ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কার্যকর জনসংযোগ কিভাবে করবেন

মাসুদ আলম

প্রকাশিত : ২২:৩৭, ২৫ জুলাই ২০১৯

বিশ্বখ্যাত ধনকুবের রকফেলারের পরিবারের দুর্ণাম ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রে। জনগণের কাছে তারা পরিচিত ছিলেন কেবল টাকার কুমির, গরীবের রক্ত শোষণকারী, কৃপণ, অহঙ্কারী প্রভৃতি নানা বিশেষণে।

সিনিয়র রকফেলার বিষয়টির প্রতি তেমন আমল না দিলেও তার ছেলে জুনিয়র রকফেলার পরিবারিক দুর্ণামের বিষয়টি নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলেন। জুনিয়র রকফেলার পরিবারের হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার জন্য নিয়োগ দিলেন জনসংযোগ কর্মকর্তা আইভি লেডবেটার লিকে।
১৯১৪ সালে মিস্টার লি রকফেলারকে একজন মহান, সহৃদয় ও উদারহস্তের মানুষ হিসেবে জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রকফেলারদের মহান করে তোলার জন্য লি কিন্তু রকফেলারদের নীতির তেমন অদলবদল ঘটালেন না। তিনি শুধু তাদেরকে জনসমক্ষে তুলে ধরতে থাকলেন। 

এর আগে জনগণের কাছে রকফেলাররা ছিলেন স্বপ্নলোকের বাসিন্দা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তারা কখনও মিশতেন না, কথা বলতেন না। এমনকি তারা কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন না। ভাবমূর্তি বদলাবার জন্য মি. লি রকফেলারদের নিয়ে আসেন সাধারণ মানুষের কাছাকাছি। 
রকফেলার হাজির হতে লাগলেন গলফ খেলা, গির্জার প্রার্থনা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, জন্মদিনের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে। দান খয়রাতও করতে লাগলেন মুক্তহস্তে। কয়েক বছরের মধ্যে রকফেলার পরিবার সর্ম্পকে মানুষের ধারণা পাল্টে গেল। 

পারিবারিক দুর্নামের বদলে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে রকফেলার পরিবারের চমৎকার ভাবমূর্তি গড়ে উঠল। লির পরামর্শে জনগণের হৃদয়ে তারা স্থায়ী আসন করে নিতে সক্ষম হলেন। 

জনসংযোগ কী

জনসংযোগ হচ্ছে একটি সুচিন্তিত, সুপরিকল্পিত বিরামহীন কর্মপ্রয়াস। যার লক্ষ্য প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকে জনগণ, স্টেক হোল্ডার তথা টার্গেট গ্রুফের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির  ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটিয়ে পারস্পরিক সমঝোতা বা সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। 

একজন জনসংযোগ কর্মকর্তা হলেন প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র। তার একটি ভালো বার্তা যেমন মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের কাছে পোঁছে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করে ঠিক তেমনি একটি ভুল বার্তা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনামকে ধূলোয় মিশিয়ে দিতে পারে। তাই জনসংযোগ কর্মকর্তাকে হতে হয় চৌকশ, বিচক্ষণ ও প্রো-অ্যাকটিভ।

বাংলাদেশে জনসংযোগ পেশার ইতিহাস খুব বেশি সমৃদ্ধ নয়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান জনসংযোগ বিভাগ বা জনসংযোগ কর্মকর্তার প্রয়োজনীয়তা এখনও উপলব্দি করেনি। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান জনসংযোগ কর্মকর্তাকে পিএস বা পিএ হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখতে পছন্দ করে। কেউ বা জনসংযোগ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় গণমাধ্যমকে তথ্য দিতে নয় বরং তথ্য আড়াল করতে। অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে যেসব প্রতিষ্ঠান জনসংযোগের গুরুত্ব উপলব্দি করেছে, সেসব প্রতিষ্ঠান এর সুফল পেতে শুরু করেছে। 

জনসংযোগকর্মী যা করবেন

১.  প্রতিদিনের ঘটে যাওয়া ইভেন্টের প্রেসরিলিজ তৈরি, প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা করা।
২. জরুরি প্রয়োজনীয় মুহূর্তে প্রেস কনফারেন্স এবং প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা।
৩. প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তাব্যক্তিদের মিডিয়ায় ইন্টারভিউ প্রচার ও প্রকাশের ব্যবস্থা করা।
৪. প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড, সাফল্য, অর্জন, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, ইত্যাদির উপর ফিচার প্রতিবেদন তৈরি ও প্রকাশের ব্যবস্থা করা।
৫. টিভি চ্যানেল, জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা, বেতার, এফএম রেডিও, কমিউনিটি রেডিও, অনলাইন টিভি, অনলাইন নিউজপোর্টাল, ম্যাগাজিন, অনলাইন মিডিয়া, বিলবোর্ড, স্যোসাল মিডিয়ার জন্য সময়পোযোগী বিজ্ঞাপন ম্যাটার তৈরি ও প্রচারের ব্যবস্থা করা।
৬. ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট স্ক্রল প্রচার, সৃজনশীল বিভিন্ন অনুষ্ঠান (যাতে জনগণের আগ্রহ আছে এমন বিষয়) টক শো, রিয়েলিটি শো, স্পোর্টস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের নামে স্পন্সর করা যেতে পারে।
৭. মিডিয়াতে সরাসরি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচার করতে না চাইলে জনসংযোগমূলক বিজ্ঞাপন বা (পিআর অ্যাড) প্রচার করা যায়। যেমন- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মাদকের কুফল, সহিংসতা, জঙ্গিবাদ, নারী নির্যাতনবিরোধী, ইভটিজিং, কিশোর গ্যং, ফেসবুকের কুফল, যুবসমাজের নৈতিক স্খলনজনিত বিষয়ক প্রচারণা, দেশপ্রেম ও মানবিক মূল্যবোধসহ সামাজিক সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে প্রচার করা যেতে পারে। এতে প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের মনোযোগ আকর্ষিত হবে। 
৮. প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ কি ভাবছে, প্রতিষ্ঠানের কাছে তাদের প্রত্যাশা, পরামর্শ, ফিডব্যাক জানতে জনমত জরিপ, সরাসরি মিথস্ক্রিয়া (ইন্টারেকশন)-এর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এতে করে দ্রুত জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া যায় । এর ফলে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ার পাশাপাশি তারা একাত্ম্য হবে, প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের ভাবতে শুরু করবে।
৯. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমসাময়িক যেকোন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর উপর জনমত গঠন এবং পলিসি নির্ধারণের জন্য সেমিনার, ডায়ালগ, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি নিয়মিত আয়োজন করা। এতে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সম্মানিত অতিথিদের মিডিয়া কভারেজের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানও বাড়তি কভারেজ পেয়ে থাকে। ফলে জনমনে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। 
১০. মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনীতি, খেলাধূলা, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, আলোকিত মানুষসহ সমাজের সকল পেশায় অসামান্য অবদান ও বীরত্বগাঁথা, কৃতিমান বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের জন্য প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে আজীবন সম্মাননা পদক চালু করা যেতে পারে। এতে প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের সম্মান ও আস্থা বাড়বে।
১১. শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে নিয়মিত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ, উদযাপন ছাড়াও কর্পোরেট স্যোশাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর)-এর আওতায় দুস্থ, সুবিধাবঞ্চিত ও আর্তমানবতার সেবায় প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এতে করে প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি পাবে।
১২. সংবাদপত্র, সাংবাদিক, গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে জনসংযোগ কর্মকর্তার সুসর্ম্পক ও নিবিড় যোগাযোগ রাখা একান্ত আবশ্যক। তাদেরকে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো এবং সাধ্যানুযায়ী আথিত্য দেয়া বাঞ্চনীয়। এতে গণমাধ্যম কর্মিগণ উক্ত প্রতিষ্ঠানকে মনে রাখবে এবং কোন সংবাদ পরিবেশনের সময় প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে লিখতেও পারে, অন্যদিকে কখনও কোন খারাপ পরিস্থিতির উদ্ভব হলে জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে সুসস্পর্কের কারণে উক্ত গণমাধ্যম কর্মী যথাসম্ভব আপনার প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দিয়ে লিখতে পারে অথবা এড়িয়েও যেতে পারে।
১৩. সাংবাদিক, সংবাদপত্র, মিডিয়া মালিকদের সংগঠন যেমন প্রেসক্লাব, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি, ইকনোমিক রিপোর্টাস ফোরাম, কূটনৈতিক রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন, ক্রাইম রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন, ল’ রিপোর্টাস ফোরাম,  টিভি চ্যানেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, এডিটরস ফোরাম, নিউজ এডিটরস ফোরাম, সাব এডিটরস ফোরাম, নিউজ এজেন্সি, স্পোর্টস্ রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন, বিনোদন সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতিসহ সাংবাদিক, সংবাদপত্র সংগঠনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে যোগাযোগ রক্ষা করা জনসংযোগ কর্মকর্তার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এসব সংগঠনের বিভিন্ন সাময়িকী, ম্যাগাজিন, স্যুভেনির ইত্যাদিতে প্রতিষ্ঠানের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের পেট্রোনাইজ করা যেতে পারে। এতে উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে নিজ প্রতিষ্ঠানের সখ্যতা বাড়বে।
১৪. গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন জাতীয় দিবস যেমন- আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে শহীদ জাতীয় বীরদের শ্রদ্ধা জানিয়ে গণমাধ্যমে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়, উক্ত ক্রোড়পত্র প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এতে করে ভালো কাজের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা আছে এমন ইতিবাচক বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছাবে এবং ইমেজ বৃদ্ধি পাবে।
১৫. টেলিভিশনে সংবাদ অথবা সংবাদ শিরোনাম প্রতিষ্ঠানের নামে স্পন্সর করা যেতে পারে। দেশে বিদেশে কোটি কোটি দর্শক সংবাদ দেখে, ফলে সংবাদ শুরুর পূর্বে ও পরে প্রতিষ্ঠানের নাম প্রদর্শিত হওয়ার সুযোগ থাকছে। এছাড়াও ক্রিকেট, ফুটবল, বিপিএল-এর মত জনপ্রিয় খেলাধূলা প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে প্রদর্শন করা যেতে পারে।
১৬. গণমাধ্যমের মালিক, সম্পাদক, প্রকাশক, বার্তা সম্পাদক, সহ-সম্পাদক, রিপোর্টারসহ সকল কলাকূশলীদের নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স, মেইল নাম্বার সংগ্রহ ও আপডেট রাখা সফল জনসংযোগের জন্য জরুরি।
১৭. ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইমেইল, ম্যাসেঞ্জার ইত্যাদি বর্তমানে খুব জনপ্রিয় শক্তিশালী বিকল্প সামাজিক গণমাধ্যম। জনমত গড়তে এগুলো খুব কার্যকর হাতিয়ার। তবে জনসংযোগ কর্মীকে এ মাধ্যমসমূহকে অতি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হয়। কারণ একটু অসচেতনতার জন্য ভুল বার্তা স্যোশাল মিডিয়ায় একবার প্রচার হয়ে গেলে তা মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে প্রতিষ্ঠানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই এ মাধ্যমে কোন বার্তা দিতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে পরামর্শ করে নেয়া জরুরি।
১৮. শহরের বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মনোরম ও দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য্য, তোরণ, ফোয়ারা, পার্ক, বিলবোর্ড নির্মাণ (যাতে জনগণের আবেদন আছে) অথবা সিটি কর্পোরেশনের নির্মিত ভাস্কর্যসমূহে মেয়াদভিত্তিক স্পনসরশীপ নেয়া যেতে পারে। যাতে প্রতিষ্ঠানের নাম, লোগো, স্লোগান, ঠিকানা সুক্ষ্মভাবে শোভা পাবে এবং প্রচারিত হবে।
১৯. বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় স্যুভেনীর যেমন- ডায়েরী, ক্যালেন্ডার, মগ, দেওয়ালঘড়ি, কলম, ব্যাগ, টি-শার্ট, ক্যাপ, টাই, কলমদানী, নোটবুক, কোটপিন, চাবির রিং, কার্ড হোল্ডার, শো-পিচ ইত্যাদি বিশেষ দিবসে টার্গেট গ্রুফের কাছে বিতরণের মাধ্যমেও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত বার্তা পৌঁছে দেয়া যায়। 
২০. বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রতিষ্ঠানের তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ওয়েবসাইট একটি দ্রুত ও কার্যকরি মাধ্যম। তাই এটিকে সবসময় তথ্যবহুল, আকর্ষণীয় ও আপডেট রাখতে হবে।
২১. বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তুলে ধরার জন্য নিউজলেটার, সাময়িকী, ব্রশিয়ার, ম্যাগাজিন, স্টিকার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন প্রস্তুত ও বিতরণ করা যেতে পারে।
২২. মেলা, রোড-শো, র‌্যালি, মানববন্ধন ইত্যাদির মাধ্যমে সরাসরি প্রতিষ্ঠান বা  প্রতিষ্ঠানের পণ্য মানুষের কাছে তুলে ধরা যায়।
২৩. প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ম্যাটার তৈরি, বিজ্ঞাপন সিডিউল তৈরি ও অনুমোদন, বিজ্ঞাপন বুকিং, বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হওয়ার পর পত্রিকায় যথাস্থানে ও দৃশ্যমান জায়গায় ছাপা হল কি না, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপটি সঠিকভাবে প্রচারিত হল কি না,  বিজ্ঞাপনের পরিমাপ ইঞ্চি-কলাম রেট ঠিক আছে কি না, বিজ্ঞাপনের বিল নির্ভুল আছে কি না এসব খুঁটিনাটি বিষয়গুলো মনিটরিং করা জনসংযোগ কর্মকর্তার কাজ।
২৪. জনসংযোগ বিভাগে আর্কাইভ বা তথ্যভান্ডার গড়ে তুলতে হবে। নিয়মিত পত্র পত্রিকার নিউজ ক্লিপিংস, ভিডিও ফুটেজ, বিজ্ঞাপন সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে সময়মত এসব নিউজ ক্লিপিংস, ভিডিও ফুটেজ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে পুনরায় প্রদর্শন করা যেতে পারে। এছাড়া প্রতিদিনের কাজের অংশ হিসেবে জনসংযোগ কর্মকর্তাকে নিয়মিত পত্র-পত্রিকা পড়া ও পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিপক্ষে কোন সংবাদ পরিবেশিত হল কী না তা মনিটরিং করে কর্তৃপক্ষের নজরে আনা এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
২৫. প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কোন ভুল বা মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন হলে এর প্রতিবাদলিপি (রিজইন্ডার) তৈরি ও প্রকাশের ব্যবস্থা করা জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব। তবে প্রতিবাদের ভাষা হতে হবে অবশ্যই মার্জিত।
২৬. পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে প্রতিযোগিতায় নিজেদের সামনে এগিয়ে রাখতে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তাকে নিত্যনতুন প্রযুক্তি, প্রচারণা কৌশল ও বিভিন্ন মাধ্যম নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে সে সুযোগ সফল জনসংযোগের কাজে প্রয়োগ করতে হবে।
জনসংযোগ বিভাগ বা জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছানোর একটি মাধ্যম মাত্র। একটি কার্যকরি, সফল, অর্থবহ ও সামগ্রিক জনসংযোগের জন্য প্রতিষ্ঠানের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এক পরিবার হয়ে প্রতিষ্ঠানের ইমেজ বৃদ্ধির জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যেতে হবে। 

সাবেক  জনসংযোগ কর্মকর্তা, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি