ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

ওয়েবিনারে ‘করোনাকালের শিল্প-সাহিত্যের গতি-প্রকৃতি’ অনুষ্ঠিত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০০:২১, ২৫ জুলাই ২০২০

নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৃতীয় আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার আজ অনুষ্ঠিত হলো। মূল বিষয় ছিল ‘করোনাকালের শিল্প-সাহিত্যের গতি-প্রকৃতি’। আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের  উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ও বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা এ এসএম কামাল উদ্দিন।

সম্মানিত আলোচক ছিলেন কবি ও গবেষক বিলু কবীর, প্রাবন্ধিক গবেষক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যঅলয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. শহীদ ইকবাল, বিশিষ্ট কবি-গীতিকার-গবেষক ও বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. তপন বাগচী। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. সত্যজিৎ দত্ত এবং সাংবাদিক ও শিশুসাহিত্যিক ড. জ্যোৎস্নালিপি।

এ ছাড়াও অংশ নিয়েছেন ভূমি গ্রুপের ম্যঅনেজিং ডিরেক্টর মিলন হাসান, বঙ্গবন্ধু গবেষক মাসুদ রানা, কবি-গবেষক শাফিক আফতাব, কবি কবির হুমায়ুন, আবৃত্তিশিল্পী মামুন মোর্শেদসহ বিভিন্ন অতিথি ও বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান বহুমাত্রিক লেখক ড. রকিবুল হাসান।

আলোচনায় বক্তরা বলেন, গত ২০ বছরে আমরা ৬টি বড় বড় হুমকির সম্মুখীন হয়েছি – সার্স, মার্স, ইবোলা, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, সোয়াইন ফ্লু ও করোনা ভাইরাস আমরা পাঁচটি বড়ধরণের পাঁটি হুমকি থেকে বাঁচতে পারলেও ছয় নম্বরটার হাত থেকে অর্থাৎ করোনার হাত থেকে বাঁচতে পারছি না। এবং এটাই যে আমাদের সম্মুখীন হওয়া শেষ মহামারি, তাও নয়। এমন মহামারিও আগামীতে হতে পারে যা পুরো মানব সভ্যতাকেই ধ্বংস করে দিতে পারে।করোনা সে আভাস ভালোভাবেই জানান দিচ্ছে। করোনার কাছে গোটা পৃথিবী একরকম অসহায় হয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মানব বসতি আছে এমন জায়গায় প্রতি বছর তিন থেকে চার বার নতুন রোগের উদ্ভব হয়। শুধু এশিয়া বা আফ্রিকা নয়, ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এটা হচ্ছে। এখন পৃথিবীতে মহামারি ভাইরাস ছড়ানোর জন্য প্রায় আদর্শ পরিবেশও সৃষ্টি হয়ে গেছে। যে কারণে করোনাভাইরাসের মতো ঘটনা আগামীতে বার বার ঘটতে পারে।

কোভিড–১৯ মহামারিকে অস্ট্রৈলিয়ায়, একটি ‘কালো রাজহাঁস ঘটনার’ সমতুল্য বলে তুলণা করা হয়েছে।অস্ট্রেলিয়ার বাইরে খোলা জায়গায় কালো রাজহাঁস দেখতে পাওয়া বিরল ঘটনা। সেটার সাথেই করোনাকে তুলনা করেছে।। করোনা বিরল এক ভঅইরাস- যা মানুষের কল্পনাতেও ছিল না। মানব সভ্যতার শুরু থেকেই বিভিন্ন মহামারি পৃথিবীর বিভিণ্ন দেশে বা মহাদেশে আক্রমণ করেছে।পুরো পৃথিবীজুড়ে আক্রমণ এবারই প্রথম।

বক্তারা বলেন, কালোমৃত্যু বা কালো মড়ক মানবসভ্যতার ইতিহাসে একটি বীভৎস, অমানবিক ও কালো ইতিহাস বহন করছে। পৃথিবীব্যাপি ছড়িয়ে পড়া এই মহামারির কবলে পড়ে ১৩৪৬-১৩৫৩ সালের মধ্যে ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের (ইউরেশিয়া) ৭৫ থেকে ২০০ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। কালো মৃত্যু এর কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব রয়েছে। কালো মৃত্যুর মূল কারণ ছিল প্লেগ রোগ নামক জীবানুর আক্রমণ।

ইউরোপের মোট জনসংখ্যার ৩০-৬০ ভাগ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।এই মহামারির কবলে পড়ে ১৪’শ শতাব্দীতে বিশ্বের জনসংখ্যা ৪৫০ মিলিয়ন থেকে ৩৫০-৩৭৫ মিলিয়নে নেমে আসে। ১৭’শ শতক পর্যন্ত প্লেগ পরবর্তী সময়েও এই সংখ্যা আর পুনরুদ্ধার হয়নি।এমনকি ১৯’ শতকেও এটি ইউরোপের কিছু কিছু জায়গায় দেখা গিয়েছিল।

এই মহামারী ইউরোপের ইতিহাসে ব্যাপক ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। করোনা কালোমৃত্যুসহ সব ধরণের মহামারি থেকে ভিন্ন।অতীতের অন্যসব মহামারি বিভিন্ন দেশ বা মহাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও করোনা পুরো পৃথিবীকেই আঘাত করেছে।মৃত্যু অনিবায শব্দ হয়ে উঠেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে শিল্পসাহিত্য চর্চা সভ্যতার বিকাশে উৎকর্ষ সাধনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

করোনা মহামারিতে মৃত্যু থেমে নেই, পুরো জীবনব্যবস্থা থমকে গেছে-বন্দি হয়ে গেছে মানুষের কর্মবহুল জীবনের চাকা।কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির কারণে শিল্প-সাহিত্যচর্র্চা চলছে। বিশ্বব্যাপীই চলছে। সেই শিল্প সাহিত্যের গতি প্রকৃতি কী? এ প্রশ্নের উত্তর এই সময়কালে দেয়া বা পাওয়া ভারি কঠিন।পৃথিবীর বিভিন্ন মহামারি নিয়ে, বিভিন্ন বিপ্লব-বিদ্রোহ নিয়ে সাহিত্য হয়েছে। তবে সেইসব সময় আজকের মতো তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর ছিল না। যে কারণে সেসব মহামারির সময়ে যেসব শিল্প- সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে তার খবর পাওয়া বা সে সব শিল্পসাহিত্য সম্পর্কে জানা সহজতর ছিল না।

বর্তমান প্রেক্ষিত পুরোটাই ভিন্ন। সারা বিশ্বে এ সময়ে করোনার কারণে জীবন-মৃত্যু-অর্থনৈতিক বিপর্যয় বেকারত্ব-প্রচলিতজীবনব্যবস্থা ভেঙে অচেনা অজানা এক জীবনের সাথে মানুষের যে সম্পৃক্ত হয়ে যাওয়া-এসব কবিতা গল্প উপন্যাস গানসহ বিভিণ্ন শিল্পকমে স্থান করে নিচ্ছে। এবং সাথে সাথে তা গোটা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়েও পড়ছে।বর্তমান প্রেক্ষিতে সেই শিল্প-সাহিত্য জীবনবাস্তবতায় কতোটা গুরুত্বপূর্ণ-যদি মানবসভ্যতাই হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়ে, তাহলে এ শিল্প সাহিত্য কার
জন্য? অথবা আগে বিভিন্ন মহামারিতে যেভাবে- যে চেতনায়- যে বোধে- শিল্প সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে, বর্তমানে সৃষ্ট শিল্প সাহিত্য তা থেকে কতোটা ভিন্নতর-জীবনবাস্তবতা এ সময়কালের সাহিত্যে শিল্পে কতোটা প্রয়োগ হচ্ছে-করোনার এই মহামারিতে আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে গভীরভাবে ভাবা দরকার রয়েছে। যেমন- মানুষ হিসেবে আমরা কারা? মানবতা বলতে আমরা কী বুঝি? আমাদের জীবনযাত্রার লক্ষ্য কী? পরস্পরের সঙ্গে আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত? এসব নিয়ে কী ভাবছেন আমাদের কবি সাহিত্যিকরা বা তারা নিজেরাও কী লিখছেন- এসব নিয়েই আজকের আড্ডা।

এখন আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে গভীরভাবে ভাবা দরকার। মানুষ হিসেবে আমরা কারা? মানবতা বলতে আমরা কী বুঝি? আমাদের জীবনযাত্রার লক্ষ্য কী? পরস্পরের সঙ্গে আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি