় ওরা তা বোঝে না!’ (সূরা আনআম ১২৩)

‘মহামহিম আল্লাহ সূর্যকে তৈরি করেছেন বিচ্ছুরিত আলোর উৎসরূপে আর চাঁদকে করেছেন জ্যোতির্ময় (সে আলোর প্রতিফলন)। তিনি চাঁদের কক্ষপথ ও কলাকাল নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে তোমরা বছর দিন ও সময়ের হিসাব নির্ণয় করতে পারো। আল্লাহ এসব অনর্থক সৃষ্টি করেননি। জ্ঞানীদের জন্যে তিনি তার বাণী বিশদভাবে বয়ান করেন।’ (সূরা ইউনুস ৫)

‘পার্থিব ভালো জিনিস পাওয়ার জন্যে মানুষ যেভাবে তাড়াহুড়ো করে, আল্লাহ যদি মানুষের পাপের শাস্তিদানে সে রকম তাড়াহুড়ো করতেন, তবে সহসাই তারা শেষ হয়ে যেত। তাই যারা বিশ্বাস করে না যে, পরকালে আমার সামনে হাজির হতে হবে, তাদেরও আমি কিছু সময়ের জন্যে ছেড়ে দিয়ে রেখেছি, অবাধ্যতা সীমালঙ্ঘনের মধ্যে উদভ্রান্তের ন্যায় ঘুরপাক খাওয়ার জন্যে।’ (সূরা ইউনুস ১১)

‘(আল্লাহ বলেন) হে মানুষ! পুনরুত্থানের সত্যতার ব্যাপারে তুমি কি সন্দিগ্ধ? তবে একটু সময় নিয়ে চিন্তা করে দেখ- আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি ধুলোমাটি থেকে, তারপর শুক্রবিন্দু থেকে, তারপর নিষিক্ত ডিম্ব থেকে, তারপর (বিকাশমান) ভ্রূণ-পূর্ণ বা অপূর্ণ মাংসপিণ্ড থেকে। তোমাদের কাছে প্রকৃত সত্য সুস্পষ্ট করার জন্যেই (এ বর্ণনা)। আমি যে শুক্রাণুকেই ইচ্ছা করি, নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত জরায়ুতে স্থিতিশীল রাখি। তারপর শিশুরূপে ভূমিষ্ঠ করি। তারপর কালক্রমে পরিণত বয়সে উপনীত করি। যৌবন আসার আগেই কারো কারো মৃত্যু হয়, আবার কাউকে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা হয়। ফলে এক সময় সে যা খুব ভালোভাবে জানত, তাও ভুলে যায়। (হে মানুষ! এরপরও যদি পুনরুত্থান সম্পর্কে তোমার কোন সন্দহ থাকে, তবে বিবেচনা করো জমিনের কথা) তুমি দেখ নিষ্প্রাণ শুষ্ক মাটি। তারপর আমি বৃষ্টিবর্ষণ করলে মাটিতে শিহরণ জাগে। অঙ্কুরিত হয় উদ্ভিদ লতাগুল্ম। প্রান্তর হয়ে ওঠে সবুজ শস্যশ্যামল।’ (সূরা হজ ৫)

 ‘তুমি রাতে প্রার্থনার জন্যে দাঁড়াও, রাতের অর্ধেক বা তার চেয়ে কিছু কম বা কিছু বেশি সময় নিয়ে। তুমি সে সময় কুরআন তেলাওয়াত করো শান্তভাবে, সুস্পষ্ট উচ্চারণে, অর্থের প্রতি মনোযোগী হয়ে।’ (সূরা মুজাম্মিল ২-৪)

‘তুমি রাতে তার (আল্লাহ) কাছে সেজদায় অবনত হও। আর রাতে দীর্ঘ সময় তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো।’ (সূরা দাহর ২৬)

সবকিছুর সময় নির্ধারিত : ‘ওরা তোমাকে আল্লাহর শাস্তি ত্বরান্বিত করার জন্যে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে? দিক! আল্লাহ যদি শাস্তির জন্যে সময় নির্ধারিত করে না রাখতেন, তবে অনেক আগেই আজাব ওদের গ্রাস করত! অবশ্যই আকস্মিকভাবে অসতর্ক অবস্থায়ই আজাব ওদের গ্রাস করবে।’ (সূরা আনকাবুত ৫৩)

‘ওরা কি কখনো নিজেদের সহজাত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করতে শিখবে না? আল্লাহ এক অন্তর্নিহিত সত্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে মহাকাশ ও পৃথিবীর সবকিছু যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। কিন্তু অনেকেই (মহাবিচার দিবসে) প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা অবিশ্বাস করে।’ (সূরা রুম ৮)

‘শুধু আমার দয়াই ওদের তীরে পৌঁছায় এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জীবন উপভোগ করার সুযোগ দেয়।’ (সূরা ইয়াসীন ৪৪)

‘তিনি আল্লাহ (একমাত্র তারই এই ক্ষমতা রয়েছে), যিনি মৃত্যু এলে বা ঘুমের সময় আত্মাকে তুলে নেন। তারপর যার মৃত্যু অবধারিত তার আত্মা রেখে দেন। আর অন্যদের আত্মা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ফিরিয়ে দেন। সহজাত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগকারীদের জন্যে এর মধ্যে শিক্ষণীয় নিদর্শন রয়েছে!’ (সূরা জুমার ৪২)

ভালো-মন্দ সময় : ‘যখন ভালো সময় আসত, তখন ওরা বলত, ‘এটাই আমাদের প্রাপ্য।’ আর যখন খারাপ সময় আসত তখন মুসা ও তার সঙ্গীদেরকে ওরা এ দুর্ভাগ্যের কারণ মনে করত। কিন্তু ওদের দুর্ভাগ্য যে আল্লাহ (প্রণীত নিয়মে) নির্ধারিত ছিল, সে বিষয়ে ওদের কোন বোধোদয়ই হয়নি।’ (সূরা আরাফ ১৩১)

‘এরপরও যদি ওরা তোমার ডাক না শোনে, তবে তুমি মনে রেখো, আমি তোমাকে ওদের কর্মবিধায়ক করে পাঠাইনি। তোমার কাজ শুধু বাণী পৌঁছে দেওয়া। (মনে রেখো, আসলে মানুষের স্বভাব হচ্ছে) আমি যখন তাকে আমার অনুগ্রহের স্বাদ নিতে দেই, তখন সে আনন্দে ডুবে যায় (আর আমাকে বিস্মৃত হয়)। আর যখন তার কৃতকর্মের পরিণতিতে দুর্ভোগ আপতিত হয়, তখন সে একেবারেই অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে। [অর্থাৎ তখন সে ভালো সময়গুলোর জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে মন্দ সময়ের উল্লেখ করে বলতে থাকে, ‘আল্লাহ যদি থাকত তবে জীবনে এত দুর্ভোগ হয় কী করে? আল্লাহ কি দেখে না?’] (সূরা শুরা ৪৮)

‘হে নবী! যারা আমার সত্যবাণীকে প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের বিষয়টি আমার হাতে ছেড়ে দাও। আমি একে একে এমনভাবে ওদের শক্তি ক্ষয় করে দেবো যে, ওরা বুঝতেও পারবে না। যদিও আমি সময় ও সুযোগ দিয়ে থাকি, কিন্তু আমার সূক্ষ্ম কৌশল অত্যন্ত কার্যকর।’ (সূরা কলম ৪৪-৪৫)

অতএব, আল্লাহর দেওয়া সময়কে সৎ পথে, কৃতজ্ঞতার পথে, বিশ্বাসের পথে, ইবাদতের পথে, মানুষের সহযোগিতার পথে ব্যয় করি।

 

এএইচ/ এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি