ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হলে জনগণ সুফল ভোগ করবে: প্রধানমন্ত্রী

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৮:২২, ৭ ডিসেম্বর ২০২২ | আপডেট: ১৯:০২, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধশীল দেশে রূপান্তরের কাজ চলছে। ২০৪১ সালে আমরা সে লক্ষ্যে পৌঁছাব ইনশাল্লাহ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে কোন মানুষ ঠিকানাহীন, গৃহহীন থাকবে না।

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ষ্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানবিক কারণে আমরা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে ছিলাম। তাদের যত দ্রুত সম্ভব স্বদেশের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। 

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধকে স্বপরিবারে হত্যার পর এই কক্সবাজার তথা বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের প্রতি কেউ মুখ ফিরে তাকায়নি। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে কক্সবাজারকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। ২০০১ সালে আবার বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থমকে দেয়। কিন্তু, ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ আবার ক্ষমতায় এলে কক্সবাজারে একে একে ১২টি মেগা প্রকল্পসহ ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প কক্সবাজারে চলমান রয়েছে। এরমধ্যে ইতিমধ্যে ২৯টি প্রকল্প সমাপ্ত করতে পেরেছি আমরা। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রেললাইন, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প অতিসহসা পরিপূর্ণ হলে জনগন এর সুফল ভোগ করতে পারবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আমরা শান্তির র‌্যালি করেছিলাম। সেখানে গ্রেনেড হামলা করেছিল খালেদা জিয়ার চক্র। এতে আওয়ামীলীগ নেত্রী আইভি রহমান সহ ২২ নেতাকর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা খালেদা জিয়াদের কাজ। পেট্রোল সন্ত্রাসে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে। জামাত-বিএনপি হত্যা, গুম, খুন সহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। অস্ত্র চোরাকারবারের মামলায় অভিযুক্ত তারেক জিয়া চক্র জঙ্গীবাদের মদদদাতা। তারা ধ্বংস ছাড়া কিছুই পারেনা।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি বাবা, মা ও ভাই সকলকে হারিয়েছি। নতুন করে হারানোর কিছু নেই। হারানোর কষ্ট কি আমার চেয়ে কেউ ভাল বুঝবে না। আপনাদের মাঝে বাবা, মায়ের স্নেহ, ভাই-বোনের ভালবাসা পাওয়ার আশা করি। আপনারা আমার পরিবার। আপনরা আমাকে আগলে রেখেছেন। আমার একমাত্র চাওয়া আমি যতক্ষণ ক্ষমতায় থাকব দেশের মানুষের আহার সংস্থান করা আমার কাজ। টিসিবির মাধ্যমে সস্তায় চাল, ডাল, তেল, চিনি পাওয়ার সু-ব্যবস্থা করেছি। এদের একজন মানুষও অভুক্ত থাকবে না।

এর আগে, সকাল ভোর থেকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থলে নেতাকর্মীরা দলে দলে আসতে শুরু করে। অনেকই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে স্লোগানে স্লোগানে জনসভাস্থলে প্রবেশ করছেন। বিশেষ রঙের টি শার্ট ক্যাপ পরিধানের পাশাপাশি বিভিন্ন নেতার ছবিসহ প্লেকার্ড ও নৌকার নানা কারুকাজ তাদের হাতে দেখা যায়। চকরিয়া পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, কুতুবদিয়া- মহেশখালী আসনের আশেক উল্লাহ রফিক ও কক্সবাজার সদর ও রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা জনসভায় আসেন। 

জনসভাস্থল শেখ কামাল স্টেডিয়ামে তিনটি প্রবেশ রাখা হয়েছে। যার একটি ভিআইপি গেইট। এর মধ্যে সিনিয়র নেতা ও বিশেষপ্রাপ্ত। অপরটি সাধারণ জনগণের জন্য। জনসভামঞ্চ থেকে নানা ঘোষণা হচ্ছে। নেতা কর্মীদের দাবি জনসভায় কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে।

কক্সবাজারের পর্যটনকে ঢেলে সাজানোর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘টেকনাফের সাবরাংয়ে বিদেশীদের জন্য এক্সক্লোসিভ জোন করা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে কক্সবাজার।

প্রধানমন্ত্রী সবশেষে কক্সবাজারে চলমান উন্নয়ন বিবেচনা করে নৌকায় ভোট চান। তিনি বলেন, আবার আসিব ফিরে, এই সৈকতের তীরে।

জনসভায় আসা নেতাকর্মীদের প্রত্যশা:
কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আসা নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের জন্য না চাইতেই অনেক কিছু দিয়েছেন, কক্সবাজারে অনেক বড়ো বড়ো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন।

আগামীতেও আওয়ামী লীগের সরকার চান। শেখ হাসিনা আবারো ক্ষমতায় আসবেন বার বার ক্ষমতায় আসবেন এটাই তাদের প্রত্যাশা করেন। নেতাকর্মীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার মা, লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এই রোহিঙ্গার কারণে কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা সহ বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রত্যাশা অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠায়।

মেডিকেল টিম গঠন: প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজার সফর ও জনসভাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে চিকিৎসা সেবার জন্য সাতটি বিশেষ মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। টিমগুলো গঠন করেছে কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কক্সবাজার জেলা শাখা। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, সাতটি মেডিক্যাল টিমের মধ্যে দুটি আন্তর্জাতিক নৌমহড়াস্থল ইনানী, দুটি জনসভাস্থল শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম, দুটি কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। খাদ্য পরীক্ষা জন্য গঠিত মেডিক্যাল টিমটি বিমানবন্দর, সার্কিট হাউজ, ইনানী ও জনসভাস্থলে থাকবে।

কক্সবাজারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিক্ষা স্থগিত:
কক্সবাজারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা জানিয়েছেন, কক্সবাজারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। বুধবার পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত করে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ পরীক্ষাটি ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়েছে। কক্সবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন জানিয়েছেন, বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করেন স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের প্রধান। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে জনসমাগমে ভোগান্তি বিবেচনায় শহরের ভেতরের প্রতিষ্ঠানগুলো পরীক্ষা স্থগিত করেছেন। এটি সরকারি সিদ্ধান্ত না।

জনসভাকে ঘিরে চারস্তরের নিরাপত্তা:
সরকার প্রধানের কক্সবাজার সফরকে কেন্দ্র করে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে থাকছে পর্যটন শহরসহ মেরিন ড্রাইভ এলাকা। যেখানে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশের চার হাজারের বেশি সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর ইসলাম জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে কক্সবাজার জেলা পুলিশ চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে। পুলিশের সদস্যরা পুলিশের পোশাক ছাড়াও সাদা পোষাকে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাজানো হয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। সঙ্গে ছিল কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি