ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

প্রমাণ ছাড়া ‘১০০% পিওর’ বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:১২, ১২ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ২২:৩৭, ১২ জুলাই ২০১৮

বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশের অনেক নামকরা খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন এবং লেবেলের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছে। আর এতে ব্যাপকভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছেন ক্রেতারা।

কিন্তু দেশের খাদ্য আইন অনুসারে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ বেআইনি। ফলে পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে খাদ্য উৎপাদনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষকে সতর্ক করার জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রথমবারের মতো এক উদ্যোগ নিয়েছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ-এর সদস্য মাহবুব কবির বিবিসি বাংলাকে বলেন, বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন এবং লেবেলিং-এর মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু আইন অনুসারে কোন বিজ্ঞাপনে পণ্য সম্পর্কে মিথ্যাচার কিম্বা ক্রেতাকে প্ররোচিত করা যাবে না।

এরকম একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, "রং ফর্সাকারী ক্রিম হিসেবে প্রচারিত মেয়েদের একটি ক্রিমের বিজ্ঞাপনে কিছুদিন আগেও বলা হতো `বিভিন্ন দেশের সব ক্রিমকে হারিয়ে এলো অমুক ক্রিম।` তখন আমরা প্রশ্ন করলাম তারা কোন কোন ক্রিমের সঙ্গে কম্পিটিশন দেয় এসেছে? কিসের ভিত্তিতে তারা এসব বলছে? পরবর্তীতে ওই বিজ্ঞাপন কিন্তু তুলে নেওয়া হয়েছে।"

"আবার বাচ্চাদের কোনও খাবারের বিজ্ঞাপনে হয়তো বলা হচ্ছে `আরও স্ট্রংগার, টলার, শার্পার করে তুলবে` এসব যে তারা বলেন কিসের ভিত্তিতে বলেন- আমরা সেটা জানতে চেয়েছি। তারা তাদের কাগজপত্র দিয়েছে। দেখা যাক কি তথ্য আছে তাদের কাছে।"

কবির বলেন, "এমন কোন বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না যাতে মানুষ প্রতারিত হয়। কিন্তু বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনই তাই।"

এখন অনেক ক্রেতাই নিয়মিত সুপারশপে বাজার করেন। আর নানারকম চটকদার বিজ্ঞাপন তাদের আকৃষ্ট করে অনেক নতুন পণ্যের দিকে।
"কেউ কেউ বিজ্ঞাপনে হয়তো বলছে, একটু বেশি পিওর- সেটা কিভাবে বলছে? এর মাধ্যমে তারা প্রতারণা করছে।"

তিনি জানান, ১৫ দিন আগেই একটি সুপরিচিত কোম্পানির শরবতের উপাদান সংক্রান্ত বিভ্রান্তির কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং তাদেরকে চার লাখ টাকার জরিমানা করা হয় ।

কবির বলেন, কোন কোন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন করছে `পৃথিবীর সেরা হালাল পানীয়` বলে। কিন্তু এই সার্টিফিকেট তাদের কে দিল? আবার `একশোর ওপরে অসুখ ভালো হয়` এ ধরনের তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন করা অবশ্যই বিধিমালা পরিপন্থী।"

এমনকি `আমার পণ্যই সেরা` এমন বক্তব্যও বলা যাবেনা বলে তিনি উল্লেখ করেন কেননা তাতে অন্যের পণ্যকে খাটো করা হচ্ছে।

এ কারণেই কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছে পত্র-পত্রিকা মারফত বিজ্ঞপ্তি প্রচারে।

শাস্তিযোগ্য অপরাধ
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সাধারণ জনগণ ও খাদ্য ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রচার করা এক গণ-বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "কোন কোন খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্যের গুরুত্ব বৃদ্ধি করতে পণ্যের লেবেলে এমনকি ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতেও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছে।"

উদাহরণ হিসেবে বলা হয়-"উৎপাদিত পণ্যটি সম্পূর্ণ ক্যামিকেল মুক্ত, বাজারের সেরা, আমারটাই সেরা, বিশ্বের সেরা ড্রিংকস, একটু বেশী পিওর, খেলে অসম্ভব হবে সম্ভব, রাতারাতি কমে যাবে বয়স, ভেজাল প্রমাণে লাখ টাকা পুরস্কার, ১০০% পিওর, ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল, রোগ থেকে দেয় সুরক্ষা, পণ্যটি যেন অমৃত সুধা, অন্যান্য পণ্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ইত্যাদি অভিব্যক্তি দাবি করছেন যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।"

এতে আরও বলা হয়, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর শাস্তি সবোর্চ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয়-দণ্ড হতে পারে।

কবির বলেন, "যাকেই ধরি তারা বলে আমরা তো আপনাদের আইন জানি না। এ কারণে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সুযোগ দিচ্ছি আমরা। এর মধ্যে যার যার লেভেলিং-এ ত্রুটি আছে সেসমস্ত পণ্য নতুন করে বাজারে আনতে হবে।"

তিনি বলেন, তা নাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কী বলছেন বিজ্ঞাপন নির্মাতারা?
একজন সুপরিচিত বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আমরা কোন এজেন্সি না। আমরা কেবলই বিজ্ঞাপন নির্মাতা। পণ্য সম্পর্কে রিসার্চ করা বা তথ্য যাচাই করা, স্ক্রিপ্ট লেখা আমাদের এখতিয়ারে পড়ে না। এজেন্সি থেকে চিত্রনাট্য যখন আসে তখন আমরা তার একটি লাইনও বদলাতে পারি না। নীতিগতভাবে আমাদের নির্মাতাদের কিছু করার থাকে না।"

তিনি বলেন, "বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত সঠিক কোন নীতিমালা নাই। যদি কোন নীতিমালা না থাকে তাহলে কোন লাভ হবে না।"

অন্যান্য দেশে এধরনের মন্তব্য বা বক্তব্য থাকলে যে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারে। ফলে সেইভাবে বিষয়টা ফিল্টার্ড হতে পারে, আদালতে যেতে পারে। এখানে সে সুযোগ নেই, মন্তব্য অমিতাভ রেজা চৌধুরীর।

তথ্যসূত্র: বিবিসি।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি