ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

এক বেলা রুটি না পাওয়া লুকাকোই আজ বিশ্বসেরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩২, ১০ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১১:৩৫, ১০ জুলাই ২০১৮

ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো যদি হয়ে থাকেন রণক্ষেত্রের নায়ক, তবে রোমেলু লুকাকো সেই যুদ্ধের মহানায়ক। লিওনেল মেসি যদি হয় কোনো সংগ্রামের প্রতীক, তবে লুকাকো হবেন সেই সংগ্রামের মহাপ্রতীক।

জীবন যুদ্ধে লিওনেল মেসি পাড়ি দিয়ে এসেছেন কঠিন পথ। তবে তা কখনোই লুকাকোর জীবনকে ছুঁয়ে যায়নি। জীবন যুদ্ধ জয় করে কালের নায়ক হয়েছেন হাতেগুনা কয়েকজন। তবে এই যুদ্ধ জয় করে মহানায়ক হয়েছেন কতজনই বা! জীবনে কঠিন ও বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে যারা আজ সাফল্যের সিঁড়ির উঁচুতে অবস্থান করছেন রোমেলু লুকাকো তাদেরই একজন।

ইতোমধ্যে বিশ্বকাপের আসর থেকে বিদায় নিয়েছেন লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমার ও ইনিয়েস্তাদের মতো বড় তারকারা। মূলত বিশ্বকাপে ফুটবলপ্রেমীদের নজরে ছিলেন তাঁরাই। তবে তাঁদের ছাপিয়ে এবারের আসরে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছেন বেলজিয়াম তারকা রোমেলু লুকাকু। তার পায়ের জাদুর উপর ভর করেই এবারের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে দলটি।

দলকে দুহাত ভরে সব কিছু উজাড় করে দিলেও এই কালো মানিক নিজের জীবন শুরু করেছেন একদম নিঃস্ব হাতে। তার বাবা এতটাই দরিদ্র ছিলেন যে চলার মতো কোনো টাকা থাকত না তাদের। তাই ধারে-বাকিতে পাশের বেকারির দোকান থেকে রুটি এনে খেতেন তারা। সে প্রসঙ্গে লুকাকু বলেন, ‘রাস্তার পাশের বেকারি থেকে আমার মা ধারে রুটি নিয়ে আসত। দোকানদার আমাকে ও আমার ছোট ভাইকে চিনত। তাই সে ধারে দিতে দ্বিধা করত না। সোমবার ধারে এনে শুক্রবার টাকা পরিশোধ করে দিত। আমি জানি, আমাদের কতটা সংগ্রাম করতে হয়েছে। কিন্তু যখন আমার মা দুধের সঙ্গে পানি মিশিয়ে আমাদের খেতে দিত, তখন সবকিছু মনে হয় শেষ হয়ে যেত। আপনি বুঝতে পারছেন, আমি কী বলছি? আমাদের সপ্তাহে সাত দিন খাওয়ার মতো পর্যাপ্ত দুধ থাকত না। এমনই ছিল আমি ও আমার পরিবারের জীবন।’

লুকাকে আরও বলেন, ‘আমরা শুধু গরিব ছিলাম না, ছিলাম নিঃস্ব।’ যে বাসাটায় থাকতাম সেখানে ঠিকঠাক বিদ্যুৎ সরবরাহ হতো না। কারণ বাবার কাছে মাস শেষে ইলেক্ট্রিক বিল দেওয়ার টাকা থাকত না। মাকে দেখতাম দুধের সঙ্গে পানি মিশিয়ে পরিমাণটা বাড়াতে, যেন আরও দুটা বেলা বেশি খাওয়া যায়। যে অ্যাপার্টমেন্টে থাকতাম, সেখানে ছিল ইঁদুরের উৎপাত। রাতে ঘুম হতো না।’

এমন জীবন শুরু করা কিশোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, পেশাদার ফুটবল দিয়েই নিজেকে এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করবেন। তিনি পেরেছেনও। বছরে ৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন ইউরো আয় করা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই তারকা জীবনকে বদলে ফেলেছেন। দারিদ্র্য থেকে এখন যোজন যোজন দূরত্বে বসবাস এই তারকার।বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব থেকেই চমৎকার খেলেছেন লুকাকু। মূল মঞ্চ শুরুর আগেই ১১টি গোলের দেখা পাওয়া এই খেলোয়াড়ের জীবনটা শুরু হয়েছিল দারিদ্র্যের কশাঘাতে।

বিশ্বকাপেও বেলজিয়ামের হয়ে এবার লুকাকু দারুণ খেলছেন। চার ম্যাচ খেলে গোল পেয়েছেন চারটি, একটি গোলে রেখেছেন অবদানও। কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে ২-১ গোলের ব্যবধানে ব্রাজিলকে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করেছে লুকাকুর বেলজিয়াম।

এমজে/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি