ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

এক ‘রাজকীয় দম্পতি’র বিদায়

প্রভাষ আমিন

প্রকাশিত : ১১:৪২, ১২ জুলাই ২০২১

রাজকীয় দম্পতি সাজেদা বেগম ও তোফাজ্জল হক

রাজকীয় দম্পতি সাজেদা বেগম ও তোফাজ্জল হক

গত ৮ জুলাই রাতে মাকে হারানোর পর ১১ জুলাই বাবাকেও হারালেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) চেয়ারম্যান ও মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রেজোয়ানুল হক রাজা এবং নিউজ টোয়েন্টিফোরের বার্তা সম্পাদক বোরহানুল হক সম্রাট। (ইন্না লিল্লাহি...রজিউন)।

গত ৮ জুলাই রাতে রাজধানীর পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাংবাদিক সহোদরের মা সাজেদা বেগম। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। এর দুই দিন বাদেই ১১ জুলাই সকাল ৮টার দিকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাংবাদিক সহোদরের বাবা তোফাজ্জল হক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

বিষয়টি যেমন এই দুই সহোদর সাংবাদিককে করেছে ব্যথাতুর, তেমনি নাড়া দিয়েছে বিশ্ব বিবেককেও। এ নিয়েই ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন খ্যতিমান সাংবাদিক প্রভাষ আমিন। পাঠকদের জন্য তার লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো- 
 
‘একেই কি প্রেম বলে বা হৃদয়ের টান? দুজনই অসুস্থ ছিলেন, ছিলেন আইসিইউতে। স্ত্রী সাজেদা হক চলে গেলেন বৃহস্পতিবার। তোফাজ্জল হককে জানানো হয়নি সে কথা। আসলে জানানোর মতো অবস্থায়ও ছিলেন না তিনি। কিন্তু ঐ যে বললাম, প্রেম বা হৃদয়ের টান! তোফাজ্জল হক বুঝে গিয়েছিলেন তার জোড়া পাখি উড়ে গেছে, যেতে হবে তাকেও। মাঝখানে মাত্র দু’দিনের বিচ্ছেদ। আবার তারা মিলে গেলেন অনন্তলোকে।

এই দম্পতিকে আমি ঈর্ষা করি। তোফাজ্জল হক চাকরি করতেন রেলওয়েতে, মধ্যবিত্তের টানাটানির সংসার। অর্থে টান থাকলেও চিন্তা ছিল রাজকীয়। এই দম্পতি কতটা রাজকীয় তা তাদের সন্তানদের নাম দেখলেই টের পাবেন। ছেলেদের নাম হলো- নবাব, বাদশাহ, সুলতান, রাজা, সম্রাট। মেয়েদের নাম- সুলতানা, রাজিয়া, রাণী। এই দম্পতিকে তাই রাজকীয় না বললে আর কাকে বলবেন। রাজা ভাইয়ের সাথে মজা করা যেতো না। আমরা সম্রাটের সাথে মজা করতাম, এরপর ভাই-বোন হলে তো আপনার বাবা মা নাম সঙ্কটে পড়ে যেতেন!

সন্তানদের রাজকীয় স্বাচ্ছন্দ্য হয়তো দিতে পারেননি, তবে রাজকীয় ভালোবাসা দিয়েছেন, আর দিয়েছেন শিক্ষা। সন্তানদের সবাই সুশিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত। রাজা আর সম্রাট সাংবাদিকতার দুই তারকা। 

বাবা-মা একসাথে হাসপাতালে, পরে আইসিইউতে যাওয়ায় অসহায় সম্রাটের সাথে প্রায় প্রতিদিনই কথা হয়েছে, রাজা ভাইয়ের সাথেও কথা হয়েছে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর আমার আর সাহস হয়নি, তাদের সাহস দেয়ার। ফোন করে আমি কী বলবো? মাঝে মাঝে আমরা (মানুষ) বড় অসহায় হয়ে যাই। চোখের সামনে প্রিয়জন চলে যাচ্ছে, আমাদের যেন কিছুই করার নেই।

মৃত্যু অমোঘ, মৃত্যু অনিবার্য। জানি, তবু জানি; তোফাজ্জল-সাজেদা অনন্তলোকে সাজাবেন তাদের নতুন সাম্রাজ্য।’

লেখক- বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি