ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

টকটকে লাল সিঁদুরে মুকুটে বসন্ত বাউরি

প্রকাশিত : ১২:১০, ১ জুলাই ২০১৯

মাথায় টকটকে লাল সিঁদুরে মুকুট। রঙ-রুপে অনন্য সুন্দর পাখিটির নাম বসন্ত বাউরি। বট-পাকুড়ের মতো বুনোফলে, পেঁপে, পেয়ারা, জাম, আতা, সফেদাসহ শীতে খেজুর গাছে রসের হাঁড়িতে দেখা মেলে বসন্ত বাউরির। অনেকের ধারণা, মাথায় সিঁদুরে লাল রাণীর মুকুটে ঋতুরাজ বসন্তে বেশি দেখা যায় বলেই পাখিটির এমন নাম।

বসন্ত বাউরি পাখিটি মেগালাইমিদি গোত্রের। বৈজ্ঞানিক নাম Megalaima Haemacephala। ইংরেজিতে Throated Barbet নামে পরিচিত। ঘন পাতার বড় গাছে বেশি বিচরণ এদের। ঘন পাতার আড়ালে থাকতেই ভালোবাসে। খাবারের অভাবে কখনো কখনো বাড়ির আতা, জামরুল, পেঁপে, সফেদা, জলপাই কিংবা গ্রামীণ মেঠোপথের পাশের খেজুর গাছে রসের হাঁড়িতেও দেখা মেলে। তবে বসন্তে বটের লাল টুকটুকে ফলের সঙ্গে মাথার সিঁদুরে লাল রঙটাতে শতভাগ মানায় বৃক্ষচারি এই পাখিটি।

কিছুটা ছোট হওয়ায় দেখতে হঠাৎ টিয়ে পাখির মতো মনে হতে পারে। ২২-২৪ সেন্টিমিটার লম্বা এ পাখিটি। কপাল ও বুক টকটকে লাল। কপাল ও মাথার টকটকে লালের মধ্যেও আছে কালো ছোপ। চোখের দু’পাশে ও গলায় আসমানি সবুজে ঘেরা। ঘাসরঙা সবুজ শরীর। মুখাবয়ব কালচে। চোখ কালচে-ধাতব। শক্ত-মজবুদ ঠোট হলুদ-কালচে। ঠোঁটের গোড়ায় বিড়ালের গোফের মতো কয়েকটি শক্ত লোম আছে।

লীলাভ-সবুজ প্রান্তের খাটো লেজ। পা হলদে-বাদামি। কেউ কেউ পাখিটিকে বসন্তবৌরি নামেও চিনে। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির মধ্যে আছে রঙ-রুপের পার্থক্য। পুরুষ পাখিটি একটু বড়সড়ো। টকটকে লাল রঙ নেই কপাল ও মাথায়। মাথা, ঘাঢ়, গলা বাদামি ধুসর রঙের। পাখার নীচের পালক ধুসর-কালো। বনভূমি, বুনো ফল-ফলাদি কমে যাওয়ায় বাসস্থান, প্রজননে বাসা তৈরি, খাদ্য সংঙ্কটে কমছে এই দৃষ্টি নন্দন বসন্ত বাউরি পাখির সংখ্যা।

বট-পাকুড়ের মতো বুনো ফল-ফলাদি প্রধান খাদ্য। পেঁপে, পেয়ার, জাম, আতা, সফেদা, খেজুরের রসেও আসক্তি আছে। খাবারের অভাবে পোকামাকড়ও খায় এরা।

কুট-উ-রুক স্বরে ডাকে। অনেক দূর থেকেও ডাক শোনা যায়। এদের গতি স্বাভাবিক। জোড়ায় জোড়ায় থাকতে ভালবাসে। অনেক সময় ছোট দল বেঁধেও থাকে এরা।  

খুলনা বিভাগীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও বন্যপ্রাণি ব্যাবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সুন্দর দৃষ্টি নন্দন অবয়বের নরম ফলাহারী পাখি বসন্ত বাউরি। বসন্তে বেশি নজরে আসলেও বছরের অন্য সময়েও এদেরকে কম-বেশি দেখা যায়। ভারতের হিমালয়ে এদের দেখা মেলে বেশি সংখায়।

আমাদের দেশে পাঁচ-ছয় প্রজাতির বসন্ত বাউরি দেখা যায়। নিজেরা গর্ত করে না, তবে অন্যের ব্যাবহৃত খোড়ল কিংবা প্রাকৃতি ভাবে গড়ে ওঠা গাছের কোঠরে বা ফোকরে ফেব্রুয়ারি-এপ্রিলে এরা বাসা বানায় এবং ৩-৪টি ডিম দেয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বেড় হতে ১৫-১৬ দিন সময় নেয়। ২০-২২ দিনে বাচ্চারা ডানা মেলে আকাশে।

পাখি বিশেষজ্ঞ পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অবসর প্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক পিযুষ কান্তি হরি বলেন, ‘নরম ফলই বসন্ত বাউরির প্রধান খাবার। তবে পোকামাকড়ও খায় এরা। ফুল-ফসল আর ফল-ফলাদিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ বৈশ্বয়িক আবহাওয়ার পরিবর্তন, মানুষের রূঢ় আচরণ, পরিবেশ প্রকৃতির বিপর্যয় ও বনভূমি উজাড় হয়ে খাবারের সংকটে কমে যাচ্ছে বসন্ত বাউরির মতো অপরুপা সুন্দর পাখিগুলো।’

এমএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি