ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিপদে ‘বেদ’র প্রার্থনা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৪৯, ৪ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ১৫:০৮, ৪ এপ্রিল ২০২০

প্রার্থনা হচ্ছে একাগ্রচিত্তে চাওয়া এবং পাওয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেকে বিলীন করে দেয়া। প্রার্থনায় অবিচল বিশ্বাস ও সেই সঙ্গে নিরলস পরিশ্রম করলেই বুঝতে হবে প্রার্থনার সাথে প্রার্থনাকারী একাকার হয়ে গেছেন। স্রষ্টা প্রার্থনা পছন্দ করেন এবং তা কবুল করেন। তিনি আপনার প্রার্থনার ফল সঙ্গে সঙ্গে বা যথোপযুক্ত সময়ে বা পরকালে দিতে পারেন। গীবতকারী, হারামখোর, দুর্নীতিবাজ ও জালেমের প্রার্থনা কবুল হয় না। তবে সর্বান্তকরণে তওবা করলে ভিন্ন কথা। শাশ্বত ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে মাতৃভাষায় গ্রন্থিত এ প্রার্থনায় আসুন সবাই নিমগ্ন হই অনন্ত কল্যাণের প্রত্যাশায়।

আসুন জানার চেষ্টা করি প্রার্থনার বিষয়ে ‘বেদ’ কি বলেছে,

‘বিশ্বাসীর হৃদয়েই প্রভু বসবাস করেন। আমাদের দেহ-ই হোক প্রভুর মন্দির। আমরা যেন চিরদিন তাঁর সত্যিকারের দাস হিসেবে থাকতে পারি। আমাদের জীবনের সকল অর্জন যেন তাঁর চরণে সমর্পণ করতে পারি।’
-ঋগবেদ: ১.৯১.১৩

জ্ঞানের প্রাচীন উৎস: বেদের আস্তিকতা সহজসরল নির্ভেজাল একেশ্বরবাদে বিশ্বাস। প্রভু একক, অদ্বিতীয় এবং সর্বশক্তিমান। দৃশ্যমান সকল শক্তির পেছনে রয়েছে তাঁরই মহাশক্তি। সকল আলোর নেপথ্যে রয়েছে তাঁরই মহাজ্যোতি। অঙ্গের নড়াচড়ায় মানবদেহে আত্মার উপস্থিতি যেমন স্বীকৃত হয়, তেমনি স্রষ্টার সৃষ্টির সুপরিকল্পিত গতিশীলতার দিকে তাকালেই মহাশক্তিমান প্রভুকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি।- স্বামী সত্যপ্রকাশ সরস্বত

১.
সদাসর্বত্র বিরাজমান তন্দ্রা-নিদ্রাহীন সদা সজাগ প্রতিনিয়ত করুণা বর্ষণকারী সর্বশক্তিমান হে প্রভু! আমরা শুধু তোমারই মহিমা স্মরণ করি, তোমারই জয়গান গাই। প্রভু হে! আমাদের সর্বোত্তম আত্মিক পথে আলোকিত পথে পরিচালনা করো। আমরা যেন সবসময় সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকে অনুধাবন করতে পারি। [ঋগ্বেদ : ৩.৬২.১০]

২.
সত্যজ্ঞানী তিনিই, যিনি জানেন প্রভু এক এবং অদ্বিতীয়। তিনি সর্বশক্তিমান এবং সর্ব বিষয়ে একক ক্ষমতার অধিকারী। প্রাণ এবং নিষ্প্রাণের সবকিছুই তাঁর নখদর্পণে। সকল ক্ষমতার কেন্দ্র তিনি একক অনন্য। [অথর্ববেদ : ১৩.৫.১৪-২১]

৩.
স্বর্গীয় জ্যোতি ও আনন্দ উপলব্ধির প্রতীক ‘ওম’ স্থাপিত হোক তোমার হৃদয়ে অনন্তকালের জন্যে। [যজুর্বেদ : ২.১৩]

৪.
মহাপ্রভুর দৃষ্টিতে কেউই বড় নয়, কেউই ছোট নয়, সবাই সমান। প্রভুর আশীর্বাদ সবারই জন্যে। [ঋগ্বেদ : ৫.৬০.৫]

৫.
হে নেতা! হে পুরোধা! ঈশ্বরের গুণাবলিতে গুণান্বিত হও। [যজুর্বেদ : ১.১৮]

৬.
অলস মস্তিষ্ক কুচিন্তার সহজ শিকার। [ঋগ্বেদ : ১০.২২.৮]

৭.
মন চলে যায় আকাশে, পাতালে, পাহাড়ে, সাগরে। মনকে নিয়ে আসো, নিজেরই অন্তরে, যেন তা থাকে তোমারই নিয়ন্ত্রণে। [ঋগ্বেদ : ১০.৫৮.২]

৮.
স্রষ্টা-প্রেমের অমিয়ধারা প্রবাহিত হোক আমাদের অন্তরে, আমাদের শিরায় শিরায়। তাহলেই আমরা সকল প্রতিক‚ লতার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারব প্রশান্ত প্রত্যয়ে। [ঋগ্বেদ : ৮.৩২.১২]

৯.
হে নেতা! হে পুরোধা! পাহাড়ের মতো দৃঢ় ও অজেয় হও। কর্তব্য পালনে সবসময় অবিচল থাকো। [যজুর্বেদ : ১২.১৭]

১০.
যারা সৎপথে কঠোর পরিশ্রম করে এবং পরস্পরকে সহযোগিতা করে, তাদেরকেই প্রভু সাহায্য করেন। [ঋগ্বেদ : ৪.২৩.৭]

১১.
সৎকর্ম মানুষকে দৃঢ় ও সাহসী করে। দেহ-মনকে রোগ ও পাপ থেকে মুক্ত, রাখে। সকল প্রতিক, লতার ওপর বিজয়ী করে। [ঋগ্বেদ : ৫.১৫.৩]

১২.
হে মানুষ! স্বনির্ভর হও! বাইরের সাহায্যের দাসে পরিণত হইও না। [যজুর্বেদ : ৬.১২]

১৩.
হে প্রভু! আমাদের সর্বোত্তম সম্পদ দান করো; দান করো কালজয়ী মন, আত্মিক সুষমা, অনন্ত যৌবন, আলোকোজ্জ্বল রূপ আর মধুর বচন। [ঋগ্বেদ : ২.২১.৬]

১৪.
হে মানুষ! উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আন্তরিকতার সাথে পরিশ্রম করো। দারিদ্র্য ও অসুস্থতা তোমার কাছ থেকে পালিয়ে যাবে। [অথর্ববেদ : ৬.৮১.১]

১৫.
কখনো জুয়া খেলবে না। পরিশ্রমলব্ধ সম্পদ ভোগ করো ও পরিতৃপ্ত থাকো। পরিশ্রমলব্ধ সম্পদই সত্যিকারের সুখ দিতে পারে। [ঋগ্বেদ : ১০.৩৪.১৩]

১৬.
জীবনের প্রতিটি স্তরে সব ধরনের ঋণ থেকে মুক্ত থাকো। [অথর্ববেদ : ৬.১১৭.৩]

১৭.
হে নেতা! হে পুরোধা! নির্ভীকভাবে সত্যভাষণের নৈতিক শক্তিতে তোমাকে বলীয়ান হতে হবে। [ঋগ্বেদ : ৮.৪৮.১৪]

১৮.
স্বনির্মিত সহস্র শৃঙ্খলে মানুষই নিজেকে বন্দি করে রেখেছে। [ঋগ্বেদ : ৫.২.৭]

১৯.
হে মানুষ! ওঠো! দাঁড়াও! পতিত হওয়া তোমার স্বভাবজাত নয়। জ্ঞানের আলোকবর্তিকা শুধু তোমাকেই দেয়া হয়েছে যা দিয়ে তুমি
সকল অন্ধক‚প এড়িয়ে যেতে পারো। [অথর্ববেদ : ৮.১.৬]

২০.
কর্কশ স্বরে কথা বোলো না, তিক্ত কথা যেন মুখ ফসকে বেরিয়ে না যায়। [যজুর্বেদ : ৫.৮]

(মহাজাতক’র ‘আলোকিত জীবনের হাজার সূত্র: কোয়ান্টাম কণিকা’ বই থেকে নেওয়া)

এমএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি