ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিচার ও গণহত্যা বন্ধের আবেদন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৩১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২১:৩৮, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত

দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত

দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবদুল কোয়াই আহমেদ ইউসুফ বলেছেন, মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধ করুন। আধুনিক যুগে এই গণহত্যা কোনওভাবেই গ্রহণ করা যায় না। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারাও মানুষ। খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানসহ বাঁচার অধিকার রয়েছে। রোহিঙ্গা শিশুরও অধিকার রয়েছে শিক্ষা লাভ করে ডাক্তার হওয়ার।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) দায়ের করা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের শুনানিতে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টায় এই মামলার শুনানি শুরু হয়ে চলে ৬টা ১০ মিনিট পর্যন্ত। 

একইসঙ্গে মিয়ানমারে এখনও অবস্থান করা ৬ লাখ রোহিঙ্গাকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

শুনানিতে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী বলেন, আমি ২০১৮ সালে কক্সবাজারে ওআইসির পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করি। সেখানে গিয়ে রোহিঙ্গাদের চোখে ভয়, কষ্ট ও মানবিকতার চরম অবমাননা দেখতে পেয়েছি। সেখানে গিয়েই জানতে পেরেছি সেখানে গণহত্যা হয়েছে। গণহত্যা না হলে এত মানুষ পালিয়ে আসত না।

উল্লেখ্য, গাম্বিয়া চলতি বছরের ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলাটি দায়ের করে। মিয়ানমার গণহত্যা, ধর্ষণ এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায় ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করেছে মামলায়। গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানির জন্য ১০ ডিসেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারিখ নির্ধারণ করা হয়। 

আজ প্রথম দিনের শুনানিতে গাম্বিয়ার এই আইনজীবী আরও বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইহুদিদের ওপর হিটলার যে ধরনের নির্যাতন করেছিল, মিয়ানমার নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ওপর একই ধরনের গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছে। 

এসময় মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং দেশটির স্টেট কাউন্সিলর শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চি'র সমালোচনা করে বাদীপক্ষের আইনজীবীরা জানান, এসব রোহিঙ্গাকে রক্ষা করার জন্য আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত যদি অন্তবর্তীকালীন আদেশ না দেয় তবে এটি প্রমাণিত হবে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে কোনও অপরাধকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাচ্ছে।

এ মামলায় বাদীপক্ষ আরও যে বিষয়গুলোর জন্য অন্তবর্তীকালীন আদেশ চেয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- 
-গণহত্যা বন্ধের জন্য মিয়ানমার অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবে; 
-সামরিক, আধা সামরিক ও বেসামরিক অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা যাতে কোনও ধরনের গণহত্যা সংঘটন না করে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা; 
-মিয়ানমার যাতে সংঘটিত গণহত্যার কোনও প্রমাণ নষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা এবং 
-বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও বেশি জটিল ও খারাপ হতে পারে এমন ধরনের কাজ থেকে মিয়ানমারের বিরত রাখা।

জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে গাম্বিয়ার আইনজীবীরা বলেন, রোহিঙ্গা শিশু ও নারীরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর লক্ষ্য ছিল। এ কারণে দেশটির সেনাবাহিনীকে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যা চালানোর সময় রোহিঙ্গা শিশুদের আগুনে পুড়িয়ে এবং আছাড়ে হত্যা করেছে যা সুস্পষ্টভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধ। তাদের দ্বারা রোহিঙ্গা নারীরা নির্বিচারে ধর্ষণ ও গণধর্ষণেরও শিকার হয়েছেন। পুরুষদের নানা ধরনের নিপীড়ন করে হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে। মানবতাবিরোধী এসব অপরাধেও দেশটির সেনাবাহিনীকে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানান তারা।

এদিন শুনানিতে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী তার বক্তব্য বলেন, রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত শত শত গ্রামে গণহত্যা চালানো হয়েছে এবং তাদের রক্ষায় মানবজাতি ব্যর্থ হয়েছে। তবে এখনও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সরকারের হাত থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করা সম্ভব।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি