ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪

ময়রা

প্রকাশিত : ১৫:২১, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

এই ছেলের নাম বোঁদে কেন হল তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা হতে পারে। বেঁটে মতোন দেখতে তাই বোঁদে, বোধবুদ্ধির বালাই নাই সে কারণে বোঁদে, কিংবা আরেকটু দুঃসাহসী হলে বলা যায়, সে অন্যের বাড়ি বয়ে গিয়ে মানুষের পাছায় বা পোঁদে বাঁশ প্রবিষ্ট করাতে বিশেষ দক্ষ বলে নিন্দুকেরা তার নাম দিয়েছে বোঁদে। আমার উদ্দেশ্য কারো নাম নিয়ে নামতাবিলাস নয়, বরং বোঁদের মতো মানুষ যে কেন বেঁচে আছে তাই নিয়ে ভাবছি। আমি নিশ্চিত, পুরো কাহিনি জানলে আপনিও সুখে-দুঃখে নির্বিকার দার্শনিকের মতো নিশ্চুপ বসে থাকতে পারবেন না।   
     টাঙ্গাইল যেতে এলেঙ্গা মোড়ে মনু ময়রার দোকানে সে কাজ করছে আট বছর। মনু ব্যবসা বোঝে। সে বেশ ভাল করেই জানে, আজকের বাজারে মাসে হাজার পাঁচেক দিয়েও বোঁদের মতো বিশ্বস্ত আর কর্মঠ লোক সে পাবে না। শুধু তাই নয়, রসগোল্লার পাক আর ছানার জিলিপির প্যাঁচ কষতে ওর মতো চৌকস আর কে আছে! মনুর দোকানের মিষ্টির স্বাদই আলাদা। দিনভর তার দোকানে ভিড় লেগেই থাকে। নানান কিসিমের কাস্টমার মাছির মতো সারাক্ষণ ভনভন করে। মনু ময়রা ক্যাশ সামলাতে হিমশিম খায়। বাকি কাজ সব বোঁদেই করে থাকে। কেউ কেউ বলে, ওর হাতে নাকি জাদু আছে।
      মনুর দোকানে সব রকম ক্রেতাসমাগম হয়। কাউকে সে নিরাশ করে না। লালমোহন, রসগোল্লা, মোহনভোগ, রসকদম, ছানার জিলিপি, ক্ষিরপুরি, মেওয়া-লাড্ডু, পানতুয়া, বালুশাহী, শাহীচুম্বন, কাঁচাগোল্লা এখানে সুলভে পাওয়া যায়। শুধু কি তাই, একেবারে নীচুতলার লোকেদের জন্য আছে বোঁদের বানানো ভেরি স্পেশাল এন্ড সস্তাদামের বোঁদে। বিশেষত রিকশাওয়ালা শ্রেণীর খদ্দেররা সকাল সকাল মনুর দোকানে এসে এক পেল্ট বোঁদের সাথে দুটো পরোটা মেরে দিয়ে কাজে বেড়িয়ে যায়।
      সে গুটিগুটি বোঁদে বানাতে বিশেষ ওস্তাদ, এ কারণেও ওর নামকরণ ‘বোঁদে’ হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। সে যাই হোক, বোঁদের শ্রম-ঘাম আর নির্বুদ্ধিতাকে পুঁজি করে এই থানাশহরে বেশ রমরমা ব্যবসা ফেঁদেছে মনু ময়রা।
    বোঁদের চেহারা মোটেও দৃষ্টিসুখকর নয়। বেঁটোখাটো গড়ন, খাঁদা নাক, গায়ের রঙ বেশ কালো। বাঁ পাটা খানিক ছোট তাই সামান্য খুঁড়িয়ে চলে বোঁদে। সস্তাদামের সিনথেটিক লুঙ্গিখানা ধুতির মতো মালকোঁচা মেরে ভোর ভোর কাজে নেমে পড়ে। বুদ্ধিটা অবশ্য মনুরই। লুঙ্গির খুঁট খোলা থাকলে পেলায় সাইজ জালায় ধরে রাখা মিষ্টির সিরকায় লোটাবে, নয়তো কাজের চাপে ওর ল্যাগবেগে বিশেষ যন্ত্রখানা বেরিয়ে পড়ে ডেঁপো ছেলে-ছোকরাদের গভীর কৌতুকের বিষয় হবে!
     বলা বাহুল্য, শীত-গ্রীষ্ম সব সময় বোঁদের উর্ধ্বাঙ্গ খোলাই থাকে। চুলোর গনগনে আগুনে সে রীতিমতোঘামে, তাই শীতবোধ কী জিনিস বোঁদে জানে না। তাতে মনুর বরং খরচ বাঁচে। ফিবছর নতুন নতুন হাতঅলা গেঞ্জি কিনতে গুচ্ছের পয়সা খসাতে হয় না।
    বোঁদে বোকা, তাতে কোন সন্দেহ নেই। একবার এক ঘটনা ঘটলো। মনু ময়রা বেশি মুনাফার লোভে দুধে পাউডার মিশিয়ে দিয়েছিল। গ্রামের গরুসমাজ সবুজ ঘাসের দাবিতে দুধপ্রদান কমিয়ে দিল। তাই দুধে গুঁড়ো না মিশিয়ে উপায় কি! ব্যবসা তো আর বসিয়ে রাখা যায় না! বোঁদেকে সে বলে নি যে ব্যাপারটা যেন পাঁচ-কান না হয়। তাতে দোকানের সুনাম নষ্ট হবে, খদ্দের কমে যাবে।
    কপাল এমনই, ঠিক সেদিন শহর থেকে বড়সায়েবরা এলেন এলেঙ্গা রিসর্টে বেড়াতে। বিবি সাহেবার মিষ্টি ভীষণ পছন্দ। বাতিক বলতে পারেন। ওসব ডায়েটফায়েট তার একদম চলে না। মিষ্টি চাই। ভাল মিষ্টি।
মিষ্টি লিবেন সাব! মনু ময়রার দোকানে যান। ছিঃ ছিঃ কষ্ট করে যাবেন কেনে! আমিই বরং এত্তেলা পাঠাচ্ছি। দামের সাথে বাড়তি কিছু ধরে দিলেই হল। একজন বলল, এরা অনেকটা ছুঁচোর মতো। সারাক্ষণ তক্কে তক্কে থাকে। মওকা বুঝে দালালি ফড়েগিরি করে বাড়তি দু’পয়সা কামায়।
   সায়েব বিবিকে নিয়ে মনুর দোকানে হাজির। শহুরে কাস্টমার পেয়ে সে ভীষণ খুশি। হাঁকুনি পেড়ে বলল, এই বোঁদে, ভাল দেখে কিলোপাঁচেক মিষ্টি প্যাক করে দে তো! সায়েব বহুত দূর থেইক্কা আইছেন।  
  মনু খুশি তো বোঁদেও খুশি। এজন্যই লোকে তারে বোকা বলে! আরে হাঁদারাম, মিষ্টির দোকান দিয়ে মনুর দুই-তিনতলা বাড়ি হল, চেহারায় চটক এলো, তার বউ বাচ্চা বিয়োলো, তোর কী হল রে বেকুব! তুই ক্যান ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার লাহান দুই পা তুলে নাচস!
   সে যে যাই বলুক, বোঁদে নিমকহারাম নয়। যার নুন সে খায়, তার গুণ গাইতে বোঁদে মোটেও কসুর করে না। মনু তার মা-বাপ। মনু ময়রা আছে বলেই না সে বেঁচে আছে। নইলে কবেই আচমকা আষাঢ়ের বেনোজলে ভেসে যেত!
      কি রে, দুধ খাঁটি তো, নাকি পানি মিশিয়েছিস! সাহেব বললেন।
মনু ময়রা এক বিঘত জিভ কেটে বলল, ছিঃ ছিঃ সাব, এ কি বলছেন! আপনারে জাইনা-শুইনা আমি ভেজাল জিনিস দিমু! এক্কেবারে খাঁটি দুধ সায়েব। এট্টুও মিশাল নাই।
     বোকা বোঁদে সোৎসাহে মালিকের কথার পিঠে বলে, সে কি কতা স্যার! ভেজাল কেনে দিবো! আমার মালিক খুব সজ্জন মানুষ। দুধে সুস্বাদু গুঁড়া মিলাইয়া মিষ্টিতে বাহার আনছেন। লিয়ে লন সাব। বাসায় গিয়া চেটেপুটে খাইবেন!   
অ্যাঁ, কী বললে! গুঁড়া মিলাইছে! পাউডার মিল্ক! হারামজাদা! তোদের ধরে পুলিশে দেয়া উচিত। দুধেও ভেজাল! শালা, দেশটা ভেজালে ভেজালে সয়লাব হয়ে গেল! মিষ্টি না নিয়ে বরং জেলের ভয় দেখিয়ে সায়েব চলে গেলেন।
     এর পরের ঘটনা খুব সহজেই অনুমেয়। মনু মালিক, বোঁদে চাকর। বোঁদের বোকামোর জন্য তার চরম বেইজ্জতিই শুধু না, পাঁচকিলো মাল দোকানে পড়ে থাকলো। এই রাগে ওর চুলে মুঠি ধরে ইচ্ছেমতো ঝাঁকালো মনু। শালা বোকার হদ্দ! তোর মতো আচ্ছা বেকুবের পাল্লায় পড়ে আমার সব গোল্লায় যাবে রে! ভিটেয় ঘুঘু চরবে!
   এই আমাদের বোঁদে। এলেঙ্গা রোডের মনু ময়রার দোকানের খাস কামলা। দিনভর মিষ্টির মাঝে থেকেও যার জীবনে তেতোস্বাদ একটু গেল না। এমনই আসলে হয়! ভারবাহী গাধা জীবনভোর চিনির বস্তা বয়েই যায়, একদানা চিনি কখনও চেখে দেখার ফুরসত পায় না।
     সময়ের সাথে সাথে বোঁদের জীবনে পরিবর্তন আসে। তবু তার পেশাবদল হয় না। মনু ময়রা কাঁচাটাকা চুষে-চিবিয়ে দিন দিন ফুলে ফেঁপে উঠছে, বোঁদেও বাড়ছে। তবে আখেরে নয়, স্রেফ ঘাড়েগর্দানে। বোঁদে ইদানিং কেমন যেন উরু উরু, কাজেকর্মে মন নেই তার। মনু বুঝতে পারে, প্রকৃতির নিয়মে ওর এখন নারীর ছোঁয়া চাই। তলানি মিষ্টি আর মুখে রোচে না বোঁদের।
  মনু ময়রা অর্থপূর্ণ হাসি দিয়ে বলল, কি রে বোঁদে, বিয়ে করবি! মন বড় উচাটনঅইছে, তাই না রে! জানিস তো, ঘর বাঁধতে দড়ি, আর বিয়ে করতে কড়ি লাগে! কত জমিয়েছিস? তাতে হবে!  
   বোঁদেও হাসে। মনে মনে সে মনিবের তারিফ করে। মনু তার মনের কথা ধরে ফেলেছে। লোকটা অন্তর্যামী নাকি! বুঝলো কি করে বোঁদের এবার বউ চাই!
   ঠিক আছে, হবে! তুই মেয়ে দ্যাখ। আমি তোর বিয়ের খরচ দেব, মনু বলল। তবে একখান শর্ত আছে। বিয়ার পর কিন্তু বউরে নিয়া ভাগবার পারবি না। আমার দোকানে তোর কাম করতে আইবো। কিচ্ছু ভাবিস না, মিঞা-বিবির সংসারে যাতে চোট না লাগে সেইমত টেকা বাড়াইয়া দিমু। তুই আমার আপন লোক বোঁদে। তোরে কি আমি কষ্টে রাখতে পারি! মনু ময়রা যেন দয়ার সাগর, বিনয়ের অবতার! এই না হলে মনিব। ভীষণ খুশি বোঁদে।
    খুব একটা খুঁজতে হয় না। মেয়ে পাওয়া যায় সহজেই। গাঁও গেরামে সোমস্ত মেয়েকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর মতো বাপ আর কই! ছেলের পিছে খরচ করলে বেশি লাভ। বুড়ো বয়সে ছেলেরাই দেখে। মেয়ে থাকে তার সোয়ামির সংসারে!
     যথাসময়ে মনু ময়রার চেষ্টা তদবিরে বোঁদের বিয়ে হয়। মেয়ের নাম খুশি। স্বভাবে একটু চাপা, তবে চেহারা মন্দ নয়। গায়ে গতরে আছে, পেটে বিদ্যেও একেবারে খালি নয়। সেভেন ক্লাস অব্দি পড়েছে খুশি। বোঁদে খুশি, ওর বউ খুশিও খুশি।
    বোঁদের কাজে এখন আগের চেয়ে ঝোঁক বেশি। মনু ময়রার প্রতি তার কৃতজ্ঞতার যেন শেষ নেই। নিজের ছেলের মতো দাঁড়িয়ে থেকে মনু তাকে বিয়ে করিয়েছে। ছাতি-লাঠি, হাতঘড়ি, দুপাখি জমিও সে পেয়েছে শ্বশুরের তরফে। সম্বন্ধী বলেছে, খুশির সাথে আচরণ ভাল করলে বোঁদের চরিত্রের সার্টিফিকেট হিসেবে ভিটের উপর ঘরও একখানা বঁধিয়ে দেবে। তাছাড়া অবরে-সবরে কলাটা-মুলোটা তো থাকছেই।
  যাচ্ছলে! ভাগ্য বোঁদের ভালই বলতে হবে। এ যেন রাজ্যসহ রাজকন্যে!   
     দিন ভালই যাচ্ছিল। মনু ময়রার নোকর হয়ে কেটে যাচ্ছে বোঁদের দাম্পত্য জীবন। কিন্তু খুশি স্বভাবে চাপা হলেও আখের গোছাতে জানে। একরাতে রিরংরাজনিত ক্লান্তি কেটে গেলে খুশি ওর গলা জড়িয়ে বলল, দেখো বোঁদে, পরের দোকানে জনমভর খাটবে এ কিন্তু আমার ইচ্ছে নয়। আড়ালে-আবডালে লোকে আমারে গাধি বলে! তুমি যে গাধার মতো পরের বোঝা বয়ে বেড়াও!
   তুমি কী বলবার চাও খুশি? বোঁদে বাধ্য ছেলের মতো বউয়ের গলা জড়ায়। বটবৃক্ষের ন্যায় পায়ে পায়ে শিকড় বেঁধে পুনর্বার ডানা ঝাঁপটায়। নারীতে উপগত হয়ে ক্রমাগত ক্রিয়াশীল হয়। এ এক অন্য রকম শিহরণ। অল্পতে তেষ্টা মেটে না! বারবার ভেজাতে মন চায়।    
   তুমি নিজে একখান দোকান দিলে হয় না! কাজকাম তো ভালই জানো। খুশি বোঁদেকে গভীর আশ্লেষে বেঁধে ওর ঘেমো বুকে মুখ ঘষতে থাকে। এও নারীর এক কলা বৈ কি! পুরুষের কাছে নিজেকে অত্যাবশ্যক প্রমাণের মোক্ষম সময়! শ্রেণী, শিক্ষা বা দেহমাধুর্য নির্বিশেষে নারীকুল এ কৌশল বোধ করি বেশ ভালই জানে! রীতিমতো পারঙ্গম!   
   কিন্তু পয়সা কোথায় পাবো! মেলা পুঁজি লাগে দোকান দিতে! বোঁদে নিজের স্ত্রীকে অক্ষমতার জানান দেয়। এত টাকা তার নেই। হবেও না কোনদিন! তাই নিজে দোকান দেবার কথা সে স্বপ্নেও ভাবে না।
   খুশি এত সহজে নিরাশ হয় না। সে কলাবতী মেয়ে। উদ্দেশ্য হাসিলের সব রকম কলাকৌশল তার জানা!     
    খুশি বোঁদের পুরুষ্টু ঠোঁটে আগ্রাসী ছোবল মেরে বলল, সে ভার আমার। তুমি জায়গা দেখো। দোকান তোমার হবেই হবে।
     এরপর আরো কিছুদিন যায়। খুশিকে নিয়ে কানাঘুষো শোনা যায়। গাঁয়ের মাতব্বর রমজান আলী মনু ময়রার পার্মানেন্ট কাস্টমার। প্রায়ই সে মনুর দোকানে এসে গোপালভোগ চাখে। বোঁদের সাথে খোশমেজাজে বাতচিৎ করে। যেন সম্পর্কে তারা ভায়রাভাই। এই মাতব্বরকে ঘিরেই কানাঘুষোর জাল বিস্তৃত হয়। কানেমুখে কথাটা মনু ময়রার কানেও পৌঁছায়। আর যাই হোক, সে বোঁদের খারাপ চায় না।
    একদিন বোঁদেকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলল, বোঁদে, তুই শুনিস নি কিছু? চিরকাল তুই বেকুবই রয়ে গেলি! বোকা গাধা কোথাকার!
    বোঁদে ফ্যালফেলে চোখে তাকায়। সত্যিই সে কিছু বুঝতে পারে না। মনু অবশ্য এর বেশি ভাঙে না। বেচারা বোঁদে কষ্ট পাবে। বোকাসোকা মানুষ! ঘটে যার বুদ্ধি আছে তার জন্য ইশারাই কাফি। খোঁটাপিটা খেয়ে দিব্যি শুধরে যায়। কিন্তু বেকুব বোঁদের কোন রকম বোধোদয় হয় না। খুশিকেন্দ্রিক ফিসফিসানি আরো জোরালো হয়। তবে বিষয়টা এমন যে হাঁক পেড়ে কাউকে বলাও যায় না। আর পেছনে যদি মাতব্বর খোদ রমজান আলী থাকে তবে তো কোন কথাই নেই!
   শুধু রমজান কেন, শোনা যায়, পাশগ্রামের টাকাঅলা দু’চারজনেরও খুশির ঘরে অবাধ যাতায়াত! শালা বোঁদে এসব চোখে না দেখুক, শুনতে তো পায় নাকি! অকালকুষ্মাÐ একটা!       
    পাড়ার ডেঁপো ছেলেরা এ বিষয়ে রসের ঝাঁপি খুলে বসে। কিন্তু যাকে নিয়ে এতসব কাÐ সেই খুশির কিন্তু কোন হেলদোল নেই। সে দিব্যি আছে। বোঁদেও কিছু খারাপ নেই।         
    মনু ময়রা শেষমেশ স্বীকার করে, বোঁদের মতো মহাবেকুব মানুষ যে জীবনে দেখে নি! নিজের বউকেও সে বশে রাখতে পারে না। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, তারপরও ব্যাটা মফিজ কোন স্টেপ নিল না! বলি হারি যাই ওর খুশিপ্রেম! প্রেমে অন্ধ একেবারে! কানামোনা যাকে বলে!
   কিন্তু তখনও বোধ হয় গাঁয়ের মানুষের জানার কিছু বাকি ছিল। মনু ময়রার ঘোরতর শত্রæ গোপনে কোথাও বেড়ে উঠেছে সে খবর মনু রাখছে কি!  
   ঠিক ছ’মাস বাদে এক সকালে বোঁদে বলল, আমি আর কাজ করুম না ভাই। নিজে দোকান দিমু।
মনু ময়রা বোধ হয় ‘দেশে আর কোনদিন লোডশেডিং হবে না’ শুনলেও এতটা আশ্চর্য হতো না! বোঁদে এ কী বলছে!
  মনু শ্লেষ্মারুদ্ধ ঘর্ঘরে স্বরে বলল, পেট গরম হয়েছে তোর! নাকি ভূত দেখেছিস! দোকান দিবি, টাকা  পাবি কোথায়!
 সে আমার আছে। বোঁদে জানালো। সে আরো জানায়, দোকানের জায়গা কেনা হয়ে গেছে। শহর থেকে মিষ্টি সাজানোর র‌্যাক, রেকাবি, খামির-খুন্তি, হাঁড়িপাতিল-কড়া আসছে খুব শিগগিরই। এ কাজে খুশি ওর সহযোগী হবে।   
   মনু ময়রার চোখে পলক পড়ে না। বুঝতে পারে, বোঁদে এবার সত্যি মালিক হবে। দোকান মালিক! পেছনে কেরামতি কার! ভ্রষ্টা কলাবতী খুশির!
     মনু তবু রহস্যপাঠের শেষ চেষ্টা করে। আন্তরিক সুরে বলে, বোঁদে, তুই টাকা কোথায় পেলি, সত্যি করে বল তো! মাইরি বলছি, আমি তোর খদ্দেরে ভাগ বসাবো না।    
    বোঁদে কিছু বলে না। মিটিমিটি হাসে। যেন বোঝাতে চায়, তোমরা যতটা বোকা আমাকে ভেবেছো, ততটা কিন্তু নই। এবার নিজের ব্যবসা সামলাও মনু। খুশি তোমার দোকান চৌপট করে দেবে। সে ব্যবসা বোঝে। একই প্লেটে হাজার লোক খেলে যদি তা নষ্ট না হয়, খুশি কেন হবে! ব্যবহারের আগে ভাল করে ধুয়ে নিলেই হয়! এমন কত হচ্ছে! কেবল টের পেলেই দোষ!
     বোঁদে হাসে। হাসতেই থাকে! নির্মল নিপাট হাসি!   



/ডিডি/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি