ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

বাতাস থেকে পাওয়া যাবে সুপেয় পানি!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:১৯, ৩ মে ২০১৭

শুকনো, খটখটে বাতাস থেকেও পানি টেনে বের করার সেই ‘ম্যাজিক’ যন্ত্র

শুকনো, খটখটে বাতাস থেকেও পানি টেনে বের করার সেই ‘ম্যাজিক’ যন্ত্র

একেবারে শুকনো খটখটে বাতাস থেকেও এবার পানি টেনে, শুষে নিয়ে মেটানো যাবে বুকের ছাতি ফাটানো তেষ্টা! এমন কী, মরুভূমিতেও আর ‘পানি নেই, পানি নেই’ বলে বুক চাপড়াতে হবে না! আর সেটা করা যাবে আমাদের সব সময়ের সঙ্গী সূর্যালোক দিয়েই!

তেমন একটা ঝক্কি-ঝামেলাও নেই। কফি খাওয়ার মগের মতো ছোট্ট একটা যন্ত্রই সেই মুশকিলটা আসান করে দেবে!

এমন একটি চমকে দেওয়ার মতো যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) অধ্যাপক ইভলিন ওয়াঙ ও বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ ওমর ইয়াঘির নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক একদল গবেষক।আর গবেষক দলের দুইজন ভারতীয় বিজ্ঞানী। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক সমীর আর রাও ও শঙ্কর নারায়ণন।

কী পরিমাণ পানি পাওয়া যাবে

গবেষকদের দাবি, একটি কোকের ক্যানে যতটুকু পানি ধরে, এক ঘণ্টায় ততটুকু শুকনো খটখটে বাতাস থেকে শুধুই সূর্যালোক দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারবে যন্ত্রটি। যা, মরুভূমিতে ‘পানি নেই, পানি নেই’ অবস্থায় যথেষ্টই। তবে ওই প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করা হচ্ছে, যাতে নিকট ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার শুকনো খটখটে এলাকাগুলোতে পানীয় জলের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাও মেটানো যায়। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স’-এর ১৩ এপ্রিল সংখ্যায়। যার শিরোনাম- ‘ওয়াটার হারভেস্টিং ফ্রম এয়ার উইথ মেটাল-অরগ্যানিক ফ্রেমওয়ার্কস পাওয়ারড বাই ন্যাচারাল সানলাইট’।

এই প্রযুক্তির অভিনবত্ব

এক প্রশ্নের জবাবে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক সমীর আর রাও বলেন, ‘‘ যেখানকার আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ৫০ শতাংশের নীচে, এত দিন সেখানে এ ভাবে শুকনো খটখটে বাতাস থেকে পানি টেনে, শুষে নেওয়া সম্ভব হতো না। কিন্তু এবার এই নতুন প্রযুক্তিতে যে এলাকার আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ২১ শতাংশেরও কম, সেখানকার বাতাস থেকেও পানি টেনে নেওয়া যাবে পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে।

বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না সুপেয় পানির সরবরাহ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমেছে যথেষ্টই। ফলে, সুপেয় পানির অভাব আরও প্রকট হয়েছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই সুপেয় পানির অভাবের শিকার।

অথচ বায়ুমণ্ডল থেকেই আমরা মেটাতে পারি সুপেয় পানির অভাব। যেহেতু বায়ুমণ্ডলেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প বা ওয়াটার ভেপার। তার পরিমাণ কতটা, জানেন? অলিম্পিকের সুইমিং পুল যতটা বড় হয়, সে রকম ৫০০ কোটি সুইমিং পুলে যতটুকু পানি ধরতে পারে, আমাদের বায়ুমণ্ডলে ঠিক ততটাই মিশে রয়েছে জলীয় বাষ্প।

সেই বায়ুমণ্ডল থেকে পানি টেনে, শুষে নেওয়ার কাজটা তখনই সহজতর হয়, যখন সেই বাতাস বেশি ভিজে থাকে। যখন সেই বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ অনেকটাই বেশি হয়। কিন্তু সুপেয় পানির অভাব যেখানে প্রকট, বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ সেখানে অনেকটাই কম। সেখানকার বাতাস অনেক বেশি শুকনো, খটখটে। তাই ওই সব এলাকার বাতাস থেকে পানি টেনে নেওয়ার কাজটা অনেক বেশি কঠিন।

সে ক্ষেত্রে মুশকিল আসান করতে পারে সিলিকা জেলের মতো স্পঞ্জ জাতীয় পদার্থই। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ অনেক কম থাকলেও, সিলিকা জেলের মতো স্পঞ্জ জাতীয় পদার্থ দিয়ে বাতাস থেকে পানি টেনে নেওয়ার কাজটা করা যায়।

তবে সে ক্ষেত্রেও কিছু অসুবিধা রয়েছে। সিলিকা জেলের মতো স্পঞ্জ জাতীয় পদার্থগুলি খুব সহজে বাতাস থেকে পানি টানতে পারে না। কাজ করে খুব ধীরে ধীরে। তার জন্য অনেক বেশি শক্তিও খরচ করতে হয়।

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) অধ্যাপক ইভলিন ওয়াঙের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক গবেষকদলের উদ্ভাবিত নতুন যন্ত্রটিতে সেই কাজটা করার জন্য যে পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে, তা ওই দুই অসুবিধাই দূর করতে পারে।

আর সেটা করার জন্য গবেষকরা একটি ধাতু ও একটি জৈব যৌগ দিয়ে একটি জটিল যৌগিক পদার্থ বানিয়েছেন। যার নাম- ‘মেটাল অরগ্যানিক ফ্রেমওয়ার্ক’ (এমওএফ)। এ ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যবহার করেছেন জারকোনিয়াম ধাতু ও একটি জৈব যৌগ অ্যাডিপিক অ্যাসিড। যা খুব সহজেই বাতাস থেকে জলীয় বাষ্প টেনে, শুষে নিতে পারে। তাকে ‘মুঠো’র মধ্যে ধরে রাখতে পারে। ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ওই স্পঞ্জ জাতীয় পদার্থের ভেতরে থাকা ছিদ্রগুলির (পোরস) মধ্যে আটকে থাকে জলীয় বাষ্পের কণাগুলি। তাপমাত্রা বাড়লে তা উবে যায়।

এমন দিন হয়তো আর খুব বেশি দূরে নয়, যে দিন এই যন্ত্রটি থাকবে ঘরে ঘরে। আর আমাদের প্রতিদিনকার খাওয়ার পানির প্রয়োজন এই যন্ত্র দিয়েই মেটানো যাবে। শুধু সূর্যের আলো দিয়েই পানি টেনে বের করে নেওয়া যাবে। শুকনো, খটখটে বাতাস থেকেও। এমনকী, মরুভূমির মতো এলাকাতেও।

বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ্যার ‘জেমস অ্যান্ড নীলট্‌জে ট্রেটার’ চেয়ার প্রফেসর ওমর ইয়াঘি জানান ‘‘খুব কম আপেক্ষিক আর্দ্রতার বায়ুমণ্ডল রয়েছে যে সব এলাকায়, সেখানে এত দিন বাতাস থেকে পানি টেনে বের করে আনা যেত না। আমাদের উদ্ভাবিত যন্ত্রটি এবার সেই মুশকিল আসান করল। যা করা যাবে খুব কম শক্তি খরচ করেই। ফলে, ঘরে ঘরে ব্যবহারের জন্য সাধারণ মানুষও কিনতে পারবেন ওই যন্ত্র। খুব কম দামে। আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে থাকলেও ১২ ঘণ্টার মধ্যে ওই যন্ত্রটি দিয়ে ২.৮ লিটার পানি শুকনো, খটখটে বাতাস থেকে টেনে বের করে আনা যাচ্ছে। আর তার জন্য লাগছে মাত্র ২.২ পাউন্ড ওজনের ‘মেটাল-অরগ্যানিক ফ্রেমওয়ার্ক’ (এমওএফ)।’’

সূত্র: আনন্দবাজার


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি