ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

শারাপোভার যতো আয়, যতো অর্জন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৪৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মারিয়া সারাপোভা

মারিয়া সারাপোভা

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক টেনিসে সমাপ্তি ঘটল একটি বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের। কোর্টে র‍্যাকেট নিয়ে আর ছুটতে দেখা যাবে না কোটি সমর্থকের প্রিয় মুখ মারিয়া শারাপোভাকে। খেলোয়াড় শারাপোভাকে এখন খুঁজতে হবে ফাইল ছবিতে! ইনজুরির কাছে হার মেনে অবশেষে টেনিসকে বিদায় জানান ৩২ বছর বয়সী রুশ সুপারস্টার। 

পাঁচটি গ্র্যান্ড স্লাম বিজয়ী এ খেলোয়াড় রূপে ও গুণে অনন্যা। এ গুণ আর রূপ তাকে এনে দিয়েছে কোটি কোটি ডলারও। তার যতটা না গুণ দিয়ে, তার থেকে ঢের বেশি আয় করেছেন তিনি রূপ দিয়ে। তার অনিন্দ্যসুন্দর মুখশ্রীকে নিজেদের পণ্যের প্রচার ও প্রসারের কাজে লাগিয়েছে বিশ্বখ্যাত বহু ব্র্যান্ড। আর তাতেই শারাপোভার অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে কোটি কোটি ডলার।

যদিও কোর্টে শারাপোভার সাফল্যও নেহায়েত কম না। যেগুলোকে নানা উপায়ে পরিমাপ করতে পারেন। পাঁচটি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা, ৩৬টি ক্যারিয়ার একক শিরোপা, বিশ্বের সাবেক এক নম্বর খেলোয়াড়। কিন্তু ওইসব অবিশ্বাস্য সাফল্য কিছুতেই তার সমৃদ্ধ ব্যাংক হিসাবের সাফল্যের সঙ্গে পেরে উঠবে না!

নারী ও পুরুষ মিলিয়ে টেনিসের অন্যতম শীর্ষ ধনী অ্যাথলেট হিসেবে অবসর নিলেন শারাপোভা। টেনিসে মাত্র পাঁচজন পুরুষ খেলোয়াড় তার চেয়ে বেশি আয় করেছেন। তারা হলেন- নোভাক জোকোভিচ, রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল, অ্যান্ডি মারে ও পিট সাম্প্রাস। অন্যদিকে, তার চেয়ে বেশি আয়কারী একমাত্র নারী কেবল সেরেনা উইলিয়ামস।

ডোপিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে শারাপোভার আলো ঝলমলে ক্যারিয়ারের পতন ঘটে ২০১৬ সালে। ফেরার পর কোর্টে ও কোর্টের বাইরে হারাতে থাকেন নিজের জ্যোতি। যাতে সাবেক এক নম্বর খেলোয়াড়ের র‍্যাংকিং নেমে যায় ৩৭৩-এ! সঙ্গে যোগ হয় ধারাবাহিক ইনজুরি। কোর্টে ফ্লপ হওয়ায় কমতে থাকে মারিয়ার আয়ও। কিন্তু শিরোপা কিংবা অর্থ উপার্জনে আগেই তিনি গ্রেটদের কাতারে নাম লিখিয়ে নেন। টানা ১১ বছর আমেরিকান বিজনেস সাময়িকী ফোর্বসের সমীক্ষায় শীর্ষ ধনী নারী অ্যাথলেটের সম্মান পেয়েছেন শারাপোভা।

এদিকে, গত চারটি বছর বিশাল অংকের আয় থেকে বঞ্চিত হলেও রুশ ললনা তার ক্যারিয়ারে সব মিলিয়ে আয় করেছেন ৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলার (প্রায় ২ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা)। যা আসে প্রাইজমানি, এনডোর্সমেন্ট ও প্রদর্শনী ম্যাচ খেলে। আর কোর্ট থেকে আয় করেন মাত্র ৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। 

নারী টেনিস তারকাদের মধ্যে আয়ে দুই নম্বরে থেকে অবসর নিলেন তিনি। ৩৫ কোটি ডলার আয় করে শীর্ষস্থানটি ধরে রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেরেনা উইলিয়ামস। ২৩ বারের গ্র্যান্ড স্লাম চ্যাম্পিয়ন সেরেনা অবশ্য এখনো খেলে যাচ্ছেন ৩৮ বছর বয়সেও। তাই আয়ের ক্ষেত্রে সহসাই তাকে কেউ সিংহাসনচ্যুত করতে পারবেন বলে মনে হয় না।

রুশ তারকা হিসেবে পরিচিতি পেলেও শৈশবেই মা-বাবার সঙ্গে রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো শারাপোভার বসবাস ফ্লোরিডায়। রুশ পতাকায় টেনিস খেললেও থাকেন আটলান্টিকের ওপারেই। ২০০১ সালে পেশাদার টেনিসে যাত্রা। তবে টেনিসে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব ২০০৪ সালের উইম্বলডন ফাইনালে সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে মাত্র ১৭ বছর বয়সে শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে। 

ওই জয়ের আগে তার স্পন্সর ছিল শুধুই নাইকি ও প্রিন্স। কিন্তু এরপরই বদলে গেল গোটা চিত্র। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার লাস্যময়ী শারাপোভা ছিলেন নামি ব্র্যান্ডগুলোর কাছে এক স্বপ্ন। দ্রুতই বাজারের কর্তৃত্ব নিতে থাকে তার এজেন্ট আইএমজি। ট্যাগ হিউয়ার, ক্যানন, মটোরোলা, কোলগেট-পালমোলিভসহ বহু কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে থাকেন তিনি। এদিকে বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায় তার নাইকি চুক্তির আর্থিক মূল্যও। এতে তার বার্ষিক আয় ৩০ লাখ ডলার থেকে বেড়ে হয়ে গেল ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার! আর অচিরেই শারাপোভা হয়ে গেলেন এ ভুবনের শীর্ষ ধনী নারী অ্যাথলেট।

কোর্টের পাশাপাশি বাণিজ্যের জগতে তার জয়যাত্রা তখন রমরমা। এরপর তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় ল্যান্ড রোভার, পেপসিকো ও সনির মতো শীর্ষ ব্র্যান্ড। শারাপোভার নামে টেনিসের নানা পণ্য বাজারে নিয়ে আসে নাইকি। সুন্দরী এই রুশ কন্যার নামে ব্যালে ফ্লাট সু তো সর্বাধিক বিক্রির রেকর্ডই গড়ে বসে।

এভাবেই ট্যুর টেনিসের সবচেয়ে বড় আকর্ষণে পরিণত হন মারিয়া শারাপোভা। এসময় প্রদর্শনী ম্যাচের জন্যও নেয়া শুরু করেন ৫ লাখ ডলার ফি। টেনিসের খ্যাতি কাজে লাগিয়ে ২০১২ সালে শুরু করেন ‘সুগারপোভা’ নামে নিজের ক্যান্ডি লাইন ব্যবসা। যা এখন দারুণ প্রতিষ্ঠিত। পরে এর সঙ্গে কাপড় ও অ্যাকসেসরিজও যুক্ত করেন তিনি।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শারাপোভার গড়ে ওঠে বিশাল সংখ্যক অনুসারী, যা তার আয়ের আরেকটি বড় উৎসে পরিণত হয়। ২০১৬ সালে নিষিদ্ধ হওয়ার আগের বছর তিনি ফেসবুক থেকে আয় করেন ৩ কোটি ডলার।

নিষিদ্ধ হওয়ার পর ট্যাগ হিউয়ার তাকে ছেড়ে গেলে কমতে থাকে মারিয়ার কোর্টের বাইরের আয়ও। যদিও নাইকি, এভিয়ান ও পোরশের মতো ব্র্যান্ড তার সঙ্গেই থাকে। ২০১৭ সালে খেলায় ফিরলেও কাঁধের ইনজুরি তাকে মারাত্মকভাবে ভোগাতে থাকে। আর গত বছর তো ম্যাচ খেলতে পেরেছেন মাত্র ১৫টি। তখনই শারাপোভা নেমে যান র‍্যাংকিংয়ের ৩৭৩-এ। 

তার সর্বশেষ টুর্নামেন্ট ছিল গত মাসে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে, যেখানে তিনি প্রথম রাউন্ডেই হেরে যান। তখনই গুঞ্জন ওঠে, হয়তো আগামী বছর মেলবোর্ন পার্কে দেখা মিলবে না মারিয়ার। সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো।

পাঁচটি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা ও সব মিলিয়ে ৩৬টি একক শিরোপা সঙ্গী করে অবসরে গেলেন শারাপোভা। ইতিহাসে মাত্র ১০ জন নারী চার ধরনের গ্র্যান্ড স্লামই জিতেছেন, শারাপোভা তাদের অন্যতম। পাঁচটি ভিন্ন সময়ে র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষে ওঠার গৌরব দেখিয়েছেন।

এছাড়া প্রাইজমানি থেকে শারপোভার ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় নারী টেনিস তারকাদের মধ্যে তৃতীয় অবস্থান। তার চেয়ে এগিয়ে আছেন দুই উইলিয়ামস বোন সেরেনা (৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার) ও ভেনাস (৪ কোটি ১০ লাখ ডলার)।

বিদায়কালে শারাপোভা যে কথাটি বলেন, তা হৃদয়কে স্পর্শ করে যায়। সেটা হলো, ‘টেনিসই আমাকে বিশ্ব দেখিয়েছে এবং আজ আমি যা, তা টেনিসই করে দিয়েছে।’

এদিকে, কোর্টের প্রাইজমানি থেমে গেলেও আয় কমবে না শারাপোভার। দারুণ সফলতা পাচ্ছে তার সুগারপোভা। ২০১৯ সালে ২ কোটি ডলার রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে কোম্পানিটি। সূত্র-ফোর্বস।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি